বরিশালে বাড়ছে সাংবাদিকদের উপর হামলা ও হুমকি
বরিশালে একের পর এক সাংবাদিকদের ওপর হামলা ও হুমকির ঘটনা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এক সপ্তাহের মধ্যে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে কেবল বরিশালে দুই জায়গায় হামলা ও হুমকির ঘটনার মুখোমুখি হলেন সাংবাদিকরা। এ ঘটনায় দায়িত্ব পালনকালে নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন বরিশালের সাংবাদিকেরা।
বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের কাউন্সিলর আজাদ হোসেন মোল্লা কালামের বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলা করেছেন এক নারী। এই মামলার সংবাদ প্রচার করায় জেল থেকে বের হয়ে সাংবাদিকদের দেখে নেওয়ার হুমকি দিয়েছেন তিনি। তাকে আদালত থেকে জেলে নেওয়ার সময় এই হুমকি দেন তিনি। এ সময় তার সঙ্গে থাকা সহযোগীদের দিয়ে সাংবাদিকদের ছবি তুলতে বাধাও দেন।
শনিবার (১৫ জানুয়ারি) দুপুরে বরিশাল মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত প্রাঙ্গনে এ ঘটনা ঘটে। পুলিশের উপস্থিতিতে কাউন্সিলর ও তার সঙ্গীদের সংবাদ কর্মীদের ওপর চড়াও হওয়ার ঘটনায় অবাক হন আদালতে উপস্থিত আইনজীবীরাও।
এর আগে গত রবিবার (৯ জানুয়ারি) ঢাকা থেকে বরিশাল ফেরার পথে সুরভী-৯ লঞ্চের সাইলেন্সার পাইপ থেকে ধোঁয়া বের হওয়ার ঘটনায় যাত্রীরা আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। এ সময় যেসব যাত্রীরা ঘটনাটি মোবাইলে ধারণ করে ফেসবুকে দিয়েছিলেন সেই সব যাত্রীদের খুঁজে মারধর করে লঞ্চ কর্তৃপক্ষ। মারধরের ঘটনায় ছবি তুলতে গেলে দুই টেলিভিশনের চিত্র সাংবাদিকও মারধরের শিকার হন। এ ঘটনায় আহত ২ সাংবাদিক ও নৌবন্দর কর্মকর্তা থানায় লিখিত অভিযোগ দিলেও কোনো আইনি পদক্ষেপ চোখে পড়েনি। যদিও এরপর লঞ্চ মালিক লিখিতভাবে সাংবাদিকদের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেন এবং অভিযুক্তদের চাকরিচ্যুত করেছেন বলে জানান।
সুরভী-৯ লঞ্চের মারধরের ঘটনায় লিখিত অভিযোগ দিলেও পুলিশের তৎপরতা না থাকা ও পুলিশের উপস্থিতিতে ধর্ষণ মামলার আসামি ও তার সহযোগীদের হুমকি ও হামলার ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়েছেন সাংবাদিকরা।
এ বিষয়ে শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাত বরিশাল প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসেন বলেন, ‘লঞ্চঘাটে সাংবাদিকদের উপর হামলার ঘটনায় পুলিশ কমিশনার ও ওসিকে বারবার অনুরোধ করার পরও তারা সুরভি-৯ লঞ্চের অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। প্রশাসনের এমন আচরণ আমাদের কাম্য নয়। এর তীব্র নিন্দা জানাই। পুলিশ লিখিত অভিযোগ পাওয়ার পরও কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় সাংবাদিকদের উপর একের পর এক হামলা ও হুমকির ঘটনা ঘটছে। আমি প্রশাসনকে আহবান জানাই যত দ্রুত সম্ভব ব্যবস্থা গ্রহণ করুন। যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হলে আমরা আন্দোলনে নামবো।’
এ বিষয়ে সাংবাদিক ইউনিয়ন বরিশালের সভাপতি সাইফুর রহমান মিরন বলেন, ‘অপরাধীর অপরাধের মাত্রা যখন বেশি হয়ে যায় তখন সে কাণ্ডজ্ঞান হারিয়ে ফেলে। সাংবাদিকদের উপর হামলার ঘটনায় পুলিশের কাছে অভিযোগ করার পরও ব্যবস্থা না নেওয়া ও পুলিশের উপস্থিতিতে সাংবাদিকদের হুমকির ঘটনায় তাদের কর্তব্য পালন এবং সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। শুধু সাংবাদিক নয় দেশের নাগরিকদের সাবিক নিরাপত্তাও হুমকির মুখে বলে আমি মনে করি।’
এ বিষয়ে বরিশাল রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি নজরুল বিশ্বাস বলেন, ‘আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি সাংবাদিকদের সুরক্ষা আইন বাস্তবায়ন না হলে শুধু বরিশালে নয় সারা বাংলাদেশেই সাংবাদিক নির্যাতনের ঘটনা ঘটবে।এছাড়া যে কয়টি বিচ্ছিন্ন ঘটনা স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ে ঘটছে তা দল মত নির্বিশেষে পেশাদারিত্বের জায়গায় সবাই ঐক্যবদ্ধ না থাকার কারণে। আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ থাকলে পুলিশ লিখিত অভিযোগ পাওয়ার সঙ্গে সুরভি লঞ্চের ঘটনায় যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিত। এছাড়া আজ যে হুমকির ঘটনা ঘটেছে তার বিরুদ্ধেও দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেত। মূল কথা আমাদের ঐক্যবদ্ধ হওয়া ছাড়া কোনো বিকল্প নেই।’
এ বিষয়ে বরিশাল কোতয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আজিমুল করিম বলেন, ‘সুরভি লঞ্চে সাংবাদিকদের উপর হামলার ঘটনায় মামলা হয়েছে। আমরা অভিযান পরিচালনা করেছিলাম। বর্তমানে একজন আসামি জামিনে আছে।’
এসএম/এএন