হাসপাতালে রোগীর চাপ, মেঝেতেই চিকিৎসা
শীতের প্রকোপ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে বাড়ছে ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। চলতি মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে ২৫০ শয্যা ঠাকুরগাঁও জেনারেল হাসপাতালে প্রতিদিন গড়ে ৩৫০/৪০০জন রোগী ভর্তি থাকছে। অন্যদিকে শয্যা না পাওয়ায় অনেক রোগীকে হাসপাতালের মেঝেতেই চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। গতকাল ১৯ জানুয়ারি জেলার আধুনিক সদর হাসপাতালে গিয়ে দেখা য়ায় এমন দৃশ্য।
ঠাকুরগাঁও আধুনিক হাসপাতালে পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলা থেকে ফারুক ইসলাম ও তার স্ত্রী এসেছেন ১৫ মাস বয়সী শিশুকে নিয়ে। ফারুক ইসলাম বলেন, অতিরিক্ত ঠান্ডার কারণে বেশ কয়েকদিন থেকে বাচ্চাটা অসুস্থ তাই গত ১৫ জানুয়ারি এই হাসপাতালে তাকে ভর্তি করি। এখন সে কিছুটা সুস্থ্য।
ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার সালন্দর ইউনিয়ন থেকে অসুস্থতার জন্য শাহিনা তার ১৫ দিন বয়সী কন্যা খাদিজাকে ভর্তি করান। তিনি বলেন, আমি কাশ ও সর্দিতে আক্রান্ত ও আমার কন্যা নিউমোনিয়া আক্রান্ত। গত ১০ জানুয়ারিতে হাসপাতলে শিশু ওয়ার্ডে তাকে ভর্তি করি কিন্তু রোগীর অতিরিক্ত চাপ থাকায় বেড পাইনি। তাই ফ্লোরে বিছানা করে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে।
দিনাজপুর জেলার বীরগঞ্জ উপজেলার গণপূর্ত গ্রামের সাজেদুল করিম বলেন, আমার আড়াই মাসের ছেলে আবু বক্কর সিদ্দিক। ঠান্ডার কারণে সর্দি ও এলার্জি রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে দুইদিন থেকে ভর্তি আছি।
ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার গড়েয়া ইউনিয়নের শাহানাজ পারভিন নামে এক গৃহবধু বলেন, ৩ দিন থেকে হাসপাতালে ভর্তি আমার ছেলেকে নিয়ে। আগে যদিও শুনেছি এখানকার বেখিয়ালির কথা। তবে এখন আগের থেকে এখানকার চিকিৎসা অনেক ভালো ও উন্নত হয়েছে। তার পরেও এখানে বেডের সমস্যা রয়েই গেছে। বেডের অভাবে অনেক রোগীকে মেঝেতে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে। যদি বেডের সংখ্যা বৃদ্ধি করা হতো তাহলে আমাদের জন্য আরো ভালো হতো।
হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ সিনিয়র কনসালটেন্ট ডাঃ সাজ্জাত হায়দার শহিন বলেন, এই এলাকায় প্রচন্ড শীত হওয়াতে শিশু রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। আমাদের এখানে শিশু ওয়ার্ডে বেডের সংখ্যা ৪৫ জনের হলেও বর্তমানে প্রতিদিন দুই শতাধিক শিশু ভর্তি থাকছে।
এদের মধ্যে সর্দি, কাশি, নিউমোনিয়া, ডায়রিয়ায় আক্রান্ত শিশু রোগীর সংখ্যা অধিক। শীতের সময় বিশেষ করে শিশু ও নবজাতকের ঠিকমতো যত্ন না নেওয়ার ফলে এধরণের সমস্যা হয়ে থাকে। তাই শীতে গরমকাপড়ের ব্যবহার বৃদ্ধিসহ শিশুদের বাড়তি যত্ন নেওয়ার পরামর্শ তার।
আধুনিক সদর হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ডাঃ নাঈম মোঃ মিনহাজ কৌশিক বলেন, হাসপাতালের ধারণ ক্ষমতা ২৫০ জনের হলেও বর্তমানে প্রতিদিন প্রায় ৩৫০-৪০০ জন রোগী ভর্তি থাকছেন। এদের বেশির ভাগ রোগী ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত। রোগীর সংখ্যা বেশি হওয়ায় ডাক্তার ও নার্সদের হিমশিম খেতে হচ্ছে।
এর আগে ১০০ শয্যার হাসপতালে যে জনবল ছিল এখন এটি ২৫০ শয্যায় উন্নিত হলেও শুধু কিছু সংখ্যক আউটসোশিং জনবল বৃদ্ধি করার মধ্য দিয়ে এখানকার কার্যক্রম চলছে। জনবলের ঘাটতি থাকা সত্ত্বেও এবং শীতে অতিরিক্ত রোগীর চাপেও এখানকার চিকিৎসা ব্যবস্থাপত্র স্বাভাবিক আছে। সীমিত সামর্থের মধ্যেই আমরা সর্বোচ্চ সেবা দেওয়ার চেষ্টা করছি।
এএজেড