নাসিক নির্বাচনে ব্যাংক খোলা, নেই গ্রাহক
ঘড়ির কাটা দুপুর ২টা অতিক্রম করেছে। নারয়ণগঞ্জের প্রাণ কেন্দ্র চাষাঢ়া। সেখানে সোনালী ব্যাংক নারায়ণগঞ্জ করপোরেট শাখা। ক্যাশ কাউন্টারের সামনে পুরোটাাই ফাঁকা। একজন গ্রাহকও নেই। ভেতরে অলস বসে আছেন ব্যাংকের কয়েকজন স্টাফ। অগ্রণী ব্যাংক কালির বাজার শাখা। প্রায় একই সময় গ্রাহক এসেছেন মাত্র ১০/১২ জন। এখানেও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অলস সময় পার করছেন।
নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন (নাসিক) নির্বাচনের দিন এ রকমই ছিল নারায়ণগঞ্জ শহরের অন্যান্য সব সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংকের চিত্র। বাংলাদেশ ব্যাংকের এক সার্কুলারে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের সকল সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংক খোলা রাখার নির্দেশ দেয়া হয়। আদেশ মোতাবেক ব্যাংক খোলা রাখার পর লেনদেনের চিত্র ছিল এ রকমই।
নাসিকের নির্বাচন যখনই হয়, একটা উৎসবমূখর পরিবেষশ তৈরি হয়। এই নির্বাচনের দিকে দৃষ্টি থাকে দেশের কম-বেশি সবারই। অতীতে নির্বাচনের দিন অফিস-আদালত-ব্যাংক-ব্যাসা প্রতিষ্ঠান-মার্কেট সব কিছুই বন্ধ থাকে। এসব প্রতিষ্ঠানের অনেকেই আবার নির্বাচনের দায়িত্ব পালন করে থাকেন। কিন্তু এবারই প্রথম বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশে শুধুমাত্র সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংক খোলা রাখা হয়েছে। কিন্তু সেখানে গ্রাহক উপস্থিতি খুবই কম। ভোটের উৎসবমূখর পরিবেশ এটি ছিল ভিন্ন এক চিত্র! এমন দৃশ্যের সঙ্গে ব্যাংকাররা যেমন আগে পরিচিত ছিলেন না, তেমনি নারায়ণগঞ্জবাসীও। ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারিরা সরকারি নির্দেশ মানতে বাধ্য থাকা তাদের কর্মক্ষেত্রে আসতে হয়েছে; কিন্তু নারায়ণগঞ্জবাসী ভোটের উৎসব রেখে ব্যাংকের দিকে যাননি। তারা ভোটের উৎসবেই মেতেছেন।
চাষাঢ়ায় অবস্থিত সোনালী ব্যাংকের করপোরেট অফিসে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে গ্রাহক শূণ্যের কোটায়। ভেতরে অল্প কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারি বসে আছেন। তাদের কেউ কেউ কাজ করছেন। কেউ কেউ নির্বাচন নিয়ে আলাপ করছেন। মেয়র পদে কে জিতবেন, কে হারবেন, এ সব নিয়ে চলছে আলাপ। সম্ভাব্য প্রার্থীর নাম উল্লেখ করে বিজয়ী হিসেবে কেউ কেউ আগাম মন্তব্যও করছেন। কথা হয় ব্যাংকের দুই এজিএম দেবাশীষ সমাদ্দার ও পঙ্কজ কুমার গোলদারের সঙ্গে। তারা জানান, তাদের শাখায়তে কর্মকর্তা-কর্মচারি ৬৫ জন। শতকরা ৮০ জনের মতোই নির্বাচনী দায়িত্ব পালন করছেন। বাকিরা অফিস করছেন। তাদের আবার অনেকেই ভোট দিয়ে এসেছেন। যারা আসেননি, তারা পরে ভোট দিতে গেছেন। লেনদের পরিমাণ খুবই কম বলে জানান।
দেবাশীষ পোদ্দার ঢাকা প্রকাশকে জানান, দুপুর ২টা পর্যন্ত মাত্র ২ জন গ্রাহক এসেছিলেন ক্যাশ কাউন্টারে। তিনি বলেন, ‘আমার কর্মজীবনে এবারই প্রথম নির্বাচনের দিন অফিস করছি। যেহেতু সরাকরি নির্দেশ, তাই আমরা মানতে বাধ্য। এখন গ্রাহক যদি না আসেন, সেখানে আমাদের করার কিছু নেই।’ যেখানে সর্বত্র ভোটের আমেজ, উৎসবমূখর পরিবেশ, সেখানে এভাবে অফিস করতে বোরিং লাগছে কি না জানতে চাওয়া হলে পঙ্কজ কুমার গোলদার বলেন, এখানে বোরিং লাগা, না লাগা বিষয় না। অফিস খোলা রাখার নির্দেশ আছে। তাই আমরা অফিস করছি।’
অগ্রণী ব্যাংক কালির বাজার শাখা থেকে জানানো হয় দুপুর ২টা পর্যন্ত গ্রাহক এসেছেন ১০ থেকে ১২ জন। অন্যান্য দিনের তুলনায় শতকরা ১০ ভাগেরও কম। এই শাখারও অধিকাংশ স্টাফ নির্বাচনি দায়িত্বে আছেন। বাকিরা অফিস করছেন। কেউ ভোট দিয়ে এসেছেন। কেউ দুপুরের পর চলে গেছেন ভোট দিতে। নির্বাচনের দিন অফিস খোলা নিয়ে এই শাখার কেউ কথা বলতে রাজি হননি।
নারায়ণগঞ্জ বঙ্গবন্ধু রোডে (বিবিরোড) বেশ কয়েকটি সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংক আছে। ঢাকা ব্যাংক, ডাচ বাংলা ব্যাংক, মার্কেন্টাইল ব্যাংক, ইউসিবি ব্যাংক, ট্রাস্ট ব্যাংক, এবি ব্যাংক, পূবালি ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক ঘুরে প্রায় একই রকম চিত্র পাওয়া গেছে। নাম প্রকাশ করার না শর্তে একটি বেসরকারি ব্যাংকের শাখা প্রদান বলেন, ‘এভাবে ব্যাংক খোলা না রাখা হলেই ভালো হতো। লেনদেন পরিমান খুবই কম। মার্কেট-অফিস বেসরকারি প্রতিষ্ঠান সবই বন্ধ। লেনদেন আর কিভাবে হবে।’
নারায়ণগঞ্জে ব্যাংক ছাড়াও গার্মেন্টস খোলা রাখা হয়েছে। ফলে ব্যাংকগুলোতে নগদ লেনেদেন কম হলেও যেসব শাখাতে ফরেন এক্সেচেঞ্জের কাজ আছে, সে সব ক্ষেত্রে আবার অন্যান্য কর্ম দিবসের মতোই অনেকটা কাজ হচ্ছে বলে বিভিন্ন ব্যাংকগুলো থেকে জানানো হয়েছে।
এমপি/এসএ/