রাঙ্গুনিয়ায় নদী ও সড়ক পথে চলছে কাঠ পাচার
চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ার কর্ণফুলী নদী পথে প্রতিনিয়ত যান্ত্রিক নৌযানে চলছে কাঠ পাচার। দেখার যেন কেউ নেই। একই সঙ্গে সমানতালে চট্টগ্রাম-রাঙ্গামাটি মহাসড়ক ও চট্টগ্রাম-কাপ্তাই মহাসড়ক দিয়েও প্রতিনিয়ত সন্ধ্যা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত প্রভাবশালী সিন্ডিকেটের সদস্যদের পাহারায় চলছে কাঠ পাচারের মহোৎসব। নদী ও সড়ক পথে বেপরোয়াভাবে বনের এসব কাঠ পাচার হলেও নীরব বন বিভাগ।
বন বিভাগের এক শ্রেণির অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যোগসাজশে রাঙ্গামাটি জেলার কাপ্তাই, রাঙ্গুনিয়া, পোমরা চেক ষ্টেশন, কোদলা বিট, ইছামতি রেঞ্জ, ইসলামপুর বিট, বগাবিলি বিট ও খুরুশিয়া রেঞ্জকে ম্যানেজ করে এসব কাঠ পাচার করছে পাচারকারী সিন্ডিকেট।
জানা যায়, রাঙামাটির সর্ববৃহৎ বাগান আলিখিয়ং, ফারুয়া, কাপ্তাই পাল্পউডের বাগান বিভাগ রাজস্থলি, কাপ্তাই এবং বান্দরবানসহ চট্টগ্রামের দক্ষিণ বন বিভাগের খুরুশিয়া রেঞ্জ এলাকা থেকে বিভিন্ন প্রজাতীর কাঠ রাঙ্গুনিয়ায় আসছে। এক শ্রেণির সংঘবদ্ধ কাঠ পাচারকারী রাতের আঁধারে এসব কাঠ চট্টগ্রাম শহর দিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে পাচার করছে।
স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, রাঙামাটি দক্ষিণ বন বিভাগের সবচেয়ে বড় বাগান বিভাগ আলিখিয়ং, সাংক্রাছড়ি, ফারুয়া, আড়াছড়ি, কাপ্তাই পাল্প উড বাগান বিভাগের কাপ্তাই, রাজস্থলী, চট্টগ্রাম দক্ষিণ বন বিভাগের খুরুশিয়া রেঞ্জ এবং বান্দরবান বন বিভাগের বাগান থেকে মুল্যবান সেগুন, গর্জন, চাপালিশ, আকাশমণি, গামারীসহ নানা প্রজাতীর কাঠ রাঙ্গুনিয়ায় আসছে। রাঙ্গুনিয়ার চন্দ্রঘোনা লিচুবাগান, চৌধুরী গোট্টা, খোন্দকার পাড়া, সুফি গোট্টা, হাইব্ব্যার গোট্টা, বুইজ্জার দোকান, কাটাখালী, মরিয়ম নগর, গোডাউন, পোমরা শান্তির হাট, বুড়ির দোকান, পাহাড়তলি, ইসলামপুর, ধামাইর হাট, মোগলের হাট থেকে মরিয়ম নগর ডিসি সড়ক, চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়ক দিয়ে এবং চন্দ্রঘোনা রাইখালী, ডং নালা, কালুগোট্টা, আধুর পাড়া, কোদালা, মরিয়ম নগর, বালু গোট্টা, পাঁচবাড়ি, রশিদিয়া পাড়া, ইছামতি, শিলক, সরফভাটা, পাইট্টালীকুল, গোচরা বাজার, বাচাশাহর মাজার, বেতাগী থেকে কর্ণফুলী নদী পথে এসব কাঠ পাচার করা হচ্ছে।
স্থানীয়রা জানান, কর্ণফুলী নদী ও কাপ্তাই-চট্টগ্রাম সড়ক পথে অবৈধ কাঠ পাচার ওপেন সিক্রেট হয়ে দাঁড়িয়েছে। কতিপয় চোরাই কাঠ ব্যবসায়ীর সঙ্গে কর্মকর্তাদের যোগসাজশ থাকায় বিনা বাধায় চলছে কাঠ পাচার। বিশেষ করে পার্বত্য অঞ্চলের বিভিন্ন বনায়ন থেকে আনা মূল্যবান কাঠ কর্ণফুলী নদী পথে পরিবহন করে রাঙ্গুনিয়ার বিভিন্ন স্পটে মজুদ করা হচ্ছে। রাতের আঁধারে কাপ্তাই-চট্টগ্রাম সড়ক পথে পোমরা বন চেক স্টেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ম্যানেজ করে কাঠ পাচার চলছে। এতে বছরে লাখ লাখ টাকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সরকার। এর পাশাপাশি পার্বত্য চট্টগ্রাম দক্ষিণ ও উত্তর বন বিভাগের হাজার হাজার একর বনায়নকৃত অঞ্চল বৃক্ষশূন্যে পরিণত হচ্ছে।
এ বিষয়ে রাঙ্গুনিয়া রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. মাসুম কবির বলেন, ‘চট্টগ্রাম দক্ষিণ বন বিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা শফিকুল ইসলামের নির্দেশনায় এবং সহকারী বনসংরক্ষক শীতল পালের নেতৃত্বে গত ৬ জানুয়ারি রাঙ্গুনিয়ার শিলক ইউনিয়নের জালিয়াপাড়া এলাকায় অভিযান চালিয়ে ৭৫১ টুকরা ৭৩০.৩০ ঘনফুট সেগুন গোল কাঠ ও রদ্দা আটক করা হয়েছে। বন বিভাগের উদ্ধার অভিযান চলমান রয়েছে।’
এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম উত্তর বন বিভাগের ইছামতী রেঞ্জ কর্মকর্তা সাজ্জাদ হোসেন বলেন, সংঘবদ্ধ কাঠ চোররা কাঠ পাচারে এখন নতুন কৌশল গ্রহণ করেছে। পাচারকারীরা নদীকে পাচারের নিরাপদ রুট হিসেবে ব্যবহার করছে। তাই উপজেলার বিভিন্ন নদী পথে নৌকা দিয়ে কাঠ পাচার শুরু করছে। নদী পথে নৌকায় কাঠ পাচার ঠেকাতে বন কর্মীরা সক্রিয় আছেন।
এ ব্যাপারে রাঙ্গুনিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আতাউল গণি ওসমানী বলেন, নৌকায় কাঠ পাওয়া গেলে সংশ্লিষ্ট নৌকার মালিক, শ্রমিক এমনকি প্রমাণ সাপেক্ষে দোষী ব্যক্তির বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এসআইএইচ