নিত্যপণ্যের বাজারে আগুন, ক্রেতাদের ক্ষোভ
কিশোরগঞ্জে নিত্যপণ্য কাঁচা শাকসবজি,মাছ,মাংস,ডিম সবকিছুর দাম বৃদ্ধির কারণে ক্রেতারা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্তের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে প্রতিটি পণ্যমূল্য। রমজান শুরুর আগেই বাজারে আগুন।শহরের বড় বাজার,পুরান থানা বাজার,কাঁচারী বাজারে ঘুরে দেখা গেছে কিছু দোকানে মূল্যতালিকা থাকলেও সব পণ্যের দাম মূল্য তালিকায় লিখা নাই। কেউ কেউ মূল্য তালিকা খুলে রেখেছেন।
এছাড়াও মূল্য তালিকায় পণ্যের দামের ব্যবধান রয়েছে। পর্যাপ্ত খাদ্য শস্য উৎপাদন হওয়ার পরও সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীদের দৌরাত্ম বেড়ে চলছে। বলা যায় যে,সরকারের যত অর্জন রয়েছে সকল অর্জনকে ম্লান করছে বাজার সিন্ডিকেট। শুধু তারিখ পাল্টে কোন কোন দোকানে গতকালের মূল্যেই বিক্রি হচ্ছে পন্য।
আজকের বাজার মূল্য অনুযায়ী, কাঁচা মরিচ ১২০টাকা প্রতি কেজি, গাজর ৩০টাকা, সীম ৫০টাকা, ফুলকপি ২০টাকা, খিরা শশা ২০টাকা, শশা ৩০টাকা,বেগুন ৫০টাকা, বড় মাপের মিষ্টি লাউ ১৫০টাকা, রঙিন বাঁধাকপি প্রতিটি ৫০টাকা, ফুলকপি প্রতিটি ২৫টাকা, ব্রকলি প্রতিটি ৫০টাকা, করলা ১০০টাকা কেজি,কাঁচা কলা হালি ৩০টাকা, লাউ প্রতিটি ৬০-৮০ টাকা। টমেটো পাইকারি দাম প্রতি কেজি ২০টাকা বিক্রি হচ্ছে ৩০টাকা। আলু পাইকারি ১৭ টাকা খুচরা বিক্রি হচ্ছে ২৫টাকা।
ব্রয়লার মুরগী প্রতি কেজি ২৩০, সোনালী ৩০০ টাকা, লেয়ার ৩১০, দেশি মুরগী ৫০০ টাকা কেজি, গরুর মাংস ৭৫০টাকা কেজি, খাসির মাংস ৯০০ টাকা কেজি দামে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়াও খোলা সয়াবিন তেল ১৬৫ টাকা কেজি, বোতল সয়াবিন ১৮৫ টাকা কেজি, সরিষার তেল ২০০টাকা, চিনি ১১০টাকা, আটা ৫৫টাকা, মশুর ডাল ১৩০ টাকা কেজি, ছোলা বুট ৮৫ টাকা। এছাড়া গুড়া মশলা, গরম মশলার দামও যে যেভাবে পারে ক্রেতাদের কাছে ইচ্ছা অনুযায়ী বিক্রি করছে।
বড় বাজারের ব্যবসায়ী সেলিম বলেন,পণ্যের মূল্য তালিকা আছে কিন্তু সবাই নামিয়ে রাখে এজন্য আমিও নামিয়ে রাখছি।মূল্য তালিকায় লিখা তো দূর অনেক দোকানে তালিকাই নাই। আমরা নির্দেশ মানলেও অনেক ব্যবসায়ীরা তা মানে না। যারা মূল্য তালিকার নির্দেশ মানেননি, তাদের বিষয়টি কেউ দেখতেও আসেন না। আমরা পাইকারদের কাছ থেকে কিনে এনে খুচরা বিক্রি করি। আমাদের পণ্যের দাম পাইকারি বয়বসায়ীরাই নির্ধারণ করে দেয়। আমরা বেশি দামে কোন পণ্য বিক্রি করি না।
