আ. লীগ নেতাকে মারধরের পর বাড়িতে ঢুকে গুলি-ভাঙচুর!

নোয়াখালীর চাটখিল উপজেলার খিলপাড়া ইউনিয়নে এক আওয়ামী লীগ নেতাকে তুলে নিয়ে মারধর করার ১৮ দিন পর এবার তার বাড়িতে ঢুকে গুলি ছোড়া ও ভাঙচুর চালানোর অভিযোগ উঠেছে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে খিলপাড়া তদন্ত কেন্দ্রের পুলিশ।
রবিবার (১৫ জানুয়ারি) দিবাগত রাত ২টার দিকে উপজেলার খিলপাড়া ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম মোস্তফার (৫৮) বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে। এর আগে বৃহস্পতিবার (২৯ ডিসেম্বর) সন্ধ্যার দিকে উপজেলার খিলপাড়া বাজারে উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক আহ্বায়ক সালাউদ্দিন সুমনের ব্যক্তিগত অফিসে তাকে তুলে নিয়ে এসে পেটানো হয়।
ভুক্তভোগী আওয়ামী লীগ নেতা গোলাম মোস্তফা অভিযোগ করে বলেন, প্রথম ঘটনার জের ধরে উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক আহ্বায়ক সালাউদ্দিন সুমনের নির্দেশে তার অনুসারীরা এ ঘটনা ঘটিয়েছে।
তিনি আরও বলেন, রবিবার দিবাগত রাত ২টার দিকে ৭-৮ জন দুস্কৃতিকারী তার বাড়িতে প্রবেশ করে সিসি ক্যামেরার লাইন বিচ্ছিন্ন করে সিসি ক্যামেরা ভাঙচুর করে। এক পর্যায়ে তারা বসতঘরের জানালার গ্লাস ভাঙচুর করে ফাঁকা গুলি করে আতঙ্ক সৃষ্টি করে এবং দরজা ভেঙে ঘরে ঢোকার চেষ্টা করে।
খিলপাড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মো.মীর হোসাইন জানান, উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতারা কম্বল বিতরণের জন্য খিলপাড়া ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম মোস্তফা ও সাধারণ সম্পাদককে তথ্য সংগ্রহ করে স্লীপ করতে বলা হয়। তারা দলীয় নেতা-কর্মীর মাঝে এসব কম্বল বিতরণের জন্য তথ্য সংগ্রহ করে স্লীপ তৈরি করছিলেন। এই নিয়ে ছাত্রলীগের সাবেক আহ্বায়ক সালাউদ্দিন সুমন ক্ষুদ্ধ হয়ে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি মোস্তফাকে প্রশ্ন করে তাকে না জানিয়ে কেন কম্বলের স্লীপ তৈরি করা হচ্ছে। কম্বলের স্লীপ নিয়ে বাকবিতণ্ডার জের ধরে গত ২৯ ডিসেম্বর সন্ধ্যার দিকে উপজেলার খিলপাড়া বাজার থেকে সুমন তার দুই অনুসারীতে দিয়ে আওয়ামী লীগ নেতা মোস্তফাকে বাজার থেকে তুলে নিয়ে যায় তার ব্যক্তিগত অফিসে। সেখানে সুমন আওয়ামী লীগ নেতা মোস্তফাকে তার পদ থেকে পদত্যাগ করতে গালমন্দ করে। এক পর্যায়ে সুমন আওয়ামী লীগ নেতা মোস্তফাকে চড়-থাপ্পড় দিয়ে বুকে লাথি মারে এবং বেধড়ক মারধর করে। এতে সে অসুস্থ হয়ে পড়ে। পরে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট হাসপাতালে ভর্তি করে পরিবারের সদস্যরা। চিকিৎসা শেষে ১৩ দিন পর বাড়িতে ফিরলে আগের ঘটনার জের ধরে এবার তার বাড়িতে হামলা-ভাঙচুর ও গুলি চালানো হয়।
খিলপাড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. মীর হোসাইন আরও বলেন, ‘আমি স্থানীয় এমপিসহ বিষয়টি সবাইকে জানিয়েছি। এ ঘটনার উপযুক্ত আইনগত পদক্ষেপ না নেওয়া পর্যন্ত খিলপাড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সকল কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এর আগেও অভিযুক্ত এই যুবক বেশ কয়েকজনের উপর হামলা চালিয়েছে। কিন্তু ঘটনার ১৮ দিন অতিবাহিত হলেও কোনো নেতা হামলার শিকার ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ নেতাকে একবার দেখতে পর্যন্ত আসেনি এবং কোনো বিচার করেনি।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে একাধিকবার উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক আহ্বায়ক সালাউদ্দিন সুমনের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
এ বিষয়ে জানতে চাটখিল উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা চেয়াম্যান মো.জাহাঙ্গীর কবিরের মুঠোফোনে কল করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি। তবে গত ২৯ ডিসেম্বর তিনি মুঠোফোনে জানান, খিলপাড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি তাকে বিষয়টি জানিয়েছে। সাবেক ছাত্রলীগ নেতা সুমনসহ কয়েকজন অন্যায় ভাবে আওয়ামী লীগ নেতাকে মারধর করেছে। এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সুমন বর্তমানে কোনো দলীয় দায়িত্বে নেই। ১০-১২ বছর আগে উপজেলা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক ছিলেন। এমপি সাহেব তাকে গাইড করে।
এ প্রসঙ্গে নোয়াখালী-১ আসনের (চাটখিল-সোনাইমুড়ী) সংসদ সদস্য এইচ এম ইব্রাহিম বলেন, ‘ভুক্তভোগী আওয়ামী লীগ নেতা বিষয়টি আমাকে জানিয়েছিল। একটি গ্রুপ কাজগুলো করাচ্ছে। তদন্ত সাপেক্ষে বের করা হবে কারা এগুলো করাচ্ছে। যারাই করাচ্ছে তারাই কাঁচা কাজ করে ফেলেছে। যে ভিডিও ফুটেজ ধরা পড়েছে ওই ভিডিও ফুটেজে ওদের চেনা যায়। ওরাতো অ্যারেস্ট হয়ে যাবে। অ্যারেস্ট হয়ে গেলে বুঝা যাবে এটা কারা করিয়েছে। আগের ঘটনাকে পাকাপোক্ত করার জন্য এটা করা হইছে। যেহেতু ভিডিও ফুটেজ পাওয়া গেছে চিহ্নিত আসামি যেই হোক তাকে আইনের আওতায় আনার জন্য আমি নির্দেশ দিয়েছি।
এ বিষয়ে খিলপাড়া তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ উপপরিদর্শক (এসআই) মো. কামরুজ্জামান বলেন, রাত ২টার দিকে ভুক্তভোগী আওয়ামী লীগ নেতার মেইন গেইটের তালা ভেঙে ওয়াইফাই লাইন কেটে সিসি টিভির ফুটেজ নিয়ে গেছে এবং উনার ঘরের গ্লাস ভাঙচুর করে। সিসি টিভির ফুটেজে কিছু লোক দেখা যায়। আমরা যাচাই-বাছাই করে শনাক্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ ব্যাপারে চাটখিল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো.গিয়াস উদ্দিন বলেন, তিনি এ বিষয়ে জানেন না। এ বিষয়ে কেউ থানায় অভিযোগ করেনি।
এসআইএইচ
