বাবা-মাকে হারিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ল ‘রাসেল ও টুম্পা’
রাসেল (১৬) ও টুম্পা (১৫)। বয়সে এক বছরের বড়-ছোট। মা হীরাকে হারিয়েছেন অল্প বয়সে। মাকে হারানোর পর থেকে বাবা সোহেলের সঙ্গে ভালোভাবেই দিন অতিবাহিত করছিলেন। তবে এর মধ্যে নদী নামের এক নারীর সঙ্গে সম্পর্কে জড়ান সোহেল। দীর্ঘদিন সোহেল ও নদী একসঙ্গে জীবনযাপন করলেও গত বছর তিন মাসের ব্যবধানে বার্ধক্যজনিত কারণে সোহেল ও নদী মারা যায়। বাবা-মা’কে হারিয়ে নি:সঙ্গ জীবন অতিবাহিত করছিলেন রাসেল ও টুম্পা। কিন্তু বেশ কয়েকদিন ধরে তারা দুই ভাই-বোন রাসেল ও টুম্পা অসুস্থ হয়ে পড়েন। খাওয়া-দাওয়াও বন্ধ করে দেন। ইতিমধ্যে তাদের চিকিৎসায় মেডিকেল বোর্ডও গঠন করা হয়েছে। তারপরও সুস্থ হয়ে উঠেনি।
এতক্ষণ যাদের কথা বলছিলাম তারা কোন মানবজাতি নয়। তারা কক্সবাজার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কের সিংহ রাসেল ও সিংহী টুম্পা।
পার্ক কর্তৃপক্ষ জানায়, অসুস্থ সিংহ রাসেল ২০০৭ সালের ১৫ অক্টোবর একং সিংহী টুম্পা ২০০৮ সালের ২০ নভেম্বর সাফারি পার্কে জন্মগ্রহণ করেন। বর্তমানে সিংহ রাসেল ১৬ বছর এবং সিংহী টুম্পা ১৫ বছর বয়স অতিক্রম করছে। সিংহরা মূলত ১৬ থেকে ২০ বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকে। বর্তমানে রাসেলের বয়স ১৬ ও টুম্পার বয়স ১৫ অতিক্রম হচ্ছে।
এ বিষয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্ক কক্সবাজারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ফরেষ্টার মাজহারুল ইসলাম বলেন, বর্তমানে পার্কে ৫টি সিংহ রয়েছে। তাদের মধ্যে ২টি সিংহ ও ৩টি সিংহী। গত ১৪ ডিসেম্বর থেকে সিংহ রাসেল ও সিংহী টুম্পা খাবার খাওয়া বন্ধ করে দেয়। বাত, ব্যাথা ও শরীরের বিভিন্ন স্থান অবশ হয়ে যাচ্ছে, দাঁতে ক্ষয় এবং ঘন ঘন প্রস্রাব শুরু করে তারা। এরপর থেকে দুই ভাই-বোনকে বেষ্টনিতে রেখে চিকিৎসা দিয়ে আসছিলেন সাফারি পার্কের ভেটেরিনারি সার্জন ডা. হাতেম সাজ্জাত মো. জুলকার নাইন। মাঝখানে তারা কিছুটা সুস্থ হলেও পরে আবারও অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে তাদের অধিকতর চিকিৎসার জন্য গত ৭ জানুয়ারি বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম চৌধুরীর কাছে চিঠি পাঠানো হয়।
তিনি আরও বলেন, ওই চিঠির প্রেক্ষিতে গত ১৪ জানুয়ারি বিভাগীয় বন কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম চৌধুরী সিংহ রাসেল ও সিংহী টুম্পার চিকিৎসার জন্য পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট একটি মেডিকেল টিম গঠন করেন। এই মেডিকেল টিমের প্রধান করা হয়েছে চট্টগ্রাম ভেটেরিনারী ও এ্যানিমেল সাইসেন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন ও সার্জারী বিশেষজ্ঞ ড.বিবেক চন্দ্র সুত্রধর। পরবর্তীতে রবিবার মেডিকেল টিমের প্রধানসহ পাঁচ সদস্যের টিম কক্সবাজার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কে এসে রাসেল ও টুম্পার পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে চিকিৎসা কার্যক্রম শুরু করেন।
এ ব্যাপারে মেডিকেল টিমের বরাত দিয়ে বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের চট্টগ্রামের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, রাসেল ও টুম্পার জন্য পাঁচ সদস্যের মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়েছে। মেডিকেল টিমের পরামর্শে চিকিৎসা চলছে। চিকিৎসকদের ভাষ্যমতে, মানুষ আর প্রাণীর রোগ অনেকটা একই ধরনের। মানুষের স্বাভাবিক যে রোগগুলো হয় প্রাণীদের ক্ষেত্রেও একই রকম হতে পারে।
তিনি আরও বলেন, চিকিৎসকদের মতে সিংহ রাসেল ও সিংহী টুম্পা গ্যাস্ট্রলোজিকেল সমস্যায় ভুগছে। সেজন্য তারা খাবার খেতে চাচ্ছে না। আশা করি শীঘ্রই সুস্থ হয়ে উঠবে।
এসআইএইচ