কুড়িগ্রামে বিদ্যার দেবী সরস্বতী পূজা অনুষ্ঠিত
সারাদেশের ন্যায় কুড়িগ্রামেও ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বিদ্যার দেবী শ্রী শ্রী স্বরস্বতী পূজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত কুড়িগ্রাম জেলা জুড়ে অধিকাংশ হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়ীসহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও অস্থায়ী মন্দিরে ঢাক-ঢোল, কাসর, শঙ্খ ও উলুধ্বনির মধ্য দিয়ে পূজা-অর্চনা করছেন সনাতন ধর্মের শিক্ষার্থীসহ ভক্ত পূজারীরা।
জ্ঞানের আলো ছড়াতে ও বুদ্ধি, বিদ্যা, শিল্পকলা এবং সংগীতের দেবী সরস্বতী স্বর্গ থেকে মর্তে পৃথিবীতে আসেন এই বিশেষ দিনটিতে। দেবী সরস্বতী হলেন সত্য, শুদ্ধ ও শুভ্রতার মহা প্রতিক। এ দেবীর আরেক নাম বীণাপানি। রাঁজহংস এ দেবীর বাহন।
দেবী সরস্বতীর হাতে শ্বেত রুদ্রাক্ষের মালা, তিনি শ্বেতচন্দনে চর্চিতা, শ্বেতবাণীধারিণী, শুভ্রবর্ণা ও শ্বেত অলঙ্কারে ভূষিতা। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস এদিনে মা সরস্বতী বিদ্যার দেবী পৃথিবীতে আসেন অন্ধকার দুর করে জ্ঞানের আলো ছড়াতে। তাই যুগের পর যুগ ধরে শিক্ষার্থীরা এই দিনে বিশেষ প্রার্থনার মাধ্যমে বিদ্যার দেবী মা সরস্বতীর পূজা অর্চনা করেন।
দেবী সরস্বতীকে কেউ কেউ বাগ্বদেবী হিসেবেও জানেন অর্থ্যাৎ সনাতন শিশুদের ৫ বছর হলেই এ দেবীর পায়ে পুষ্পাঞ্জলি দিয়ে চক আর স্লেটে অ,আ, ক,খ নিজ হাতে লিখে শুরু হয় শিক্ষা জীবনের। যাকে বলা হয় হাতেখড়ি। বৃহস্পতিবার ভোর থেকে শুরু হয়েছে মাঘ মাসের শুক্লা পঞ্চমী তিথি যা সরস্বতী বন্দনার জন্য প্রসিদ্ধ। শিক্ষার্থী অনুপ রায় ও অংকন সেন বলেন, বাড়িতে পুজা থাকলেও সব বন্ধু-বান্ধবসহ সবাই মিলে স্কুলে মা সরস্বতী দেবীর পূজো করেছি। বিদ্যার দেবী আমাদের সকলের মনের অন্ধকার দুর করুক এই প্রার্থনাই করেছি।
ফুলবাড়ী উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি কার্ত্তিক চন্দ্র সরকার ও সাধারণ সম্পাদক ভারত চন্দ্র রায় জানান, মা সরস্বতী হলেন আমাদের বিদ্যার দেবী। তিনি প্রতি বছর এই ধরাধামে আসেন বিশেষ তিথিতে। পূজায় মায়ের কাছে প্রার্থনা করি যাতে প্রতিটি মানুষ জ্ঞানের আলোয় বিবেকবান হতে পারে। তারা আরও জানান আমাদের সনাতন শাস্ত্রীয় বিধান অনুসারে, মাঘ মাসের শুক্লা পঞ্চমী তিথিতে সরস্বতী পূজা আয়োজিত হয়। তিথিটি শ্রী পঞ্চমী বা বসন্ত পঞ্চমী নামেও পরিচিত।
শাস্ত্র মতে, এদিন দেবীর কাছে বিদ্যার অর্জনের প্রার্থনা করে ভক্তরা। পূজার সময় ভক্তরা প্রিয় দেবীর শ্রীচরণে অঞ্জলি প্রদান করে থাকেন। এছাড়া পুরোহিতের মন্ত্র পড়ার সাথে সাথে উপস্থিত ভক্তরাও সে মন্ত্র মনে মনে পাঠ করতে থাকেন এবং দেবীকে স্মরণ করেন। শাস্ত্রীয় মতে আরো জানা যায়, শ্রীপঞ্চমীর দিন সকালেই সরস্বতী পূজা সম্পন্ন করা যায়। সরস্বতীর পূজা সাধারণ পূজার নিয়মেই হয়।
তবে এতে কয়েকটি সামগ্রীর প্রয়োজন হয়। এরমধ্যে অভ্র-আবীর, আমের মুকূল, দোয়াত- কলম,পলাশ ফুল ও যবের শীষ এবং বাসন্তী রঙের গাঁদা ফুল অন্যতম। লোকাচার অনুসারে এদিন ছাত্রছাত্রীরা পূজার আগে কুল বড়ই খান না। পূজার দিন কিছু লেখা এবং বই পড়াও নিষিদ্ধ। পূজার পর লক্ষ্মী, নারায়ণ, লেখনী-মস্যাধার (দোয়াত-কলম), পুস্তক ও বাদ্যযন্ত্রের পূজা করার প্রথা প্রচলিত রয়েছে।
কুড়িগ্রাম শনি মন্দিরের পুরোহিত শ্রী নিতু ঠাকুর বিপ্লব চন্দ্র ঠাকুর জানান, আজকে পঞ্চমী তিথিতে শুরু হয়ে বিদ্যার দেবী সরস্বতী পূজা সকাল থেকে বিকাল পৌনে ৫ টা পর্যন্ত চলবে। এর মধ্যে জেলাজুড়ে বিভিন্ন স্থানে বীণাপানির আরাধনার মধ্য দিয়ে শেষ সরস্বতী পূজা অর্চনা।
এএজেড