নালা খনন কালে উদ্ধার মূর্তি জাতীয় যাদুঘরে
চাঁপাইনবাবগঞ্জের ভোলাহাটে নালা খনন কালে মাটির নিচ থেকে উদ্ধার হওয়া দুটি পাথরের মূর্তি বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরে হস্তান্তর করেছে জেলা প্রশাসন। সোমবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে জাতীয় জাদুঘরের তিন সদস্যের একটি প্রতিনিধি দলের নিকট মূর্তি দুটি হস্তান্তর করেন জেলা প্রশাসক একেএম গালিব খাঁন।
জেলা প্রশাসক জানান, গত ২৩ জানুয়ারি বিকেলে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার ভোলাহাট উপজেলার ৩ নং দলদলী ইউনিয়নের পুরাতন বারইপাড়া গ্রামের আমড়ী ট্রাইড (ডাইং) নামক স্থানে মো. শুকুরুদ্দিন নামের এক ব্যক্তির নিজস্ব জমিতে নালা করার উদ্দেশ্যে খননকালে কর্মরত শ্রমিক মূর্তি ২ টি দেখতে পান।
খবর পেয়ে ভোলাহাট উপজেলা নির্বাহী অফিসার, পুলিশ, বিজিবি, ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান, ওয়ার্ড সদস্য, গ্রাম পুলিশের উপস্থিতিতে মূর্তি দুটি উদ্ধার করে এবং প্রশাসনের সহযোগিতায় রাত ৯ টায় জেলা ট্রেজারিতে সংরক্ষণ করা হয়। ওই দিন রাতেই মূর্তি দুটি জেলা ট্রেজারিতে রেজিস্টারভুক্ত করা হয় এবং সংরক্ষণ করা হয়।
বিষয়টি তাৎক্ষণিকভাবে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মহোদয়কে জানানো হয়। এর প্রেক্ষিতে জাতীয় জাদুঘরের তিন সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল মূর্তিদুটি নেয়ার জন্য এখানে এসেছেন। বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর, সাংস্কৃতিক বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের তিন প্রতিনিধি সদস্য উপকীপার দিবাকর সিকদার, সহকারী কীপার গোলাম কাউছার ও তাহমিদুন নবী।
উদ্ধারকৃত ভাস্কর্য সম্পর্কে দিবাকর সিকদার বলেন, মূর্তি দুটির মধ্যে একটি হচ্ছে বিষ্ণুর বাহন গরুড় অন্যটি দেবী পার্বতীর। ধারণা করা হচ্ছে এই মূর্তি দুটি বেলে পাথরের তৈরি। গরুড় মূর্তিটি আনুমানিক আকার দৈর্ঘ ৩২ ইঞ্চি ২ সুত প্রস্থ ১৫.৫ ইঞ্চি এবং ওজন ৮২ কেজি ৪০০গ্রাম। এটি থ্রি-ডাইমেনশনাল মূর্তি। গরুড় মূর্তিটি একটি প্রস্ফুটিত পদ্ম ফুল আকৃতির আসনে,দুটি হাত জোড় করে নমস্কার ভঙ্গিতে বসে আছে। এটি একাদশ শতকের তৈরি বলে ধারণা করা হচ্ছে।
আর দেবী পার্বতীর মূর্তিটির আনুমানিক আকার দৈর্ঘ ২৬ ইঞ্চি, প্রস্থ ১৫ ইঞ্চি ১ সুত এবং ওজন ৬৯ কেজি ৫০০ গ্রাম। দেবী পার্বতীর এইরূপ সাধারণত উমা-মহেশ্বর, শিব-পার্বতী যুগল রূপেই দেখতে পাওয়া যায়। দেবী একক এইরূপে দুর্লভ। মূর্তিটিতে পার্বতী দেবীর বাহন সিংহ রয়েছে। দেবীর হাতে লক্ষ্মীর ঘট, ত্রিশূল ও একটি ডালসহ পদ্ম ফুল মনে হচ্ছে । তবে এটি পদ্ম ফুল অথবা শিবলিঙ্গ হতে পারে। পার্বতীর এ মূর্তিটি একাদশ শতকে তৈরি হতে পারে। তিনি আরও বলেন, ভাস্কর্য দুটিই আইকোনো গ্রাফির দিক থেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও প্রত্নতত্ত্ব সমৃদ্ধ। এই মূর্তি দুটি গবেষণায় হয়ত নতুন ইতিহাস বেরিয়ে আসবে।
মূর্তি হস্তান্তর অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় সরকার, চাঁপাইনবাবগঞ্জের উপপরিচালক ও সরকারের উপসচিব দেবেন্দ্র নাথ ইরাঁও, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) আহমেদ মাহবুব-উল-ইসলাম, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) আনিছুর রহমান, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আসিফ আহমেদ, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) পাপিয়া সুলতানাসহ জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেগণ।
এএজেড