ঘোড়ার গাড়িতে চড়ে বিদায় নিলেন প্রধান শিক্ষক

বিদায় সব সময় বেদনার হলেও কখনো কখনো তা চিরস্মরণীয় হয়ে থাকে। এমনই এক বিদায়ী সংবর্ধনা পেয়েছেন লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার তেঁতুলিয়া নীলকান্ত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মজিবর রহমান। ওই শিক্ষকের অবসরগ্রহণ উপলক্ষে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বর্ণিল এই আয়োজন করে। ফুলের মালা দিয়ে সাজানো ঘোড়ার গাড়িতে করে ওই শিক্ষককে বিদায় জানান সহকর্মী ও শিক্ষার্থীরা।
বৃহস্পতিবার (২ ফেব্রুয়ারি) দুপুর ২টার দিকে বিদায় সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে উপজেলার চলবলা ইউনিয়নের তেঁতুলিয়া নীলকান্ত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নজরুল ইসলামের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি ছিলেন কালীগঞ্জ উপজেলা (ভারপ্রাপ্ত) শিক্ষা অফিসার বীরেন্দ্রনাথ রায়। এসময় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কালীগঞ্জ উপজেলা সহকারী শিক্ষা অফিসার আ ব মোকতাদের বিল্লাহ্, উপজেলা সহকারী শিক্ষা অফিসার রনবীর কুমার রায়, উপজেলা সহকারী শিক্ষা অফিসার যোগেন্দ্রনাথ সেন, বারাজান এসসি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক প্রদীপ কুমার সরকারসহ অন্যান্য শিক্ষকরা উপস্থিত ছিলেন।
২ ফেব্রুয়ারি প্রধান শিক্ষক মজিবর রহমানের চাকরি জীবনের শেষদিন ছিল। ওইদিন এভাবেই তাকে সুসজ্জিত ঘোড়ার গাড়িতে করে বাড়ি পৌঁছে দেওয়া হয়। বিদায়ী প্রধান শিক্ষক ওই উপজেলার কাকিনা ইউনিয়নের গোপালরায় গ্রামের বাসিন্দা। তিনি তেঁতুলিয়া নীলকান্ত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ছিলেন।
শিক্ষক মজিবর রহমান শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, আমি বিদায় নিচ্ছি, কিন্তু আমার দোয়া রেখে গেলাম। তোমরা লেখাপড়া করে যখন অনেক বড় হবে, তখন আমাদের কথা মনে পড়বে। তোমরা নিজেদেরকে মানবিক মানুষ হিসেবে গড়ে তুলবে।
পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী আফিয়া সুলতানা বলেন, মজিবর রহমান স্যার শুধু শিক্ষক ছিলেন না, তিনি বাবার মতো আমাদের স্নেহ করতেন। তার বিদায় আমাকে খুব মর্মাহত করছে। তিনি না থাকলেও তার দেওয়া শিক্ষা আমাদের মানবিক জীবন গড়তে সহায়ক হবে।
তেঁতুলিয়া নীলকান্ত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আঁখিরুজ্জামান বলেন, বিদায়ী শিক্ষক মজিবর রহমান শুধু একজন প্রধান শিক্ষক নন, তিনি আমার ভাইয়ের মতো ছিলেন। যেকোনো বিষয়ে পরামর্শ নিতাম। বিদায় বড় কষ্টের, তবুও মানতে হবে। আমাকেও এভাবে একদিন বিদায় নিতে হবে। একজন শিক্ষকের বিদায়কে স্মরণীয় করে রাখতে তাকে সুসজ্জিত ঘোড়ার গাড়িতে করে বাড়ি পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। শিক্ষার্থীদের স্মরণে রাখতেই এমন ব্যতিক্রমী ও বর্ণাঢ্য আয়োজন।
কালীগঞ্জ উপজেলা (ভারপ্রাপ্ত) শিক্ষা অফিসার বীরেন্দ্রনাথ রায় বলেন, একজন শিক্ষক যখন তার চাকরি জীবন শেষে বাড়ি ফিরে যান তখন তিনি অনেক কষ্ট পান। সন্তানতুল্য শিক্ষার্থীদের রেখে চলে যাওয়া খুব কষ্টের। বিদায়ের কষ্ট কিছুটা কমানোর জন্যই কর্তৃপক্ষ ব্যতিক্রমী এমন আয়োজন করেছে। কালীগঞ্জে এই প্রথম এমন উৎসবের বিদায়। শুধু মজিবর রহমান নয়, প্রতিটি শিক্ষকের বিদায় এমন হওয়া উচিত।
এসজি
