নদী থেকে তোলা বালু দিয়েই নদীরক্ষা বাঁধ নির্মাণ!

উন্নত বালু ব্যবহার করার কথা থাকলেও নদী থেকে অবৈধভাবে তোলা বালু দিয়েই নদীরক্ষা বাঁধ বা সিসি ব্লক তৈরির অভিযোগ উঠেছে দেশের উত্তরের সীমান্তবর্তী জেলা লালমনিরহাটে।
শনিবার (২৮ জানুয়ারী) দুপুরে লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা ইউনিয়নের সলেডি স্পার-২, চৌরাহা এলাকা ঘুরে দেখাগেছে, বেশ কয়েকটি পয়েন্টে ৫ থেকে ৭টি ড্রেজার মেশিন বসিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। এসব বালু উত্তোলন করে মজুদ করার পাশাপাশি ট্রাকে করে বিক্রি করা হচ্ছে।
আর এসব বালু দিয়েই তিস্তা নদীর ভাঙ্গন রোধে সি সি ব্লক তৈরির কাজ করছেন সংশ্লিষ্ট পানি উন্নয়ন বোর্ডের ঠিকাদাররা। নিয়ম অনুযায়ী এসব ব্লক তৈরিতে পাটগ্রামের উন্নত বালু ব্যবহার করার কথা থাকলেও স্থানীয় ঠিকাদার হওয়ায় এসব নিয়মনীতি মানছেন না। অভিযোগ উঠেছে, পানি উন্নয়ন বোর্ডের কতিপয় কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে নিম্নমানের বালু ব্যবহার করা হচ্ছে।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মিজানুর রহমান বলেন, তিস্তা নদী থেকে ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন করার কোন সুযোগ নেই। এসব বালু দিয়ে সি সি ব্লক তৈরি করা হচ্ছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি সাংবাদিকের জানান, এসব বালু দিয়ে ব্লক তৈরির কাজ করা যাবে না। পাটগ্রামের বালু দিয়ে এসব সিসি ব্লক তৈরি করতে হবে।
লালমনিরহাট জেলায় প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে তিস্তা নদীর ভাঙ্গনে বিলীন হয় শতাধিক বসতভিটা ও ফসলি জমি। নদী ভাঙ্গনরোধে সরকারিভাবে পদক্ষেপ নেওয়া হলেও তা ঠেকানো যাচ্ছেনা। অভিযোগ উঠেছে কতিপয় বালুখেকো তিস্তা নদী থেকে মাসের পর মাস অবৈধ ড্রেজার মেশিন বসিয়ে বালু উত্তোলন করছেন। শুধু তাই নয়, নদী তীর থেকেই শত শত ট্রাকে করে বালু চলে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। এতে করে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন নদী তীরের বসবাসরত পরিবারগুলো।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন, বালুখেকোদের বিরুদ্ধে কথা বললে পরিবারের উপর নানা নিপীড়ন ও নির্যাতন নেমে আসে। বালু উত্তোলনকারীরা প্রভাবশালী হওয়ায় তাদের কাছে প্রশাসনও এক প্রকার অসহায়। ফলে কোনভাবেই তিস্তা নদী থেকে বালু উত্তোলন ও বিক্রি বন্ধ করা যাচ্ছে না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ইউপি সদস্য বলেন, তিস্তা নদীর ভাঙ্গন রোধে সরকার কাজ করলেও কতিপয় প্রভাবশালী ব্যক্তি মাসের পর মাস ড্রেজার মেশিন দিয়ে বিশাল বিশাল বালু স্তুপ করছেন। এসব বালু সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত ট্রাকে করে বিক্রি করা হচ্ছে।
চৌরাহা এলাকার বাসিন্দা আমজাদ হোসেন বলেন, প্রতিদিন এসব ড্রেজার মেশিন দিয়ে যেভাবে নদী থেকে বালু উত্তোলন করে বিক্রি করা হচ্ছে, বর্ষা মৌসুমে নদীর গতিপথ পরিবর্তন হয়ে নিমিষেই নদী তীরের বসবাসরত পরিবারগুলোর বাড়িঘর বিলীন হয়ে যাবে। ফলে সরকারের সফল কর্মসূচি ম্লান হয়ে যাবে। বালু খেকোরা প্রভাবশালী হওয়ায় আমরা কেউ প্রতিবাদ করার সাহস পাচ্ছি না।
সরেজমিনে আরও দেখা গেছে, কতিপয় সরকার দলীয় নেতার নাম ভাঙিয়ে তিস্তা নদী থেকে প্রতিদিন ট্রাক যোগে বালু বিক্রির হিড়িক পড়ে।
তবে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এসব অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধের জন্য একাধিকবার অভিযান পরিচালনা করে জরিমানা করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন আদিতমারী উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) জি. আর সারোয়ার বলেন।
/এএস
