দখল-দূষণে সিলেটের বাসিয়া নদী এখন মরা খাল
এক সময়ের খরস্রোতা বাসিয়া নদের সঙ্গে মিশে আছে সিলেটবাসীর নানা ঐতিহ্য। সুরমা নদী থেকে উৎপত্তি হয়ে দক্ষিণ সুরমা উপজেলা, বিশ্বনাথ উপজেলা, ওসমানীনগর উপজেলা, জগন্নাথপুর, এ চার উপজেলা দিয়ে প্রবাহিত হয়ে কুশিয়ারা নদীতে মিলিত হয়েছে এ নদী। কিন্তু দখল, দূষণে বাসিয়া নদী এখন মরা খাল। কোথাও কোথাও ড্রেনের মতো।
সরেজমিনে দেখা গেছে, বাসিয়া নদীর উভয় পাশ দখল করে তৈরি হয়েছে ৫ শতাধিক স্থাপনা। যার যেমন খুশি ময়লা ফেলে দূষণ বাড়িয়ে চলেছে। নাব্যতা হারালেও নদীপাড়ের স্থাপনার কারণে হয় না পূর্ণাঙ্গ খনন। বরাদ্দ থাকা সত্ত্বেও হচ্ছে না উচ্ছেদ অভিযান।
বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, প্রায় দুইশ ফুট প্রশস্তের সিলেটের বাসিয়া নদী বয়ে গেছে প্রায় ৪২ কিলোমিটার জনপদ। এক সময় ছোট-বড় নৌকায় এ নদী দিয়ে দেড় লক্ষাধিক মানুষের যাতায়াত, পণ্য পরিবহন ছিল। কিন্তু বেপরোয়া দখলে কঙ্কাল হয়ে টিকে আছে মাত্র ৩০-৩৫ ফুট জায়গা। হারিয়েছে গভীরতা।
দখলের দিক থেকে এগিয়ে আছে বিশ্বনাথ। এ উপজেলার অংশেই বেশিরভাগ স্থাপনা। বিশ্বনাথ অভ্যন্তরে অন্তত ২৫০টি ছোট বড় স্থাপনা রয়েছে। এমনকি বাসিয়া নদীর তীরে গড়ে ওঠা মাসুদগঞ্জ বাজার, কামালবাজার, মুনশীবাজার, লালাবাজার, বিশ্বনাথ, কালীগঞ্জবাজার, গুদামঘাট, কোনারাইবাজার, রানীগঞ্জ, জামালপুরবাজারের বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলো অবাধে নদীতে ফেলছে ময়লা।
ফলে আবর্জনার ভাগাড় হিসেবেই ব্যবহার হচ্ছে নদীটি। সেইসঙ্গে সকল বাজারেই কিছু স্থাপনা নির্মাণ করে দখল হয়েছে নদী। এমন অবস্থায় কেবল বিশ্বনাথ উপজেলার অংশেই দখলদার চিহ্নিত হয়েছেন ১৮৬ জন। হয়েছে উচ্ছেদ মামলাও। কিন্তু তা কার্যকর হয়নি। তবে পানি উন্নয়ন বোর্ড সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী আসিফ আহমদ ঢাকাপ্রকাশকে বলেন, বিশ্বনাথ অংশের স্থাপনাগুলো উচ্ছেদ করতে ৩০ লাখ টাকা বাজেটে পূর্বে পাঁচবার দরপত্র আহ্বান করা হলেও প্রভাবশালীদের ভয়ে কোনো ঠিকাদার কাজ নিতে চান না।
অপরদিকে ‘বাঁচাও বাসিয়া নদী’ ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক মো. ফজল খান বলেন, কয়েক ধাপে নদীটি খনন হয়েছে। কিন্তু বারবার খনন বিশ্বনাথ অংশে এসে স্থাপনা থাকার কারণে আটকে যায়। বারবার প্রশাসন নদী রক্ষায় পদক্ষেপ নেওয়ার আশ্বাস দিলেও প্রকৃতপক্ষে স্থাপনাগুলো উচ্ছেদে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। তাছাড়া নদীর বিভিন্ন জায়গায় বারবার খনন কাজ হলেও সুরমা নদীর সঙ্গে বাসিয়ার উৎসমুখ এবং কুশিয়ারা নদীর সঙ্গে সংযোগ মুখ খনন না হওয়ায় শুকনার মৌসুমে পানি চলাচলের সুযোগ থাকে না। এমনকি খননের পরও তদারকির অভাবে ফের ভরাট হয়ে যায় বলেও জানান তিনি।
বিশ্বনাথ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নুসরাত জাহান বলেন, পৌরসভা নতুন হওয়ায় ময়লা ফেলার কোন ডাম্পিং ব্যবস্তাহ না থাকায় এটি হচ্ছে। আমি নতুন এসে ময়লা ফেলার ডাম্পিং করার জন্য স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠিয়েছি। উচ্ছেদের ব্যাপারে ইতোমধ্যে পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে কয়েকবার টেন্ডার করা হলেও কাজটা কেউ নিতে চায় না। উচ্ছেদের ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ড চাইলেই আমরা সহযোগিতা করব। তবে কেউ যাতে নতুন করে দখল না করতে পারে এবং ময়লা ফেলে পানি দূষণ করতে না পারে সেদিকে লক্ষ্য রাখা হচ্ছে।
তবে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) সিলেটের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল করিম কিম প্রশাসনের উদাসীনতাকেই দায়ী করছেন। তিনি বলেন, এই নদীটি বাপার কেন্দ্রীয় সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক এবং নদী রক্ষা কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যানও পরিদর্শন করেছেন। স্থাপনাগুলো উচ্ছেদ করতে প্রশাসনকে বারবার তাগিদ দেওয়া হলেও কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। তারা উচ্ছেদ মামলা করে কালবিলম্ব করেন। যার কারণে দখলদাররা সুযোগ পায় হাইকোর্টের দ্বারস্থ হতে।
এসইউ/এএন