প্রতিষ্ঠার ৪ বছরেও সংকট কাটেনি নওগাঁ মেডিকেল কলেজের
প্রতিষ্ঠার চার বছরেও প্রয়োজন অনুযায়ী ল্যাব সুবিধা পাচ্ছেন না নওগাঁ মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরা। জনবল ও অবকাঠামোগত উন্নয়ন হলেও এখনো সমাধান হয়নি শ্রেণিকক্ষ ও আবাসন সমস্যার। এদিকে কর্তৃপক্ষ জানায়, নতুন এই মেডিকেল কলেজের স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণ না হওয়া পর্যন্ত কোনো সংকটই পুরোপুরি কাটিয়ে ওঠা সম্ভব নয়। এসব সমস্যার সমাধান না হওয়ায় ব্যাহত হচ্ছে শিক্ষা কার্যক্রম।
২০১৯ সালের ১০ জানুয়ারি ৫০ জন শিক্ষার্থী নিয়ে নওগাঁ ২৫০ শয্যা হাসপাতালের পুরোনো ভবনের দুই তলার একটি অংশে যাত্রা শুরু হয় নওগাঁ মেডিকেল কলেজের। এরপর আরও তিনটা ব্যাচ মিলে এখন শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২০০। চলতি বছরেই নতুন ব্যাচে যুক্ত হবে আরও ৫০ জন শিক্ষার্থী। এমন পরিস্থিতিতে শিক্ষক, কর্মচারীর কক্ষ ও শিক্ষার্থীদের হোস্টেল সংকটের মতো বিষয়গুলো চিন্তায় ফেলেছে মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষকে।
মেডিকেল কলেজে গিয়ে কথা হয় তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী পার্থ সরকার, শহিদুল হাসান, শাওন আক্তারসহ বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে। তারা মেডিকেল কলেজের দ্বিতীয় ব্যাচের শিক্ষার্থী। তারা বলেন, পাঠদানের জন্য মাত্র তিনটা কক্ষ রয়েছে। কিন্তু এখন কলেজে চারটি ব্যাচ। শ্রেণিকক্ষ না থাকায় রুটিন অনুযায়ী অনেক বিষয়ের ক্লাস হয় না। কয়েকদিন পর পঞ্চম ব্যাচের শিক্ষার্থীরা ক্লাস শুরু করবে। তখন আরও বেশি শ্রেণিকক্ষ সংকট তৈরি হবে।
শহিদুল হাসান বলেন, ‘ধীরে ধীরে লাইব্রেরি, ল্যাব, মরচুয়ারি ডিসেকশন কক্ষসহ অবকাঠামোগত বেশ কিছু উন্নতি হয়েছে। তবে এখনো কলেজের ল্যাব ফ্যাসিলিটি যথেষ্ট নয়। ব্যবহারিক ক্লাসের জন্য প্যাথলজির অনেক যন্ত্রপাতি এখনো কলেজে নেই।’
পার্থ সরকার বলেন, ‘নতুন মেডিকেলের শিক্ষার্থী হিসেবে আমরা অনেক সুবিধা থেকেই বঞ্চিত। তবে এখন অন্যতম সমস্যা হচ্ছে আমাদের লেকচার গ্যালারি (শেণিকক্ষ) সংকট ও অপ্রতুল ল্যাব ফ্যাসিলিটি। নিয়মিত ক্লাস না হওয়া ও পর্যাপ্ত ল্যাব ফ্যাসিলিটি না থাকায় আমরা অনেক কিছুই শিখতে পারছি না।’
ছেলে ও মেয়েদের জন্য কলেজের নিজস্ব হোস্টেল নেই। নওগাঁ জেনারেল হাসপাতালের স্টাফদের থাকার জন্য করা একটি ভবনে ছেলের আবাসনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। আর মেয়েদের জন্য একটি বাসা ভাড়া নিয়ে সেটাকে ছাত্রী হোস্টেল করা হয়েছে।
শাওন আক্তার বলেন, ‘মেয়েদের জন্য ছাত্রী হোস্টেল নেই। ভাড়া করা একটি বাসাতে আমাদের থাকতে হচ্ছে। যেখানে খাওয়াদাওয়াসহ বেশ কিছু সমস্যা রয়ে গেছে।’
এই মেডিকেল কলেজে শুরু থেকেই শিক্ষকের সংকট রয়েছে। অধ্যক্ষের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বিভিন্ন বিভাগের ৭৮টি পদ রয়েছে। তবে বর্তমানে রয়েছেন অধ্যক্ষসহ ৪০ জন।
শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বর্তমানে কলেজে ২০টি বিভাগে পাঠদান কার্যক্রম চলমান রয়েছে। প্রতিটি বিভাগে অন্তত একজন করে সহকারী অধ্যাপক ও দুজন করে প্রভাষক দরকার। কিন্তু ফরেনসিক মেডিসিন, প্যাথলজি ও বায়োকেমিস্ট্রির মতো বিভাগসহ বেশ কিছু বিভাগে একজন করে প্রভাষক দিয়ে চলছে শিক্ষা কার্যক্রম।
অবকাঠামোগত অনেক সরঞ্জাম মন্ত্রণালয় থেকে অনুমোদন পেলেও সবকিছু এখনো বুঝে পায়নি কর্তৃপক্ষ। আবার শিক্ষকেরা বলছেন, চাহিদা অনুযায়ী অবকাঠামোগত অনেক সরঞ্জাম মন্ত্রণালয় থেকে অনুমোদন পেলেও এখনো বুঝে পায়নি কর্তৃপক্ষ। রোগ নিরূপণের অনেক যন্ত্র ব্যবহার করতে পারলে শিক্ষার্থীরা যেমন শিখতে পারতেন, সাধারণ রোগীরাও স্বল্প খরচে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করাতে পারতেন।
মেডিকেল কলেজের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী আল আমীন বলেন, ‘বর্তমানে আমাদের কলেজে কোনো অধ্যাপক নেই। প্রতিষ্ঠিত মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরা যেমন বড় পরিসরে তত্ত্বীয় ও ব্যবহারিক বিষয়গুলো শিখছেন, আমরা সেগুলো পাচ্ছি না। একজন অধ্যাপক যেভাবে শিক্ষার্থীদের তার অভিজ্ঞতা দিয়ে বোঝাতে পারেন, একজন প্রভাষক হয়তো সেভাবে না-ও পারতে পারেন। এর প্রভাব হয়তো ভবিষ্যতে পড়বে।’
জেলা প্রশাসকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, নওগাঁ মেডিকেল কলেজ ক্যাম্পাসের জন্য শহরের আব্দুল জলিল শিশু পার্কসংলগ্ন চকপাথুরিয়া, চক বিরাম ও নলডাঙ্গা মৌজায় জায়গা নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রথমে ৫০ একর জমির একটি নকশা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। পরে মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী ২৭ একর জমি নিয়ে একটি নকশা চূড়ান্ত করা হয়। ওই নকশা ইতোমধ্যে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। মন্ত্রণালয় থেকে অনুমোদন পেয়ে অর্থ ছাড় হলে জমি অধিগ্রহণের কাজ শুরু হবে।
নওগাঁ মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. মো. বুলবুল হাসান বলেন, ‘অনেক সংকটের মধ্যেও গত বছর রাজশাহী মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে অংশ নেওয়া ২৫টি সরকারি-বেসরকারি মেডিকেলের মধ্যে পেশাগত পরীক্ষায় নওগাঁ মেডিকেল কলেজ প্রথম হয়েছে। এই বছরে মেডিকেলে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর সংখ্যা দুটোই বাড়বে। আপাতত নওগাঁ জেনারেল হাসপাতালের পুরোনো ভবনের দুই তলার কয়েকটি কক্ষ আমরা ব্যবহার করছি। হাসপাতাল কর্তপক্ষ পুরোনো ভবনের নিচতলার অংশটা আমাদের ব্যবহার করতে দিলে কলেজের স্থায়ী ক্যাম্পাস হওয়ার আগে আর অবকাঠামো সংকট নিয়ে ভাবতে হতো না।’
এ বিষয়ে নওগাঁ ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক জাহিদ নজরুল চৌধুরী বলেন, এখানে মেডিকেল কলেজের নিজস্ব কোনো স্থাপনা নেই। পুরোনো ভবনে ১০০ ও নতুন ভবনে ১৫০ শয্যা মিলে আমাদের ২৫০ শয্যা হাসপাতাল। এর মধ্যেও কলেজের জন্য অনেকগুলো কক্ষ ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। এর বেশি কক্ষ ছাড়তে হলে রোগীরা বঞ্চিত হবেন।
এসএন