দেশি-বিদেশি মুসল্লিতে পূর্ণ বিশ্ব ইজতেমার ময়দান
আগামীকাল শুক্রবার থেকে বিশ্ব ইজতেমার মূল পর্ব শুরু হওয়ার কথা থাকলেও আজ বৃহস্পতিবার (১২ জানুয়ারি) সকাল থেকেই টঙ্গীর ইজতেমা ময়দানে এসে অবস্থান নিয়েছেন হাজার হাজার তাবলীগ মুসল্লি। মুসল্লির দল মাঠের ভেতরে ঢুকে নিজ নিজ জেলার খিত্তায় অবস্থান নিতে শুরু করেছেন। এতে হাজার হাজার মুসল্লির উপস্থিতিতে ইজতেমা ময়দান প্রায় পূর্ণ হয়ে গেছে। করোনার কারণে গত দুই বছর বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠিত না হওয়ায় এবার তাবলীগের এ মহাসম্মেলনে যোগ দিতে আগেভাগেই মাঠে এসে উপস্থিত হচ্ছেন মুসল্লিরা। ময়দানে আসা মুসুল্লিদের জমিয়ে রাখতে আজ বাদ ফজর থেকে শুরু হয়েছে আম বয়ান। শীত উপেক্ষা করে গতকাল বুধবার দুপুরের পর থেকেই দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে মুসুল্লিরা ইজতেমা ময়দানে নির্ধারিত খিত্তায় এসে অবস্থান নিচ্ছেন। রাজধানীর উপকন্ঠ ঢাকা থেকে ২২ কিলোমিটার উত্তরে তুরাগ নদীর তীরে প্রায় ১ বর্গ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে এ বিশ্ব ইজতেমার আয়োজন করা হয়েছে।
করোনার কারণে বিশ্ব ইজতেমা দুই বছর বন্ধ থাকার পর এবার আগামীকাল শুক্রবার থেকে প্রথম পর্বের ৩ দিনব্যাপী (১৩, ১৪ ও ১৫ জানুয়ারি) বিশ্ব ইজতেমা টঙ্গীর তুরাগ নদীর তীরে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ৪ দিন বিরতি দিয়ে ২০, ২১ ও ২২ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে দ্বিতীয় পর্বের বিশ্ব ইজতেমা। প্রথম পর্বের নেতৃত্ব দিচ্ছেন আলেম ওলেমা গ্রুপের যোবায়ের পন্থী অনুসারীরা। দ্বিতীয় পর্বের নেতৃত্বে থাকছেন আদি তাবলীগ জামাতের নয়া দিল্লির মুরুব্বি মাওলানা সাদ পন্থী গ্রুপের অনুসারী মুসল্লিরা।
বিশ্ব ইজতেমার আয়োজক কমিটির সদস্য প্রকৌশলী আব্দুন নূর জানান, দেশী-বিদেশি মুসুল্লিরা আসতে শুরু করেছেন। ইতিমধ্যে পুরো ময়দান পূর্ণ হয়ে গেছে। শুক্রবার থেকে মূল পর্ব শুরু হলেও বৃহস্পতিবার বাদ ফজর থেকে শুরু হয় আম বয়ান।
তিনি আরও জানান, প্রায় দুই মাস ধরে স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে কাজ করে ইজতেমা মাঠের সকল কাজ শেষ করেন তাবলীগ অনুসারী মুসুল্লিরা। প্রায় ১ বর্গ কিলোমিটারের বিশাল মাঠটিকে বাঁশের খুঁটির উপর চটের ছাউনির প্যান্ডেল নির্মাণ করা হয়েছে। মুসুল্লিদের বয়ান শোনার জন্য লাগানো হয়েছে বিশেষ ছাতা মাইক। বয়ান ও দোয়া মঞ্চ ছাড়া নামাজের মিম্বরও তৈরি করা হয়েছে আলাদাভাবে। দেশীয় তাবলীগের মুসুল্লিদের জন্য আলাদা আলাদা স্থান (খিত্তা) ভাগ করা হয়েছে। টুপী-পাঞ্জাবি পড়া মুসুল্লিরা বাস-ট্রাক, নৌকা, ব্যক্তিগত গাড়িসহ বিভিন্ন যানবাহনে করে এখনও ইজতেমা ময়দানে আসছে।
প্রকৌশলী আব্দুন নূর জানান, বিদেশি তাবলীগ অনুসারী মুসল্লিদের জন্য মাঠের উত্তর-পশ্চিম কোণে আধুনিক সুবিধা সম্বলিত আলাদা থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। পুরো ময়দান এলাকায় থাকছে গাজীপুর জেলা প্রশাসন, গাজীপুর সিটি করপোরেশন, পুলিশ, র্যাবের কন্ট্রোল রুম। আরব, ইউরোপসহ কয়েকটি দেশের মুসুল্লিরাও ইতিমধ্যে ইজতেমা মাঠের বিদেশী মেহমানদের প্যান্ডেলে অবস্থান নিয়েছেন।
