ধামরাইয়ে বিসিকে ৬৭ প্রতিষ্ঠানের ১৭টিই বন্ধ
ঢাকার ধামরাইয়ের কালামপুর এলাকায় অবস্থিত বিসিক শিল্প নগরীতে প্রথম দফায় বরাদ্দ দেওয়া ৬৭টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১৭টিই বন্ধ রয়েছে। এ ছাড়া সম্প্রসারিত অংশে বিভিন্ন খাতের ৬১টি প্রতিষ্ঠানকে প্লট বরাদ্দ দেওয়া হলেও এর মধ্যে এখনো ১৪টি প্রতিষ্ঠান তাদের লে-আউট পরিকল্পনা জমা দেয়নি।
বিসিক বলছে, এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৮ থেকে ১০টি প্রতিষ্ঠান ইতোমধ্যে তাদের লে-আউট পরিকল্পনা অনুমোদন নিয়ে প্লটে কারখানার অবকাঠামো নির্মাণ শুরু করেছে। এ ছাড়াও উৎপাদনে গিয়েছে একটি প্রতিষ্ঠান। তারা বলছেন, শিগগিরই প্লট বরাদ্দ পাওয়া প্রতিষ্ঠানগুলো উৎপাদনে যেতে পারবে।
১৭ প্রতিষ্ঠান বন্ধ
বিসিক সূত্রে জানায়, ২০০৭ সালে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কসংলগ্ন ধামরাইয়ের কালামপুর এলাকায় ১৯.০১ একর জমিতে বিসিক শিল্প নগরী প্রতিষ্ঠার পর বিভিন্ন খাতের মোট ৭৩টি শিল্প প্রতিষ্ঠানকে প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়। পরে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন কারণে কয়েকটি প্রতিষ্ঠান তাদের প্লট হস্তান্তর করলে টিকে থাকে ৬৭টি প্রতিষ্ঠান। এরপর দেশে করোনা মহামারি শুরু হলে অর্থনৈতিক সংকটের মুখে পড়ে বন্ধ হয়ে যায় আরও ১৭টি শিল্প প্রতিষ্ঠান।
পরে ২০২০ সালে বিসিক কর্তৃপক্ষ ১২.৪৯ একর জমিতে এই শিল্প নগরী সম্প্রসারণে প্রকল্প গ্রহণ করে। এরপর ২০২১ সাল নাগাদ নতুন করে মোট ৬১টি প্রতিষ্ঠানকে দেওয়া হয় প্লট বরাদ্দ। পরিকল্পনা অনুযায়ী এসব প্রতিষ্ঠান চালু হলে নতুন করে ৩ হাজার শ্রমিকের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
নির্মাণকাজই শুরু করেনি দুই প্রতিষ্ঠান
খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, ২০২০ সালে বিসিকের এই শিল্প নগরী নতুন করে সম্প্রসারণ করা হলেও এর পুরাতন অংশের ৭৩টি প্লটের মধ্যে ‘এ’ ক্যাটাগরির ৬ হাজার বর্গ ফুটের দুটি প্লটে এখন অবধী অবকাঠামো নির্মাণকাজ শুরুই করেনি প্লট বরাদ্দ পাওয়া দুটো প্রতিষ্ঠান।
সুদসহ প্রতিষ্ঠান দুটির কাছে প্লটের মূল্য বাবদ বিসিকের বর্তমানে বকেয়া পাওনা রয়েছে মোট ১ কোটি ১৬ লাখ ৩৮ হাজার ৬০০ টাকা। দফায় দফায় চিঠি দিলেও প্লটের নির্মাণকাজ শুরু কিংবা প্লটের বকেয়া কিস্তির এই টাকা পরিশোধ করেনি প্রতিষ্ঠানগুলো।
প্রতিষ্ঠান দুটোর মধ্যে পোশাক খাতের প্রতিষ্ঠান হিসেবে প্লট বরাদ্দ নেওয়া ‘মীনা মালেক ইন্ডাস্ট্রিজ কোম্পানির মালিক ঢাকা-২০ আসনের সাবেক সাংসদ এম এ মালেকের স্ত্রী মীনা মালেক। অপর প্রতিষ্ঠান বীথি ইন্টারন্যাশনালের মালিক মাসুদ রানা নামে এক ব্যক্তি।
বিসিকের নিয়ম অনুযায়ী শিল্প নগরীতে প্লট বরাদ্দ পাওয়ার পর ৩০ দিনের মধ্যে প্লটের অবস্থান বুঝে নেওয়ার পর ৬০ দিনের মধ্যে প্রতিষ্ঠানের লে-আউট পরিকল্পনা জমা দিতে হয়। শর্ত অনুযায়ী লে-আউট পরিকল্পনা অনুমোদনের পরবর্তী ৩০ দিনের মধ্যে কারখানার অবকাঠামো নির্মাণ কাজ শুরু করতে হয় উদ্যোক্তাদের।
কিন্তু প্লট বরাদ্দ পাওয়া মীনা মালেক ইন্ডাস্ট্রিজ কোম্পানি ও বীথি ইন্টারন্যাশনাল এসব শর্তের কোনোটিই প্রতিপালন করেনি।
জানতে চাইলে বিসিক থেকে বরাদ্দ নেওয়া এই প্লটে সুনির্দিষ্টভাবে কী করতে চান সেটি স্পষ্ট করে বলতে পারেননি বীথি ইন্টারন্যাশনালের মালিক মাসুদ রানা।
