তন্ত্রমন্ত্রের সাপ খেলা, জিতলেই দশ হাজার টাকা

মাঠের মাঝখানে পুঁতে রাখা হয়েছে একটি কলাগাছ। গোড়ায় পানি ভর্তি মাটির ঘটি। চারপাশ চুন দিয়ে বৃত্তাকারে ঘিরে রাখা হয়েছে। খেলার মাঠটিও বৃত্তাকারে চিহ্ন দেওয়া হয়েছে। ঘটির পানিতে হাত ভিজিয়ে মাঠের বিভিন্ন পাশে খেলোয়াড়রা অবস্থান নিয়ে মাটিতে হাত রেখে শুরু হয় মন্ত্রপড়া। এই খেলাটির নাম তন্ত্র-মন্ত্রের পাতা খেলা। শনিবার (৪ ফেব্রুয়ারি) বিকালে ঠাকুরগাঁওয়ে ভূল্লী আজিজনগর ফরেস্টডাঙ্গা গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী তন্ত্রমন্ত্রের 'পাতা খেলা' অনুষ্ঠিত হয়।
স্থানীয় যুবকদের আয়োজনে দীর্ঘদিন পর এই খেলা দেখতে মাঠে ভিড় করেন নারী-পুরুষরা। খেলায় ১৩ জন মন্ত্রী (ওঝা বা তান্ত্রিক) এবং হাত খেলা বা পাতা হিসেবে থাকে ৪ জন। খেলায় আশপাশের বিভিন্ন এলাকা থেকে পাঁচটি তান্ত্রিক দল আসে। নিজ নিজ মন্ত্র দিয়ে পাতারূপী মানুষকে মাঠের মাঝখান থেকে নিজের দিকে টানার প্রতিযোগিতা করেন তারা।
যে দল তাদের তন্ত্র মন্ত্রের মাধ্যমে মানুষ নামের পাতাকে নিজের দিকে টানতে পারবে, সেই দলই পয়েন্ট পাবে। পরে পয়েন্ট হিসাব করে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। খেলায় তন্ত্রমন্ত্রের হাড্ডাহাড্ডি লড়াই শেষে বিজয়ী হন কালিমহন মেম্বার দল ও রানারআপ হন অখিন চন্দ্র দল। পুরস্কার হিসেবে প্রথম স্থান অধিকারীকে ১০ হাজার ও ২য় স্থান অধিকারীকে ৬ হাজার টাকার প্রাইজমানি দেওয়া হয়। খেলার সময় মাঠজুড়ে নারী-পুরুষ, শিশু-কিশোরের উপচে পড়া ভিড় ছিল। খেলাকে ঘিরে পুরো এলাকায় ছিল উৎসবের আমেজ।
খেলা দেখতে আসা ইশিতা বলেন, পাতা খেলা নামে যে কোনও খেলা যে ছিল তা জানা ছিল না। এই খেলা আগে কখনও দেখিনি। খেলাটি খুব মজার। কামাল হোসেন বলেন, আমাদের গ্রামগঞ্জে কখনোই পাতা খেলা হয়নি। তাই এই প্রথম দেখতে এসেছি। মন্ত্রের মধ্য দিয়ে পাতারুপি মানুষকে তার দিকে টানছে। এটা একটা অদ্ভুত খেলা।
জহিরুল ইসলাম বলেন, আমরা যখন ছোট ছিলাম তখনকার ঐতিহ্যবাহী ও জনপ্রিয় ছিল পাতা খেলা। আগে এই খেলা বিভিন্ন গ্রামে নিয়মিত হতো। কিন্তু কালের বিবর্তনে আজ কোথাও দেখা যায় না। তাই অনেক দিন পর এমন খেলার কথা শুনে আর লোভ সামলাতে পারিনি। খেলাটি উপভোগ করলাম। খুব ভালো লাগলো।
খেলা পরিচালনাকারী আলী হোসেন নুরু বলেন, আমরা ছোটবেলা থেকেই এই খেলার নাম শুনে এসেছি, কিন্তু কখনও দেখা হয়নি। আগে বিভিন্ন এলাকায় খেলাটি হতো বলে শুনেছি। দীর্ঘদিন ধরে আয়োজন না করায় ঐতিহ্যবাহী খেলাটি আজ হারিয়ে যেতে বসেছে। তাই খেলাটি ধরে রাখতে ও পুনরুদ্ধারে এই আয়োজন। স্থানীয় সহযোগিতা পেলে মানুষকে আনন্দ দিতে প্রতিবছর এমন আয়োজনের করা হবে। খেলা শেষ বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করেন অতিথিরা।
এএজেড
