আগুনে পরিবারসহ সব হারিয়ে নির্বাক খোকন
বাবা কাঙ্গাল বসাক (৭০), মা ললীতা বসাক (৬০), স্ত্রী লাকী বসাক (৩২), ছেলে শৌরভ বসাক (১২) ও মেয়ে শয়ন্তী বসাক (৬)। এদের নিয়েই টানাটানির সংসার সুখেই চলছিল খোকন বসাকের জীবন। খোকন বসাক পেশা একজন অটোরিকশা চালক। এলাকায় খোকন ড্রাইভার নামেই সবাই তাকে চেনে। খোকনের আয়েই চলতো তার সংসার। তিন কক্ষবিশিষ্ট টিনশেডের সেমি পাকা ঘরেই বসবাস করতো সে। কিন্তু বৃহস্পতিবার ভোররাতে মুহুর্তের এক আগুনে পরিবারের সবাইকে হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে ঠাঁই নিয়েছে হাসপাতালের বেড়ে।
আনুমানিক রাত ২ টা, সারাদিন অটো চালিয়ে রাতে অটোরিকশাটি রান্নাঘরের পাশে উঠানে রেখে রাতের খাবার সেরে স্ত্রীকে নিয়ে ঘুমাতে গিয়েছিলেন খোকন। এসময় পাশের একটি কক্ষে মা-বাবা ও অন্য কক্ষে ছোট দুই ছেলে-মেয়ে ঘুমিয়ে পড়ে।
হঠাৎ রাত ২টায় রান্নাঘর থেকে লাগা ভয়াবহ আগুনে ঘরের সকল আসবাবপত্র, নগদ টাকা স্বর্ণালংকার, অটোরিকশাসহ সব কিছু পুড়ে যায়। ওই সময় তড়িঘড়ি করে নিজে বাইরে বের হতে পারলেও পুড়ে অঙ্গার হয়ে না ফেরার দেশে চলে যায় মা-বাবা, স্ত্রী, পুত্র-কন্যা। সঙ্গে সঙ্গে তচনচ হয়ে যায় তার স্বপ্ন। মাত্র ১ ঘণ্টার আগুনের কাছে পরিবার পরিজনসহ সবকিছু হারিয়ে নিঃস্ব ঘোরে নির্বাক হয়ে অর্ধদগ্ধ অবস্থায় হাসপাতালের বেডে শুয়ে আছে হতভাগ্য খোকন। তবে তার অবস্থাও আশংকাজনক।
মর্মান্তিক ঘটনাটি ঘটেছে চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলার ৫নং পারুয়া ইউনিয়নের ৩ নং ওয়ার্ডের মহাজনপাড়া গ্রামে। গ্রামবাসী জানান, ছোট বেলা থেকেই অনেক কষ্ট করে চলছেন খোকন ড্রাইভার। মানুষের জমি বর্গা নিয়ে চাষাবাদ করে ও সিএনজি অটোরিকশা চালিয়ে কোনমতে দিন যাপন করে আসছে।
পারুয়া ইউপি চেয়ারম্যান ইফতেখার হোসেন বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখি খোকন বসাকের মা-বাবা, স্ত্রী দুই সন্তানসহ ঘরের সব কিছু পুড়ে ছাই হয়েছে। বিষয়টি আসলে অনেক কষ্টদায়ক। এ নিয়ে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
আগ্রাবাদ ফায়ার সার্ভিসের উপ-সহকারী পরিচালক আবদুল হামিদ মিয়া বলেন, রাত ২টা ১০ মিনিটে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নির্বাপণের কাজ শুরু করি। আমাদের রাঙ্গুনিয়া ও আগ্রাবাদ স্টেশন আগুন নেভানোর কাজ করে। ভোর ৪টায় আগুন নির্বাপণ হয়। তবে, আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার আগেই ঘরের মধ্যে থাকা যাবতীয় আসবাবপত্র পুড়ে ছাই হয়ে যায়। এতে প্রাথমিকভাবে প্রায় ১২ লাখ টাকার ক্ষতির ধারণা করা হচ্ছে।
রাঙ্গুনিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মাহাবুব মিল্কি জানান, বসতঘর সংলগ্ন ভিকটিমদের নিজেদের রান্নাঘর থেকে আগুনের উৎপত্তি হয়। সেখানে থাকা বিপুল পরিমাণ লাকড়ির মাধ্যমে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। ঘরের সামনে রাখা একটি সিএনজি অটোরিক্সাও পুড়ে গেছে। পুলিশ লাশ উদ্ধার করেছে। প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নিচ্ছে।
এ বিষয়ে রাঙ্গুনিয়া সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আনোয়ার হোসেন শামীম বলেন, আমরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে ভেতরে আটকে পড়া দুই শিশুসহ ৫ জনকে জীবিত অবস্থায় উদ্ধারের চেষ্টা করি। কিন্তু তার আগেই আগুনে পুড়ে তাদের মৃত্যু হয়। এ সময় বসত ঘরের জানালার গ্রিল কেটে ৫ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়। ময়নাতদন্তের জন্য তাদের চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার (১২ জানুয়ারি) দিনগত রাত ২ টার দিকে উপজেলার ৫নং পারুয়া ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের মহাজনপাড়া এলাকার খোকন বসাকের বাড়িতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এতে ঘুমন্ত অবস্থায় দগ্ধ হয়ে একই পরিবারের ৫ জনের মৃত্যু হয়।
এএজেড