পুরান থানায় বাজার করতে আসা ক্রেতা বদরুল আলম জানায়, আমাদের মত মধ্যবিত্তদের জন্য বাজার দামটা একটু বেশিই। বেশি দামের সবজি কেনার আগে সংসারের বাকী খরচের কথা মাথায় রাখতে হয়। বর্তমানে প্রতিটি পণ্যের মূল্য বেড়েছে। এ যেন মরার উপর খাঁড়ার ঘা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাজার নিয়মিত মনিটরিং করলে পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে থাকতো। সামনে রোজা আসছে তখন পণ্যের মূল্য আরও বেড়ে যাবে। রোজায় জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধি এইটা স্বাভাবিক।প্রতিবার রোজায় সবকিছু বেশি দামে কিনতে হয়।
কাঁচারি বাজারে বাজার করতে আসা ক্রেতা শিক্ষক চন্দন জানায়,মধ্যবিত্তদের জন্য কাঁচা বাজারসহ অন্যান্য পণ্যের মূল্যটা একটু বেশিই। তবে বৈশ্বিক পরিস্থিতির দোহাই দিয়ে অসাধু ব্যবসায়ীরা পণ্যের মূল্য ক্রেতাদের কাছ থেকে বেশি রাখে। বাজারে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করা প্রয়োজন। অসাধু ব্যবসায়ীরা সুযোগে ক্রেতাদের পকেট কাটছে নিয়মিত।
কাঁচারি বাজারে আরেকজন রিকশাচালক ক্রেতা আমির জানায়, আমরা গরিব মানুষ ভাড়ায় রিকশা চালিয়ে প্রতিদিন বাজার করে বউ বাচ্চা নিয়ে খাই। আমরা ভালা বাজার করবাম কেমনে বাজারের সবকিছুতেই আগুন। আমরা ডাইল ভাত খাইয়া কোনমতে দিন কাডাই আরকি। আমার মতো গরিবরার তো ভালা বাজার করনের সামর্থ্য নাই।
এ বিষয়ে জেলা ক্যাবের সভাপতি আলম সারোয়ার টিটু বলেন, একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন সমসাময়িক সমস্যার অজুহাত দেখিয়ে ভোক্তাদের পকেট কাটছে ও বাজারকে অস্থিতিশীল করছে। অসাধু ব্যবসায়ীদের দৌরাত্ম দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে। একমাস পর পবিত্র রমজান শুরু হবে।
রমজান উপলক্ষে এখন থেকেই বাজার মনিটরিং করা প্রয়োজন এছাড়াও ভেজালবিরোধী অভিযান অব্যাহত রাখতে হবে। বাজারে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে হলে সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে এবং বিশেষ ক্ষমতা আইনে তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।
সরকারের মূল্য তালিকার চেয়ে বেশি বিক্রির বিষয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত সিনিয়র কৃষি বিপণন কর্মকর্তা শিখা বেগম বলেন, আমরা নিয়মিত মোবাইল কোর্ট দিচ্ছি,বাজার মনিটরিং হচ্ছে।যদি সরকারের বেঁধে দেওয়া মূল্য তালিকার চেয়ে বেশি কেউ কোন পণ্য বিক্রি করে সেক্ষেত্রে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জেলা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণের সহকারী পরিচালক হৃদয় রঞ্জন বণিক বলেন,সরকারি মূল্য তালিকার চেয়ে বেশি বিক্রির নিয়ম নেই। নিয়মিত সপ্তাহে ৪দিন বাজার মনিটরিং করা হচ্ছে। ভোক্তাদের কাছে যে ব্যবসায়ীরা বেশি দামে পণ্য বিক্রি করছে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা অব্যাহত রয়েছে।
এএজেড