কুড়িগ্রামে শিক্ষক পেটানোর ঘটনায় মামলা
কুড়িগ্রামের রৌমারীতে একটি নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগের ঘটনায় ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে ধরে নিয়ে গিয়ে দুই দফায় নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে রৌমারী উপজেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক রোকনুজ্জামান রোকনের বিরুদ্ধে। সিসি ক্যামেরায় ধারণ করা এই দৃশ্য ছড়িয়ে পড়লে জেলাজুড়ে শুরু হয় আলোচনা-সমালোচনা। এদিকে নির্যাতনকারীর বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন রৌমারী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু হোরায়রা।
ঘটনার নেপথ্যে জানা যায়, কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলার ফুলকারচর নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. নুরুন্নবীর সঙ্গে ওই স্কুলের সহকারি শিক্ষক আসাদুল ইসলামের প্রধান শিক্ষক পদ এবং শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে দ্বন্দ্ব ছিল। এরই জের ধরে রৌমারী উপজেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক রোকনুজ্জামান রোকন ও আসাদুল ইসলাম প্রধান শিক্ষক নুরুন্নবীকে হেনস্তা করার পরিকল্পনা করেন। পরিকল্পনা মোতাবেক গত ১৯ জানুয়ারি বিকালে প্রধান শিক্ষক নুরুন্নবী অফিসিয়াল কাজে রৌমারী উপজেলা মাধ্যমিক অফিসে কাজ শেষে বেরিয়ে আসার পর রোকনুজ্জামান ও আসাদুল ইসলামসহ ১০/১২ জন সন্ত্রাসী তাকে ধরে নিয়ে যায় পার্শ্ববর্তী পলি বাস কাউন্টারে। সেখানে এক দফা নির্যাতনের পর তাকে রৌমারী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও রৌমারী সিজি জামান উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবু হোরায়রার কক্ষে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে রোকনুজ্জামান সবার সামনে এলোপাথারিভাবে চড়-থাপ্পর ও কিল ঘুষি মারেন । সিসি ক্যামেরায় ধারণ করা এ দৃশ্য ছড়িয়ে পড়লে জেলাজুড়ে শুরু হয় আলোচনা-সমালোচনার ঝড়।
পরে এ ঘটনায় উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা রোকনুজ্জামান রোকনসহ সহকারি শিক্ষক আসাদুল ইসলাম এবং আরও অজ্ঞাত ১২ জনকে আসামি করে রৌমারী থানায় একটি মামলা করেন। ভুক্তভোগী শিক্ষক নিজে বাদী হয়ে এই মামলা করেন। শনিবার (২১ জানুয়ারি) বিকালে মামলাটি রুজু হয়। এর আগে বৃহস্পতিবার রাতে ভুক্তভাগী ওই শিক্ষক একটি লিখিত অভিযোগ দেন রৌমারী থানায়।
আসামিরা হলেন-উপজেলার চরশৌলমারী ইউনিয়নের পাখিউড়া গ্রামের আজমত আলীর ছেলে রোকনুজ্জামান রোকন। তিনি সদ্য ঘোষিত আংশিক কমিটির রৌমারী উপজেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক। এ ছাড়াও এই মামলায় একই ইউনিয়নর ফুলকারচর গ্রামের মৃত আকায়েত উল্লাহর ছেলে আসাদুল ইসলাম (৪৭)কে আসামি করা হয়েছে।
মামলা দায়েরের বিষয়টি নিশ্চিত করে রৌমারী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) রুপকমুার জানান, প্রধান শিক্ষককে পেটানোর ঘটনায় রোকনুজ্জামান রোকনসহ দুইজনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত আরও ১০ থেকে ১২ জনকে আসামি করে একটি মামলা হয়েছে। মামলার বাদী ভুক্তভোগী প্রধান শিক্ষক নুরুন্নবী। আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
এদিকে এ ঘটনায় নিজের দোষ অস্বীকার করে রৌমারী উপজেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক রোকনুজ্জামান রোকন জানান, আমাকে দালাল বলায় আমি ক্ষিপ্ত হয়ে প্রধান শিক্ষককে মারতে যাই। এ নিয়ে আমাকে আওয়ামী লীগ সেক্রেটারী জুতা পেটা করেছেন।
জানা গেছে, নির্যাতনের শিকার মো. নুরুন্নবী উপজেলার ফুলকারচর নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। তিনি চরশৌলমারী ইউনিয়নের চরশৌলমারী গ্রামের মোংলা মিয়ার ছেলে।
এ বিষয়ে প্রধান শিক্ষক নুরুন্নবী জানান, স্কুলের কাজের জন্য আমি উপজেলা মাধ্যমিক অফিসে আসি। সেখান থেকে নামার পর আমাকে ১০/১২ জন গুন্ডা ধরে নিয়ে যায়। তারা আমাকে দুই দফায় মারধর করে। পরে আমি থানায় গিয়ে দুইজনের নামে মামলা দায়ের করি। স্কুলে সহকারি শিক্ষক আসাদুল ইসলামের সঙ্গে দ্বন্দ্ব চলে আসছিল বলে স্বীকার করেন তিনি।
এ ব্যাপারে রৌমারী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও রৌমারী সিজি জামান উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আবু হোরায়রা জানান, এটি একটি ন্যাক্কারজনক ঘটনা। বিষয়টি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন এমপিকে অবগত করা হয়েছে। তিনি ঢাকায় অবস্থান করছেন। পরের সপ্তাহে এসে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলে আমাকে জানিয়েছেন।
এসআইএইচ