মাদকসেবীদের আখড়া, কাজে আসছে না যাত্রী ছাউনি
ঠাকুরগাঁওয়ের আঞ্চলিক সড়কগুলোর পাশে নির্মিত অধিকাংশ যাত্রী ছাউনি এখন কোনো কাজেই আসছে না। প্রকল্পের মাধ্যমে সরকারের লাখ লাখ টাকা ব্যয় করা হলেও মুখ থুবরে পড়ে আছে নির্মিত এসব যাত্রী ছাউনি। তবে মাদকসেবীদের আড্ডা ছাড়া কোনো কাজে আসছে না বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।
স্থানীয় সরকার ও জেলা পরিষদ জানিয়েছে, আন্তঃ জেলায় প্রকল্পের মাধ্যমে স্থানীয় সরকারের আওতায় ২০১৬ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত ৪৮ লাখ ৬৪ হাজার টাকায় ২৯টি ও জেলা পরিষদের আওতায় ২০০০ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত সাড়ে চৌদ্দ লাখ টাকায় ১৮টি সর্বমোট ৪৭টি যাত্রী ছাউনি বাস্তবায়ন করা হয়েছে।
জানা যায়, সাধারণ মানুষের সুবিধার্থে ঠাকুরগাঁও জেলার অভ্যন্তরীণ প্রতিটি সড়কের পাশে প্রকল্পের মাধ্যমে জেলা পরিষদ ও ইউনিয়ন পরিষদ কর্তৃপক্ষ যাত্রী ছাউনি নির্মাণ বাস্তবায়ন করেন। কিন্তু কয়েক বছর ধরে তিন চাকার যানবাহনের দাপটে গড়েয়া, রুহিয়া, লাহিড়ী, ভাউলারহাট, বালিয়াডাঙ্গীসহ বেশকিছু আঞ্চলিক সড়কে যাত্রীবাহী বাস চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এরপরও এসব সড়কের পাশে প্রতি বছর গড়ে তোলা হচ্ছে যাত্রী ছাউনি। যা এখন আর কোনো কাজেই আসছে না। সুবিধামত স্থান থেকেই তিন চাকার যানবাহন ইজিবাইক, পাগলু, অটোরিকশাযোগে গন্তব্যে পৌঁছাতে পারছেন সাধারণ যাত্রীরা। ফলে রোদ, বৃস্টি এবং দুর্যোগ সহনীয় নির্মিত এসব যাত্রী ছাউনি মুখ থুবরে পড়ে আছে। সরকারের এসব স্থাপনা দেখভালের অভাবে নস্টও হচ্ছে। পরিণত হয়েছে নেশাখোরদের আড্ডা খানায়।
সরেজমিনে দেখা যায়, অযত্নে-অবহেলায় পড়ে আছে জেলার বেশির ভাগ যাত্রী ছাউনি। ঠাকুরগাঁওয়ে ৪৭টি যাত্রী ছাউনি থাকলেও বেশির ভাগই ব্যবহার করার পর্যায়ে নেই। মাদকসেবী, ভিক্ষুক ও ভবঘুরেদের দখলে রয়েছে অনেক যাত্রী ছাউনি। অন্যগুলোর মেঝেও ভাঙা। কোনোটির বসার জায়গা ধুলাবালিতে একাকার হয়ে আছে। কিছু যাত্রী ছাউনি দেখে বোঝার উপায় নেই যে সেখানে কখনো বসার ব্যবস্থা ছিল। যাত্রীদের জন্য বর্ষায় বৃষ্টি আর রোদ থেকে রক্ষা পেতে স্থানীয় সরকার ও জেলা পরিষদের তত্ত্বাবধানে থাকা যাত্রী ছাউনিগুলো ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে অনেক আগেই।
স্থানীয়দের অভিযোগ, আন্তঃ জেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি যাত্রী ছাউনি সদরের আকচা ইউনিয়নে, যা কোনো কাজে আসছে না। প্রকল্প বাস্তবায়ন করে বেশ কিছু অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও ঠিকাদার সুব্রত কুমার বর্মন। সরকারের লাখ লাখ টাকায় নির্মিত যাত্রী ছাউনিগুলো ব্যবহার হচ্ছে না। এ ছাড়াও অন্যান্য আন্তঃ সড়কেও নির্মিত ছাউনিগুলো অবস্থা একই। অপরিকল্পিতভাবে যাত্রী ছাউনি গড়ে তোলার কারণে সরকারের অর্থ অপচয় হচ্ছে বলে জানান তারা।
রুবেল ইসলাম নামে এক গাড়ি চালক জানান, সড়কগুলোতে নির্দিষ্ট স্টপেজ করা থাকলেও যাত্রীরা তাদের সুবিধামত স্থানে উঠতে-নামতে চায়। ফলে যাত্রীরা যেখানে বলে সেখানে গাড়ি থামে। সব যাত্রী নির্দিষ্ট স্টপেজে অপেক্ষা করলে চালকরা বাধ্য হয়ে ওই জায়গায় গাড়ি থামাবে।
তিনি স্বীকার করেন, মহাসড়কের ওপর যাত্রী উঠা-নামা করাতে গিয়ে বিভিন্ন সমস্যার সৃষ্টি হয়। অনেক সময় অনাকাঙ্খিত দুর্ঘটনাও ঘটছে ।
এ ব্যাপারে ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক কার্যালয়, স্থানীয় সরকারের ডিস্ট্রিক্ট ফ্যাসিলিটেটর শফিকুল আলম ঢাকাপ্রকাশ-কে জানান, সাধারণ যাত্রীদের সুবিধার্থে সংশ্লিস্ট জনপ্রতিনিধিদের চাহিদার কারণেই এসব যাত্রী ছাউনি বাস্তবায়ন করা হয়েছে। এখানে কাজ যেন সঠিকভাবে বাস্তবায়ন হয় সেই বিষয়ে তদারকি করার দায়িত্ব আমাদের।
এসআইএইচ