সাবেক ছাত্রলীগ নেতা হত্যা মামলার অভিযোপত্র দাখিল
কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন হত্যা মামলার চার্জশিট (অভিযোগপত্র) দাখিল করা হয়েছে। হত্যাকাণ্ডের ৪ বছর পর বৃহস্পতিবার (২ ফেব্রয়ারি) বিকেলে কুমিল্লার আদালতে অভিযোগপত্রটি দাখিল করে মামলার তদন্ত সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।
এতে কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের ২৬ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আবদুস সাত্তার এবং বেশ কয়েকটি হত্যাসহ নানা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের অভিযোগে এলাকায় 'কিলার' হিসেবে পরিচিত রেজাউল করিমসহ ১৬ জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে।
আজ শুক্রবার (৩ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে অভিযোগপত্র দাখিলের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন পিবিআই কুমিল্লার পুলিশ সুপার মোঃ মিজানুর রহমান। এ মামলার সবশেষ তদন্ত কর্মকর্তা ছিলেন পিবিআইয়ের কুমিল্লার পুলিশ পরিদর্শক এম এ মঞ্জুর।
২০১৮ সালের ২৬ নভেম্বর রাতে কুমিল্লা নগরীর ২৬ নং ওয়ার্ডের শামবকসি (ভল্লবপুর) এলাকায় মাথায় গুলি করে হত্যা করা হয় কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক দেলোয়ার হোসেনকে। এলাকায় আধিপত্য ও রাজনৈতিক নানা বিষয় বিষয় নিয়ে কাউন্সিল সাত্তারের সঙ্গে দেলোয়ারের বিরোধ চলে আসছিলো। অভিযোপত্রে কাউন্সিলর সাত্তারকে খুনের পরিকল্পনাকারী হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
২৬ নম্বর ওয়ার্ডের টানা দুইবারের কাউন্সিলর আবদুস সাত্তার কুমিল্লা মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহ-সভাপতির পদে রয়েছেন। গত এক দশকে কুমিল্লার রাজনৈতিক অঙ্গনে যেসব হত্যার ঘটনা ঘটেছে তার মধ্যে ছাত্রলীগ নেতা দেলোয়ার হোসেন হত্যা বেশ আলোচিত।
পিবিআইয়ের কুমিল্লার পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান সাংবাদিকদের জানান, দেলোয়ার হত্যাকাণ্ডে গ্রেপ্তার হওয়া এক আসামি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। এছাড়া দীর্ঘদিন যাবত মামলার তদন্ত, গ্রেপ্তার হওয়া আসামিদের ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদের প্রেক্ষিতে আলোচিত এ হত্যাকাণ্ড বাস্তবায়নকারী, পরিকল্পনাকারী ও সহযোগীদের চিহ্নিত করে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে।
পুলিশ ও নিহতের পরিবার সদস্যরা জানান, ২০১৮ সালের ২৬ নভেম্বর নির্বাচনী সভার কথা বলে কাউন্সিলর আবদুস সাত্তার মোবাইল ফোনে ডেকে নেন ছাত্রলীগ নেতা দেলোয়ারকে। সভা শেষে সাত্তারের অফিস থেকে ফেরার পথে ওইদিন রাতে নিজ বাড়ির কাছাকাছি শামবক্সি (ভল্লবপুর) এলাকায় দেলোয়ারকে গুলি করে হত্যা করা হয়। হত্যাকাণ্ডের পরদিন দেলোয়ারের বড় ভাই মো. শাহাদাত হোসেন নয়ন বাদী হয়ে কুমিল্লা সদর দক্ষিণ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
মামলায় একই এলাকার বাসিন্দা ও পুলিশের তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী রেজাউল করিম, তার সহযোগী কাউছারসহ অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করা হয়। আলোচিত হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় পুলিশ মামলার প্রধান আসামী রেজাউল, কাউন্সিলর সাত্তারসহ মোট ৬ জনকে গ্রেপ্তার করে। তবে রেজাউল ছাড়া বাকি আসামিরা এখন জামিনে মুক্ত রয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
১২টি হত্যা মামলাসহ মোট ৩০টি মামলার আসামি রেজাউলকে ২০২১ সালের ১৮ জুন বিজিবির সদস্যরা কুমিল্লার সীমান্ত এলাকা থেকে বিদেশি পিস্তল, গুলি ও মাদকসহ আটক করে পুলিশে সোপর্দ করে । এরপর থেকে রেজাউল কুমিল্লা কারাগারে রয়েছেন। জানতে চাইলে দেলোয়ার হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআইয়ের পরিদর্শক এম এ মঞ্জুর জানান, গত ২৩ জানুয়ারি স্বাক্ষর হওয়া চার্জশিট বৃহস্পতিবার আদালতে জমা দেওয়া হয়েছে।
তদন্তের বরাত দিয়ে তিনি বলেন, এলাকায় প্রভাব বিস্তার, কাউন্সিলর নির্বাচনসহ রাজনৈতিক বিরোধে দেলোয়ারকে খুনের পরিকল্পনা করেন কাউন্সিলর সাত্তার। এছড়া চার্জশিটে নাম থাকা বাকি ১৫ জনের মধ্যে প্রধান আসামি রেজাউল আর শামবক্সি এলাকার আতিকুল ইসলাম আতিক ছিলেন খুনের বাস্তবায়নকারী।
আতিক ছিলেন ওই বাইকের চালক। নির্বাচনী সভা শেষে সাত্তারের অফিস থেকে বের হয়ে দেলোয়ার হেঁটে বাড়ির দিকে যাচ্ছিলেন। ঘটনাস্থলে গিয়ে আতিক হঠাৎ মোটরসাইকেল থামালে পেছনে বসা রেজাউল সঙ্গে সঙ্গেই দেলোয়ারের মাথায় গুলি চালিয়ে পালিয়ে যায়। অভিযোগপত্রে বাকি ১৩ জন প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে হত্যাকাণ্ডে যুক্ত ছিলেন এবং এরা সবাই কাউন্সিলর সাত্তার ও রেজাউলের সহযোগী।
এএজেড