এ ব্যাপারে গাজীপুরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) আনিসুর রহমান জানান, গাজীপুর জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট টিম অনিয়ম ঠেকাতে থাকবে পুরো টঙ্গীজুড়ে। বুধবার সকালে ইজতেমা মাঠে দুটি গভীর নলকূপের উদ্বোধন করেন স্থানীয় এমপি যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল। বয়ান মঞ্চ করা হয়েছে ইজতেমা মাঠের পশ্চিম-উত্তরে মাঝ বরাবর।
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী আলমগীর মিয়া জানান, ৩১টি টয়লেটে একসঙ্গে ৯ হাজার মুসল্লি তাদের প্রস্রাব-পায়খানার কাজ সম্পন্ন করতে পারবেন। বিআরটিসি এবং বাংলাদেশ রেলওয়ে ইজতেমার মুসল্লিদের আনা নেওয়ায় বিশেষ বাস-ট্রেন সার্ভিসের ব্যবস্থা নিয়েছে। ইজতেমা ময়দানের পশ্চিম পাশে তুরাগ নদীর উপর ৫টি ভাসমান সেতু নির্মাণ করেছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী।
গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের (জিএমপি’র) কমিশনার মোল্যা নজরুল ইসলাম জানান, ইজতেমা ময়দান ও আশপাশের এলাকায় সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। দুই পর্বে পোশাকে, সাদা পোশাকে পুলিশসহ বিভিন্ন আইন শৃঙ্খলার দায়িত্বে থাকবেন ১০ সহস্রাধিক সদস্য। গাজীপুর মেট্টোপলিটন পুলিশ বিভাগ ১৪টি কন্ট্রোল রুম তৈরি করেছে। র্যাবের কন্ট্রোল রুম থাকবে। ডিএমপি তার এলাকায় কন্ট্রোল রুম খুলেছে। ওয়াচ টাওয়ার, রুফটফ ডিউটিসহ সিআইডি, নৌ-পুলিশ, অবজারভারভেশন টিম থাকবে। র্যাবের হেলিকপ্টার টহল থাকবে। ডগ স্কোয়াড টিম, মোবাইল পেট্টোল টিম, বোম ডিস্পোজাল টিম থাকবে। ১০ হাজারেরও বেশি পুলিশ আনসার, র্যাব সদস্য পোষাক এবং সাদা পোষাকে ইজতেমার ভেতর বাহিরসহ টঙ্গী উত্তরার পুরো এলাকায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে অবস্থান করবেন।
টঙ্গীর বিশ্ব ইজতেমায় অংশগ্রহণ করা বিদেশি মুসুল্লিদের এয়ারপোর্ট থেকে রিসিভ করে থাকেন ইজতেমা আয়োজকরা। বিমানবন্দর ও জিএমপি সূত্রে আরও জানা যায়, বিদেশি মুসুল্লিরা যাতে স্বাচ্ছন্দে ইজতেমায় আসতে পারেন সেজন্য ইমিগ্রেশন থেকে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়ে হয়েছে। পকেটমারসহ নানা অপরাধ কার্যকলাপ রুখতে পেট্টোল টিম ও মোবাইল কোর্ট কাজ করবে। থাকবে ওয়াচ টাওয়ার ও সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ।
শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতালের তত্বাবধায়ক জাহাঙ্গীর আলম জানান, স্বাস্থ্য বিভাগের সেবা কার্যক্রম প্রস্তুতি প্রায় সম্পন্ন হয়েছে। মুসুল্লিদের বিনামূল্যে স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিতকরণে স্বাস্থ্য বিভাগের ৫টি ক্যাম্প স্থাপনের কাজ চলছে। এখান থেকে ২৪ ঘণ্টা মুসুল্লিদের বিনামূল্যে ওষুধ ও চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হবে। এসব ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প ছাড়া টঙ্গী হাসপাতালে ডায়রিয়া, অ্যাজমা, ট্রমা, বক্ষব্যাধি, ডায়রিয়া, ডেঙ্গু, নাক-কান-গলা,চক্ষু ও বার্ণ ইউনিটের কার্যক্রম চলবে। এ জন্য পর্যাপ্ত বেডও থাকবে।
তিনি আরও জানান, ইজতেমা উপলক্ষে টঙ্গীর এই হাসপাতালে ৭টি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দল মোতায়েন থাকবে। এ ছাড়াও বেসরকারি উদ্যোগে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও তার সংগঠনের তরফ থেকেও ক্যাম্প বিন্যামূল্যে চিকিৎসা দেবে। চিকিৎসা বিভাগ ছাড়াও বিদ্যুৎ, ফায়ার সার্ভিস সার্বক্ষণিক সেবা দান অব্যাহত রাখবে।
এসআইএইচ