মাসুদ রানা বলেন, ‘আসলে প্রথমে ভেবেছিলাম গ্যাসভিত্তিক কোনো প্রতিষ্ঠান করা যায় কি না। কিন্তু বিসিকে গ্যাস না থাকায় সেটি আর সম্ভব হয়নি। এখন ভাবছি সেখানে কী করা যায়। হয়তো খুব শিগগিরই সেখানে কিছু একটা শুরু করব।’
অপরদিকে মীনা মালেক ইন্ডাস্ট্রিজ কোম্পানির মালিক মীনা মালেক বলেন, ‘করোনাসহ আসলে বিভিন্ন কারণে এখনো কিছু করা সম্ভব হয়নি। তবে আশা করছি খুব শিগগিরই আমরা প্লটে কাজ শুরু করব।’
বিসিক শিল্পনগরী, ধামরাইয়ের শিল্পনগরী কর্মকর্তা অমিও কুমার সানা বলেন, ‘প্রতিষ্ঠান দুটোকে আমরা বরাবরই বকেয়া পাওয়া পরিশোধসহ ও শর্ত অনুযায়ী প্লটে কাজ শুরুর জন্য চিঠি দিয়ে আসছি। তারা বিভিন্ন সমস্যার কথা জানিয়ে বারবার সময়ক্ষেপণ করছেন। করোনা পরিস্থিতি উন্নত হওয়ার পরেও আমরা তাদের একাধিক চিঠি দিয়েছি, সর্বশেষ তাদের প্লট বাতিল করা হবে বলেও সতর্ক করা হয়েছে। আমরা বিষয়গুলো পর্যবেক্ষণ করছি, প্রতিষ্ঠান দুটো যদি এখনো প্লটে কাজ শুরু করার উদ্যোগ না নেয় সেক্ষেত্রে আমরা তাদের বিরুদ্ধে নিয়মানুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
লে-আউট পরিকল্পনা জমা দেয়নি ১৪ প্রতিষ্ঠান
বিসিক সূত্র বলছে, বিসিকের সম্প্রসারিত অংশে ২০২১ সালে ৬১টি প্রতিষ্ঠানকে প্লট বরাদ্দ দেওয়া হলেও এর মধ্যে ১৪টি প্রতিষ্ঠান কারখানার লে-আউট পরিকল্পনা জমা দেয়নি। বাকি ৪৭টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে কিছু প্রতিষ্ঠান ইতোমধ্যে লে-আউট পরিকল্পনা অনুমোদনের পর কারখানার অবকাঠামো নির্মাণকাজ শুরু করেছে। এ ছাড়া কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের লে-আউট পরিকল্পনা অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে।
বেহাল শিল্প নগরী
এদিকে শিল্প নগরীর প্রতিষ্ঠার পর থেকে এর সড়কগুলো সংস্কার হয়নি। পুরাতন অংশের প্রতিটি সড়কই চলাচলের অনুপযোগী। শিল্প নগরীর উদ্যোক্তারা বলছেন বেশ ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে তাদের। বিশেষ করে বর্ষাকালে এসব সড়ক চলাচলের একদম অনুপযোগী হয়ে পড়ে। এ ছাড়াও শিল্প নগরীর মূল ফটকটিও ভাঙা অবস্থায় রয়েছে দীর্ঘদিন ধরে। যার কারণে একরকম অরক্ষিত অবস্থায় রয়েছে ।
এসব বিষয়ে শিল্প নগরী কর্মকর্তা অমিও কুমার সানা জানান, বরাদ্দ না থাকায় এসব সড়ক ও শিল্প নগরীর মূল ফটক সংস্কার করতে পারছেন না তারা। বিষয়গুলো ইতোমধ্যে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।
এই কর্মকর্তা বলেন, শিল্প নগরীর নতুন অংশের সড়কগুলো ভালো রয়েছে, বরাদ্দ পেলে পুরাতন অংশের সড়কগুলোও সংস্কার করা হবে। তখন এই সমস্যা আর থাকবে না।
এদিকে ফুটওয়্যার খাতের প্রতিষ্ঠান Peoples Footwear and leather goods তাদের প্লটে কারখানার অবকাঠামো নির্মাণকাজ শুরু করার পাশাপাশি প্লটের পাশে অস্থায়ীভাবে কারখানা স্থাপন করেছে। ইতোমধ্যে উৎপাদন কার্যক্রমও শুরু করেছে।
বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটিতে প্রায় ৫০ জন নিয়মিত শ্রমিক কর্মরত। জানিয়ে প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী মো. হাফিজুর রহমান জানান, ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটির বিক্রয় ছিল প্রায় ১ কোটি ২০ লাখ টাকা। এবছর তারা সেই বিক্রয় লক্ষ্যমাত্রা ১ কোটি ৫০ লাখ টাকা নির্ধারণ করেছেন।
শিল্প নগরীতে প্রতিষ্ঠানটির অবকাঠামো নির্মাণকাজ শেষ হলে আগামী জানুয়ারি নাগাদ প্রতিষ্ঠানটিতে নতুন করে আরও অন্তত ১০০ জন শ্রমিকের কর্মসংস্থানের সুযোগ হবে বলে আশা করছেন তারা।
এসএন