ব্লাড সুগার পরীক্ষার অর্ধ কোটি টাকা হজম করলেন আরএমও
২৫০ শয্যাবিশিষ্ট ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালের ইমার্জেন্সি বিভাগে সরকারি কোনো প্রকার অনুমোদন ছাড়া ব্লাড সুগার (RBS) পরীক্ষা করা হয়। আর এই পরীক্ষার টাকা গত ৩ বছর ধরে একাই হজম করছেন হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক রানা নুরুস শামস। ফলে সরকার বঞ্চিত হচ্ছে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব থেকে।
হাসপাতালের জরুরি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, গত ৪ বছর যাবত ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ব্লাড সুগার পরীক্ষা করা হয়। কোনো প্রকার রশিদ ছাড়াই ব্লাড সুগার (RBS) পরীক্ষা করেন হাসপাতালের জরুরি বিভাগের স্টাফ-নার্সরা। রশিদ না দিলেও এই পরীক্ষার জন্য প্রতি রোগী থেকে নেওয়া হয় ৬০ টাকা করে। প্রতিদিন গড়ে ৭০-৮০টি ব্লাড সুগার (RBS) পরীক্ষা করা হয় ডিজিটাল স্ট্রিপের মাধ্যমে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রায় ৪ বছর আগে হাসপাতালের ইমার্জেন্সি বিভাগে ব্লাড সুগার (RBS) পরীক্ষা চালু করা হয়। এ ছাড়াও জরুরি বিভাগে ইসিজি করা হয়। যেন ইসিজি ও ব্লাড সুগার (RBS) পরীক্ষার পর রোগীদের সঠিক চিকিৎসা নিশ্চিত করা যায়। সেই সময় লভাংশের ওই টাকা দিয়ে কিট ক্রয় ও ইমার্জেন্সি অজ্ঞাত বা অসহায় রোগীদের চিকিৎসার জন্য বাকি টাকা খরচ করা হতো। এই সেবা চালুর পর জরুরি বিভাগের অনেক চিকিৎসকে বিভিন্ন জায়গা বদলি ও পদায়ন করা হয়। এই বদলির পর জরুরি বিভাগের ব্লাড সুগার পরীক্ষার তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব নেন হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক রানা নূরুস শামস্। সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক হিসেবে রানা নূরুস শামস গত প্রায় ২৬ বছর ধরে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আছেন।
গত ৩ বছর ধরে ডা. রানা নূরুস শামস্ জরুরি বিভাগের ব্লাড সুগার (RBS) পরীক্ষার টাকা নিজের কাছে জমা রাখেন। তিনি এখন পর্যন্ত ওই টাকার হিসেব হাসপাতালের কাউকে দেননি। এই টাকা কে নিচ্ছে এবং কোথায় জমা হচ্ছে স্বয়ং হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক তা জানেন না। প্রায়ই ৩ বছর যাবত ওই টাকা আত্মসাৎ করে যাচ্ছে ডা. রানা নূরুস শামস্। প্রতিদিন গড়ে ৮০টি ব্লাড সুগার পরীক্ষায় ৬০টাকা করে মোট ৪৮০০টাকা আসে। এক মাসে আয় হয় ১,৪৪০০০ হাজার টাকা। গত ৩ বছরে ডাক্তার রানা নূরুস শামস ৫১ লক্ষ ৮৪ হাজার টাকা জরুরি বিভাগের ব্লাড সুগার পরীক্ষার জন্য নিয়েছেন। যার একটি টাকাও সরকারি কোষাগারে জমা দেননি।
সদর হাসপাতালের ইমার্জেন্সি বিভাগে সিনিয়র স্টাফ নার্স সাদ্দাম মিয়াকে জিজ্ঞাসা করলে রোগীদের কাছ থেকে ব্লাড সুগার (RBS) টাকা রিসিটের মাধ্যমে নেওয়া হয় কি-না? উত্তরে তিনি ‘ডা. রানা স্যার জানেন উনার সঙ্গে কথা বলেন'-এ কথা বলে ফোন কেটে দেন সাদ্দাম মিয়া।
এ বিষয়ে সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার ডা. রানা নূরুস শামস্ বলেন, এই টাকা অন্য খাতে ব্যবহার করা হয়। তবে কোন খাতে ব্যবহার হয় তা জানাতে অপরাগতা প্রকাশ করে ফোন কেটে দেন তিনি।
এদিকে হাসপাতালের হিসাবরক্ষক মুহাম্মদ সালাউদ্দিন বলেন, ইমারজেন্সি বিভাগের হাপাতালের টাকা প্রতি মাসে আমার কাছে জমা হয়। রিসিট ছাড়া কোনো টাকা আমার কাছে জমা হয় না।
এ ব্যাপারে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মুহাম্মদ ওয়াহীদুজ্জামান বলেন, আমি শুনেছি রোগীদের কাছ থেকে রিসিটের মাধ্যমে টাকা নেওয়া হয় না। আমি জানি হাসপাতালে স্ট্রীপ নেই এ স্ট্রীপগুলো ডা রানা দেয় এবং স্ট্রীপের টাকা রেখে বাকি টাকাটা হাসপাতালের রাজস্ব তহবিলে জমা দেওয়ার কথা।
প্রতি মাসে কত টাকা জমা দিচ্ছেন-এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি তা জানি না হিসাবরক্ষক বলতে পারবে। এগুলো বন্ধ করে দেওয়া হবে।
এসআইএইচ