পলিথিন থেকে জ্বালানি তেল গ্রিন ওয়েলের উৎপাদন শুরু
পরিবেশের জন্য ভয়াবহ হুমকি হয়ে ওঠা প্লাস্টিক বর্জ্য থেকে তেল উৎপাদন করতে ফেনীতে ফুয়েল রিকোভারী পলিথিন রিডিউজ পাইরোলাইসিস প্ল্যান্ট স্থাপন করা হয়েছে। ৫০০ কেজি পলিথিন থেকে ২০০ লিটার গ্রিন ওয়েল উৎপাদন হচ্ছে ফলে পরিবেশের জন্য ভয়াবহ হুমকি পলিথিন হয়ে উঠছে জ্বালানি তেল। ফেনী শহরের সুলতানপুর এলাকায় স্থাপিত এ প্রতিষ্ঠানে পরীক্ষামূলকভাবে উৎপাদন শুরু করেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ভূঁইয়া ট্রেডিং ইন্টারন্যাশনাল।
সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রতিবছর দেশে যে বিপুল পরিমাণ প্লাস্টিক বর্জ্য তৈরি হচ্ছে সেটি থেকে উৎপাদিত জ্বালানি তেল গৃহস্থালি ছাড়াও ব্যবহার করা যাবে কারখানায়। বন, পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন করতে পরিবেশ অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধানে ফুয়েল রিকোভারী প্রতিষ্ঠান করতে সহযোগিতা করে ফেনী পৌরসভা।
গৃহস্থালির ব্যবহৃত প্লাস্টিক খালি বোতল, ব্রাশ, প্রসাধনীর খালী প্যাকেট, খাদ্যদ্রব্যের মোড়কের প্যাকেট, স্যালাইনের প্যাকেট, পানির খালি বোতল, কোমল পানীয় বোতল, বাসা-বাড়ীতে বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের অপচনশীল প্লাস্টিক দ্রব্য মেশিনে দিয়ে তেল উৎপাদন করা হবে।
সূত্র আরও জানায়, জৈব সার উৎপাদন কেন্দ্রের পাশে বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্টের অর্থায়নে ১১ লাখ ১৫ হাজার ৯০৮ টাকা ব্যয়ে গত ৪ মাস আগে পলিথিন রিডিউজ পাইরোলাইসিস মেশিন স্থাপন করা হয়। আর এ মেশিনে পলিথিন রিডিউজ করা হলে এখান থেকে গ্রিন ওয়েল নামের একধরনের জ্বালানি তেল উৎপাদন হবে। যা জ্বালানি ও বিভিন্ন সড়ক উন্নয়ন কাজে ব্যবহৃত হয় বলে জানিয়েছেন ভূইয়া ট্রেডিং ইন্টারন্যাশনাল কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও কনসালটেন্ট ইঞ্জিনিয়ার মো: আলমগীর হোসাইন।
তিনি জানান, আগামী ৩ বছরের জন্য এ প্রজেক্ট পরিচালনা করবেন। এ মেশিনে রিয়েক্টর, এয়ারব্যাগ, কুলিং সিস্টেম, ড্রাপটিং সিস্টেম, গিয়ার বক্স, গ্যাস ওয়াটার, ওয়েল ট্যাংক, প্রেসার গ্রেস, টেম্পারেচার মিটার, ইমারজেন্সি ভার সহ মোট ১১টি যন্ত্রের মাধ্যমে কোনপ্রকার ধোঁয়া ও বায়ুদূষণ ছাড়া পলিথিনকে রিডিউজ করে বাস্পের সাহায্যে পাইরোলাইসিস প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তেল উৎপাদন করা হবে।
এ মেশিনটি চালাতে সর্বমোট ১০ জন অপারেটর প্রয়োজন। তবে পরীক্ষামূলক উৎপাদনে আমরা ১ জন অপারেটর, ১ জন ম্যানেজার, ২ এসিস্ট্যান্ট দিয়ে প্রক্রিয়া শুরু করেছি। এখানে চাহিদামত পলিথিন সংগ্রহ হলে রিসাইক্লিনের ও রিডিউজের মাধ্যমে পাইরোলাইসিস করে প্রতিদিন ৫০০ কেজি পলিথিন থেকে ২০০ লিটার গ্রীন ওয়েল তেল উৎপাদন করা সম্ভব হবে।
আলমগীর হোসাইন আরও জানান, পরিবেশ অধিদপ্তর ও পৌরসভা তথা পৌরসভার নাগরিকদের সর্বাত্মক সহযোগিতা পেলে ফেনী জেলা বন পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তনের অগ্রণী ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। এজন্য তিনি সবার সহযোগিতা কামনা করেন।
ফেনীস্থ পরিবেশ অধিদপ্তরের সিনিয়র কেমিস্ট তানভীর আহমেদ জানান, ফেনী পৌরসভার সাথে চুক্তিবদ্ধ পরিবেশ উন্নয়ন সংস্থা অরবিট হেলথ এন্ড এনভায়রমেন্ট ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন। যদি ঠিকমত হাসপাতাল ও গৃহস্থালি বর্জ্যের পলিথিন ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ভূইয়া ট্রেডিং ইন্টারন্যাশনালকে সাপ্লাই দিতে পারে তা হলে সরকারের ভিশন বাস্তবায়ন হবে।
ফেনীস্থ পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোসাম্মৎ শওকত আরা কলি বলেন, পলিথিন রিডিউজ করে পাইরোলাইসিস প্রক্রিয়া তেল উৎপাদন করলে একদিকে পরিবেশ রক্ষা হবে অন্যদিকে তেল উৎপাদনে আয় বাড়বে। এ প্ল্যান যেসকল জেলায় স্থাপন করা হয়েছে সেখানে পরিবেশের আমূল পরিবর্তন হবে।
এজন্য শুধু শহর নয় গ্রামের হাট-বাজার, বাসাবাড়ীতে ব্যবহৃত পলিথিন, প্লাস্টিকের খালি বোতলসহ অপচনশীল দ্রব্য নির্দিষ্ট স্থানে জমিয়ে রেখে তা পৌরসভার মাধ্যমে প্লান্টে পাঠানো উত্তম। এতে যেমনি তেল উৎপাদন হবে কিছু মানুষের কর্মেরও ব্যবস্থা হবে। এর ফলে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা হবে।
ফেনী পৌরসভার মেয়র নজরুল ইসলাম স্বপন মিয়াজী বলেন, পলিথিন প্রক্রিয়া করে তেল উৎপাদন করলে একদিকে পরিবেশ রক্ষা হবে অন্যদিকে তেল উৎপাদনে আয় বাড়বে ও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হবে।
এএজেড