বিচারকের সঙ্গে দুর্ব্যবহার, ৩ আইনজীবীকে হাইকোর্টে তলব

আদালতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি ও বিচারকের সঙ্গে দুর্ব্যবহারের অভিযোগ ব্যাখ্যা দিতে নীলফামারী জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি মো. মমতাজুল হক, আইনজীবী মো. আজহারুল ইসলাম ও আইনজীবী ফেরদৌস আলমকে তলব করেছেন হাইকোর্ট। আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি তাদের স্বশরীর আদালতে হাজির হয়ে এর কারন ব্যাখা দিতে বলা হয়েছে। একই সঙ্গে আদালত অবমাননার দায়ে নীলফামারী জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি মো. মমতাজুল হকসহ তিন জন আইনজীবির বিরুদ্ধে কেন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন আদালত।
বুধবার নীলফামারীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১-এর বিচারক (জেলা ও দায়রাজজ) গোলাম সারোয়ারের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ প্রদান করেন।
গত ২৯ নভেম্বর সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল বরাবর নীলফামারীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১-এর বিচারক (জেলা ও দায়রা জজ) গোলাম সারোয়ারের পাঠানো পত্রে বলা হয়, গত ২৮ নভেম্বর আদালতে আত্মসমর্পণকারী আসামি হাছিনা বেগমের আত্মসমর্পণ করে জামিন শুনানি, আসামি আইনুল হকের জামিনের মেয়াদ বর্ধিতকরণ এবং হাজতি আসামি হাছানের জামিন শুনানির জন্য ছিল।
আমি পুলিশ রিপোর্ট, চিকিৎসা সনদ পর্যবেক্ষণ করে এবং আদালতে উপস্থিত ভুক্তভোগী মারুফাকে পরীক্ষা অঙ্কে হাজতি আসামির জামিন নামঞ্জুর করি এবং অপরাপর আসামিদের জামিন আবেদন এবং মেয়াদ বর্ধিতকরণ আবেদন নামঞ্জুর করে জেলহাজতে প্রেরণের নির্দেশ প্রদান করি।
এই আদেশ ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গেই অত্র মামলার নিয়োজিত আইনজীবী মমতাজুল হক, আইনজীবী মো. আজাহারুল ইসলাম, আইনজীবী ফেরদৌস আলমসহ তাদের অপরাপর সহযোগী আইনজীবীরা অত্যন্ত মারমুখী হয়ে আক্রমণাত্মক ভঙ্গিতে এজলাসের টেবিল চাপড়ে বিকট শব্দে আমার প্রতি বিরূপ উক্তি উচ্চারণ করে হামলা করার প্রয়াস চালান।
তারা হুমকি দিয়ে বলেন, জামিন দিয়ে নেমে যা, সরি বল, চাকরি করার দরকার নাই, বাড়ি গিয়ে বসে থাক, কোথা থেকে পড়াশোনা করেছ, আইনকানুন জানো না, নীলফামারীর বার খুবই ভয়ংকর, এর আগে অনেক বিচারককে পিটিয়ে এখান থেকে তাড়িয়েছি, কোথা থেকে এসেছ, এসেই উল্টাপাল্টা আদেশ দাও।
এই পরিস্থিতিতে এজলাসের অবস্থা বেগতিক দেখে আমি তাদের সাথে কোনোরূপ তর্কে না জড়িয়ে তাৎক্ষণিকভাবে এজলাসের কার্যক্রম মুলতবি রেখে আমার খাসকামরায় চলে যাই। সেখানে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করি। এ সময়ও বার সভাপতি আইনজীবী মমতাজুল হক, সহসভাপতি আইনজীবী মো. আজাহারুল ইসলাম এবং আইনজীবী ফেরদৌস আলম আমাকে জঘন্য ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকেন।
উপস্থিত আইনজীবীদের নিয়ে যে আচরণ করেছেন, তাতে আমি বাংলাদেশ বিচার বিভাগের অধস্তন আদালতের সর্বোচ্চ পদে আসীন হিসেবে হতাশ, বাকরুদ্ধ, মর্মাহত, লাঞ্ছিত ও অপমানিত হয়েছি। এ ঘটনার কারণে আমিসহ এই জেলার অন্য বিজ্ঞ বিচারকগণ নিরাপত্তাহীনতাসহ লাঞ্ছিত হওয়ার আশঙ্কাবোধ করছি। এ অবস্থায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য মহোদয়ের সদয় মর্জি হয়।
তার আবেদনের প্রেক্ষিত মহামাণ্য হাইকোর্ট আজ এই সিদ্ধান্ত জানায়। এ ব্যাপারে জানার জন্য নীলফামারী বারের সভাপতি এ্যাডঃ মমতাজুল হকের সাথে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও ফোন রিসিভ না করায় তার মন্তব্য জানা যায়নি। অপরদিকে এ্যাডঃ আজহারুল ইসলাম এ বিষয়ে কোন মন্তব্য করবেন না বলে জানান।
এএজেড
