হত্যাচেষ্টার মামলা তুলে নিতে বাদীকে ধর্ষণের হুমকি!
আদালত থেকে জামিনে এসে মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইরে এক আওয়ামী লীগ নেতাকে হত্যাচেষ্টার মামলা তুলে নিতে বাদীকে ধর্ষণ ও তার শিশুসন্তানকে অপহরণের হুমকি দিচ্ছে আসামিরা। এমন অভিযোগ হত্যাচেষ্টার শিকার উপজেলার চান্দহর ইউনিয়নের ৯ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মালেকের মেয়ে (মামলার বাদী) রানু আক্তারের। এঘটনায় জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে মানিকগঞ্জ সদর ও সিঙ্গাইর থানায় পৃথক দুটি অভিযোগ ও সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়েছে।
মামলার অভিযোগ ও স্থানীয় একাধিক সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার চান্দহর ইউনিয়নের ৯ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক চর মূলবর্গ গ্রামের আব্দুল মালেকের সঙ্গে প্রতিবেশি সাইদুর রহমানের দীর্ঘদিন ধরে জমি নিয়ে বিরোধ চলে আসছে। এনিয়ে এলাকায় একাধিকবার সালিশী বৈঠক হয়। কিন্তু কোনো সুরাহা হয়নি। গত ১১ জানুয়ারি ভাড়াটে সন্ত্রাসী নিয়ে বিরোধপূর্ণ জমি দখলে নেওয়ার চেষ্টা করে সাইদুর রহমান। বাধা দিলে অস্ত্রসস্ত্র ও লাঠিশোঠা নিয়ে আব্দুল মালেককে মারধর করতে উদ্যত হয় তারা।
এসময় জাতীয় জরুরী নম্বর ৯৯৯ ফোন দিয়ে পুলিশের সহযোগিতা চান আব্দুল মালেক। ৯৯৯ থেকে ফোন পেয়ে ঘটনাস্থলে যান স্থানীয় শান্তিপুর তদন্ত কেন্দ্রের পুলিশ। উভয়পক্ষের সম্মতিতে ১৫ জানুয়ারী স্থানীয় ভাবে বসে বিষয়টি মিমাংসা কথা বলে চলে আসে পুলিশ। এরই মধ্যে গত ১৩ জানুয়ারী রাত সাড়ে সাতটার দিকে ধারালো অস্ত্রসস্ত্র ও লাঠিশোঠা দিয়ে পিটিয়ে আব্দুল মালেককে হত্যাচেষ্টা চালায় সাইদুর রহমান ও তার ভাড়াটে সন্ত্রাসীরা। তখন আশপাশের লোকজন এগিয়ে আসলে হামলাকারীরা পালিয়ে যায়।
ধারালো অস্ত্র ও লাঠিশোঠার আঁঘাতে আব্দুল মালেকের মাথা ফেটে যায় ও পুরো শরীর রক্তাক্ত জখম হয়। মুমূর্ষু অবস্থায় তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখান থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। বর্তমান তিনি সেখানে চিকিৎসাধীন রয়েছে। তার মাথায় ২৫ টি সেলাই দেওয়া হয়েছে বলে জানান স্বজনরা।
এঘটনায় ১৬ জানুয়ারি চর মূলবর্গ গ্রামের মৃত রহমত আলীর ছেলে সাইদুর রহমান (৪০), মৃত কদম আলীর ছেলে আবুল হোসেন (৪০) মিজানুর রহমানের ছেলে সিয়াম রহমান (২২), মৃত জাকির মাস্টারের ছেলে লিংকন (২৩), আশরাফ আলীর ছেলে রিয়াজুল ইসলাম (৩২), সাভারের ফুলবাড়িয়া গ্রামের নাছির উদ্দীনের ছেলে হাসান (২৫) ও ঢাকার নবাবগঞ্জের মেলেং গ্রামের আনোয়ার হেসেনের ছেলে ইরফানসহ (২২) অজ্ঞাতনামা আরও ৩-৪ জনকে আসামি করে থানায় হত্যাচেষ্টার মামলা করেন আব্দুল মালেকের মেয়ে রানু আক্তার।
রানু আক্তার বলেন, সম্প্রতি মানিকগঞ্জ ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আত্মসমর্পন করে জামিন পান আসামি লিংকন, রিয়াজুল, হাসান ও ইরফান। জামিন পাওয়ার পরপরই বিচারকের এজলাস থেকে নেমে আদালতের বারান্দায় আমাকে হুমকি দামকি ও মামলা তুলে নিতে চাপ দেন তারা। রাজি না হওয়ায় আমাকে ধর্ষণ ও এসিড মেরে মুখ ঝলসে দেওয়ার এবং আমার শিশুসন্তানকে অপহরণ করার হুমকি দেওয়া হয়। এছড়া প্রতিদিনই দলবল নিয়ে অস্ত্রসস্ত্রে সজ্জিত হয়ে মটরসাইকেলে করে আমাদের বাড়ির সামনে মহড়া দেয় আসামিরা। তাদের হুমকি দামকিতে প্রাণভয়ে বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছি আমরা।
এমতাবস্থায় জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে মানিকগঞ্জ সদর ও সিঙ্গাইর থানায় পৃথক দুটি অভিযোগ ও সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছি। এখন আমাদের প্রতিটি মুহুর্ত চরম নিরাপত্তাহীনতায় কাটছে। পুলিশ প্রশাসনের প্রতি মামলার সকল আসামিদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনার দাবি করছি। অন্যথায় জানমালের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কার কথা জানান মামলার বাদী রানু আক্তার।
এবিষয়ে জানতে হত্যাচেষ্টা মামলার এক নম্বর আসামি সাইদুর রহমানের ব্যবহৃত মোবাইল ফোন করা হয়। ফোন রিসিভ করে তিনি নিজেকে গ্রাম পুলিশ দাবি করে ফোন রেখে দেন। এরপর একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। এছাড়া আবুল হোসেন ও সিয়াম রহমানসহ অন্যান্য আসামিদের মোবাইলে ফোন করা হয়। কিন্তু তারা ফোন বন্ধ করে রাখায় কারো সঙ্গে এ ব্যাপারে কথা বলা সম্ভব হয়নি।
সিঙ্গাইর থানার পুলিশ পরিদর্শক (ওসি) সফিকুল ইসলাম মোল্যা বলেন, মামলা তুলে নিতে বাদীকে হুমকি দেওয়ার ঘটনায় আসামিদের বিরুদ্ধে থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছে বাদী রানু আক্তার। ঘটনার সত্যতা সাপেক্ষে আসামিদের জামিন বাতিলের আবেদন করা হবে। এছাড়া তাদের গ্রেপ্তারেরও চেষ্টাও চলছে বলে জানান তিনি।
এএজেড