রাঙ্গুনিয়া থেকে মাসে কোটি টাকার বাঁশ পাচার!
বন কর্মকর্তাদের সহায়তায় চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া থেকে প্রতি মাসে পাচার হচ্ছে কোটি টাকার বাঁশ। সমানতালেই চলছে চাঁদাবাজি। বনবিভাগের অন্তত ৩০টি চেকপোস্টকে ম্যানেজ করে দিনরাত চলছে পাচার কার্যক্রম। সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণে বন বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও। অবৈধ বাঁশ পাচার থেকে প্রতি মাসে অন্তত ২০ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে বন কর্মকর্তারা। এতে একদিকে সরকার হারাচ্ছে রাজস্ব। অন্যদিকে উজাড় হচ্ছে সরকারি-বেসরকারিভাবে বনায়নকৃত বাঁশ বাগান।
সরেজমিনে ঘরে দেখা যায়, রাঙ্গুনিয়ার অন্তত সহস্র স্পট থেকে প্রতিনিয়ত উজাড় হচ্ছে সরকারি-বেসরকারিভাবে বনায়নকৃত বাঁশ বাগান। পার্বত্য চট্টগ্রাম ও কাপ্তাইয়ের সংরক্ষিত বনাঞ্চল থেকে এসব বাঁশ পাচার করছে অন্তত ৩০টি সিন্ডিকেট। আর এসব সিন্ডিকেটের অধীনে কাজ করছে অন্তত শতাধিক চোরাই বাঁশ পাচারকারী উপ সিন্ডিকেট। সিন্ডিকেট আর উপ সিন্ডিকেটের হাত দিয়ে কাপ্তাই জেটি ঘাট হয়ে চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় লাখ লাখ বাঁশ পাচার হচ্ছে প্রতিদিন। শুধুমাত্র রাঙ্গুনিয়ায় রয়েছে ১৫টি পাচারকারী সিন্ডিকেট। এরা হচ্ছেন-রাঙ্গুনিয়ার শামসুল, বাবুল, কুদ্দুস, নুরউদ্দিন, সামাদ, ফজল করিম, সানাউল্লাহ, হোসেন মেম্বার, আবদুর রহিম সওদাগর, চাঁনমিয়া, বশর, রেজাউল করিম, হেলাল, বাঁচামিয়া ও মো. বেলাল।
এদিকে রাঙ্গামাটির জেলার কাপ্তাইয়ের ইছামতি, রাঙ্গুনিয়া, পোমরা চেক ষ্টেশন ও কাপ্তাই রাস্তার মাথাসহ বনবিভাগের অন্তত ৩০টি চেকপোস্টের দায়িত্বরতদের ম্যানেজ করে নির্দিষ্ট স্থানে পাচার হয়ে যাচ্ছে কোটি কোটি টাকার বাঁশ। আর এসব অবৈধভাবে বাঁশ পাচারে একমাত্র সড়ক হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে কাপ্তাই আর রাঙ্গামাটি সড়ককে। বহন কাজে ব্যবহার হচ্ছে শত শত ট্রাক। এ ছাড়াও নদীপথে কাপ্তাই নতুন বাজার, কর্নফুলি নদী, ইছামতি নদীর রানীরহাট হয়ে বাঁশের চালি তৈরি করে পাচার করা হচ্ছে লাখ লাখ বাঁশ।
জানা যায়, কাপ্তাই বাঁধের উপর থেকে কর্ণফুলি কাগজ কলের ঠিকাদাররা কাগজ কলে বাঁশ সরবরাহ না করে খোলা বাজারে অবৈধভাবে বিক্রি করে কোটি কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন একাধিক ঠিকাদার। বাঁশ ব্যবসা সহজ ও লাভবান হওয়ায় সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে এই ব্যবসার প্রতি ঝুঁকে পড়েছেন অনেকেই। আর হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে আওয়ামী লীগসহ এর অঙ্গ-সংগঠনের নাম।
আরও জানা যায়, কাপ্তাই জেটির ফরেস্ট ষ্টেশন, রাম পাহাড় বিট, চন্দ্রঘোনা ফরেস্ট স্টেশন, পোমরা চেক ষ্টেশনসহ বিভিন্ন ফরেস্ট চেক ষ্টেশনে বাঁশ ভর্তি প্রতি ট্রাক থেকে ৭০০ থেকে ১ হাজার টাকা হারে চাঁদা নেওয়া হচ্ছে। শুধু তাই নয় ট্রানজিট পাস (টিপি) নিয়ে উপজেলার রাজানগর ইউনিয়নের রানীরহাট বাজার ও কাপ্তাই বাজার থেকে ৪০-৫০টি ট্রাকে করে প্রতিদিন লাখ লাখ বাঁশ দেশের বিভিন্ন স্থানে পরিবহন হচ্ছে। প্রতিটি বাঁশ থেকে সরকার ১৪০০ টাকা রাজস্ব পাচ্ছে। একটি ট্রাকে দেড় থেকে দুই হাজার বাঁশ পরিবহন দেখানো হচ্ছে। অথচ ২ হাজার বাঁশের গাড়িতেও ঝুঁকি নিয়ে নেওয়া হচ্ছে তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার বাঁশ। আর এসব গাড়ি থেকে বন কর্মকর্তা হাতিয়ে নিচ্ছে কমপক্ষে ১ হাজার টাকা হারে। আর সরকার রাজস্ব দেখানো হচ্ছে প্রতি গাড়িতে ১৪০০ থেকে ২০০০ টাকা হারে। এটি হচ্ছে সড়ক পথের চাঁদাবাজির চিত্র।
অন্যদিকে কর্ণফুলী আর ইছামতি নদীপথে পাচারের হিসেব এর তিনগুন বেশি। দিনরাত লাখ লাখ বাঁশ ভেসে যাচ্ছে পানির স্রোতের সঙ্গে। এখানেও চাঁদাবাজির চিত্র লক্ষ্য করা যায়। আর এই চাঁদার পরিমাণও সড়কপথের চেয়ে দ্বিগুণ বেশি। তাই নিদিষ্ট স্পষ্ট বাদ দিয়ে পানিতে ভেসে যাওয়া বাঁশের উপর বেশি নজর থাকে বন কর্মকর্তা-কর্মচারীদের।
রাজানগরের বাঁশ ব্যবসায়ী মো. সানাউল্লাহ জানান, ট্রানজিট পাস (টিপি) নিয়ে বাঁশ সরবরাহ করা হচ্ছে। তবে টিপির চেয়ে বেশি বাঁশ নিলে বন বিভাগ ও স্থানীয় প্রশাসনকে ম্যানেজ করতে হয়।
অবৈধ বাঁশ পাচার থেকে মাসোহারা নেওয়ার কথা অস্বীকার করে রাঙ্গুনিয়ার ইছামতি রেঞ্জের বন কর্মকর্তা সাজ্জাদ হোসেন বলেন, আমি দুই সপ্তাহ আগেই এই রেঞ্জে যোগদান করেছি। আগে কে কী করেছে তা আমার জানা নেই। তবে টিপির বাইরে বাঁশ বোঝাই ট্রাক থেকে অতিরিক্ত কোনো টাকা নেওয়া হয় না। সরকারি রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যে আমরা নদী ও সড়ক পথে বাঁশ পাচার রোধে সজাগ রয়েছি।
এসআইএইচ