শিক্ষক পেটানো সেই আওয়ামী লীগ নেতাকে অব্যাহতি
কুড়িগ্রামের রৌমারীতে ফুলকারচর নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. নুরুন্নবীকে তুলে নিয়ে পেটানোর ঘটনায় উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা রোকনুজ্জামান রোকনকে উপজেলা আওয়ামী লীগের সব পদ-পদবী থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
শনিবার (২১ জানুয়ারি) রাত ৯টার দিকে রৌমারী প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলন করে ওই নেতাকে অব্যাহতি দেয় উপজেলা আওয়ামী লীগ।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য তুলে ধরেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু হোরায়রা। তিনি বলেন, গত ১৯ জানুয়ারি উপজেলার ফুলকারচর নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. নুরুন্নবীকে মারধর করেন উপজেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক রোকনুজ্জামান রোকন। ঘটনাটি বিভিন্ন মিডিয়ায় ফোলাও করে প্রচার হয়। এতে দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়। ফলে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ ও সংগঠনবিরোধী কর্মকাণ্ডের অভিযোগে জেলা আওয়ামী লীগের নির্দেশে রোকনুজ্জামান রোকনকে উপজেলা আওয়ামী লীগের সব পদ-পদবী থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন রৌমারী উপজেলা আওয়ামী লীগের আইনবিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট ফেরদৌস আল মাহমুদ পলাশ, সহ-দপ্তর সম্পাদক সুমন মিয়া, সাবেক দপ্তর সম্পাদক রমেশ চন্দ্র সাহা চন্দন, সাবেক সহ-দপ্তর সম্পাদক মশিউর রহমান, উপজেলা যুবলীগের সভাপতি হারুনর রশিদ, যুবলীগের সাবেক সহ-সভাপতি ফজলুল করিম, দাঁতভাঙ্গা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম প্রমুখ।
উল্লেখ্য, গত ১৯ জানুয়ারি দুপুরে শিক্ষা অফিসে যান ফুলকারচর নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নুরুন্নবী ও তার বিদ্যালয়ের অফিস সহকারী আব্দুর রশিদ। কাজ শেষে শিক্ষা অফিস থেকে নিচে নামার সঙ্গে সঙ্গে উপজেলা চত্বর থেকে উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতা রোকনুজ্জামান রোকন ও তার লোকজন ওই প্রধান শিক্ষককে তুলে নিয়ে যান। প্রথমে তাকে উপজেলা চত্বরের পাশেই পলি পরিবহনের বাস কাউন্টারে নিয়ে আটকে রাখা হয় এবং প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হয়।
কিছুক্ষণ পর সেখান থেকে মোটরসাইকেলে করে ওই প্রধান শিক্ষককে নিয়ে যাওয়া হয় রৌমারী সিজি জামান উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু হোরায়রার বিদ্যালয়ের অফিস কক্ষে। সেখানে ঘটনা খুলে বলতে থাকেন ভুক্তভোগী প্রধান শিক্ষক নুরুন্নবী। এসময় আওয়ামী লীগ নেতা রোকনুজ্জামান হঠাৎ ক্ষিপ্ত হয়ে তার গালে এলোপাতাড়ি চড়-থাপ্পর ও কিল ঘুষি মারতে থাকেন। তা দেখে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক দ্রুত চেয়ার থেকে উঠে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন এবং ওই আওয়ামী লীগ নেতাকে অফিস কক্ষ থেকে বের করে দেন। পরে আহত প্রধান শিক্ষককে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। ওইদিন রাতেই ভুক্তভোগী প্রধান শিক্ষক বাদী হয়ে রোকনুজ্জামান রোকনসহ দুইজনের নাম উল্লেখ করে থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দেন।
ওই প্রধান শিক্ষককে মারধরের সিসিটিভির একটি ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে এ নিয়ে শিক্ষক সমাজের ক্ষোভসহ সারা দেশে সমালোচনার সৃষ্টি হয়। এ ঘটনায় শনিবার বিকালে ওই আওয়ামী লীগ নেতা রোকনুজ্জামানসহ দুইজনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও ১০-১২ জনকে আসামি করে থানায় একটি মামলা হয়।
এসজি