সোমবার, ২১ এপ্রিল ২০২৫ | ৮ বৈশাখ ১৪৩২
Dhaka Prokash

খামারীদের ভাগ্য ও মিল্কভিটার অস্তিত্ব দুটোই জলে!

২০০৫ সাল থেকে রায়পুর মিল্কভিটায় দুধ সরবরার করে আসছিলেন দুগ্ধ উৎপাদনকারী খামারী দিলিপ চন্দ্র ঘোষ। তাঁর পারিবারিক তিনটি খামারে গরু-মহিষ থেকে প্রতি প্রতিদিন গড়ে ১ হাজার লিটার হারে বছরে ৩ লক্ষ ৬০ হাজার লিটার দুধ সরবরাহ করতেন তিনি। এতে নিজের স্বাবলম্ভীতার পাশাপাশি সৃষ্টি হয়েছে চরাঞ্চলের কয়েকজন শ্রমিকেরও কর্মসংস্থান। কিন্তু মিল্কভিটা কর্তৃপক্ষ হঠাৎ দুধ সংগ্রহ বন্ধ করে দেয়ায় বিপাকে পড়েন তিনি।

এতে মিল্কভিটা থেকে নেয়া ঋণ ও গো-খাবার সংকট সহ নানা প্রতিকূলতায় লোকসানে পড়ে বাধ্য হয়ে কম দামে গরু বিক্রি করে দিতে হয় তাকে। তাছাড়া গরু মরে এক একটি খামারে প্রায় ২০ লক্ষাধিক টাকার ক্ষতি হয় তার। দিলিপ চন্দ্র ঘোষ রায়পুর মিল্কভিটার আওতাধিন দেনায়েতপুর প্রাথমিক দুগ্ধ উৎপাদনকারী সমবায় ইউনিয়ন লি. এর সভাপতি। এছাড়াও চর কোরালিয়া ও শাকচর নামে দুটি দুগ্ধ উৎপাদক সমবায় সমিতি রয়েছে।

শুধু দিলিপ চন্দ্র ঘোষ-ই-নয়, লক্ষ্মীপুর জেলার রায়পুর উপজেলায় ৩৮টি প্রাথমিক দুগ্ধ উৎপাদকারী সমবায় ইউনিয়ন রয়েছে। প্রতিটি সমবায় ইউনিয়ন এর আওতায় ৩০/৪০জন হারে ৫শতাধিক খামারী উৎপাধিত দুধ মিল্কভিটা সংগ্রহ কেন্দ্রে সরবরাহের সঙ্গে জড়িত। হঠাৎ করে ২০১৮ সালে ৬ জানুয়ারী রায়পুর মিল্কভিটার দুধ শীতলীকরণ কেন্দ্রের দুধ সংগ্রহ কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়া হয়। শীতলীকরণের অত্যাধুনিক মেশিনটিও গত বছর ফেরত নিয়ে যায় উর্ধ্বতণ কর্তৃপক্ষ। এতে খামারীরা সবাই উৎপাদিত দুধ বিক্রি ও ঋণ পরিশোধ নিয়ে বিপাকে পড়েন।

একপর্যায়ে ঋণের ভোজা মাথায় নিয়ে বাধ্য হয়ে দুধ উৎপাদন ও গরু পালন চেড়েছেন চরাঞ্চলের অধিকাংশ খামারী। এদিকে সমবায় খামারীদের বন্টনের জন্য আনা সোয়া ১৮ কোটি টাকা ব্যয়ের উন্নত জাতের মহিষ প্রকল্পেও চরম অনিয়ম-অব্যবস্থাপনায় এখন প্রায় বন্ধের পথে রায়পুর মিল্কভিটার দুগ্ধ কেন্দ্রেটি। এতে ব্যস্তে যেতে বসেছে মিল্কভিটার মাধ্যমে চরাঞ্চলের দারিদ্র বিমোচনে সরকারের বৃহত্তর পরিকল্পনা।

অপরদিকে দুধ সংগ্রহ বন্ধ থাকায় এক দিকে খামারীদের কাছ থেকে ঋণের টাকা পরিশোধ এবং অন্যদিকে খামারীরা মিল্কভিটায় জমাকৃত শেয়ার-সঞ্চয় টাকা ফেরৎ চেয়ে পাল্টা-পাল্টি আইনী নোটিশ চালাচালি করে উভয় পক্ষ। এতে পাওনা নিয়ে সমবায়ী খামারী ও মিল্কভিটার মধ্যে দেখা দিয়েছে দ্বন্দ্ব।

জানা যায়, ১৯৯৮ সালে দুধ উৎপাদনকারী খামারী ও কৃষকদের দারিদ্র বিমোচন ও ন্যায্য প্রাপ্তি নিশ্চিত করণের লক্ষে লক্ষ্মীপুর জেলার রায়পুর উপজেলার মিতালী বাজারে ৫.৪৭ একর এরিয়া নিয়ে দুগ্ধ উৎপাদনকারী সমবায় ইউনিয়ন লিমিটেড নামে দুগ্ধ শীতলীকরণ (ঠান্ডা) ও সরবরাহ কেন্দ্র স্থাপন করে মিল্কভিটা কর্তৃপক্ষ।

এ কেন্দ্রের আওতায় প্রাথমিক দুগ্ধ উৎপাদনকারী সমবায় সমিতি গঠনের মাধ্যমে স্থানীয় খামারীদের কাছ থেকে নির্ধারীত মূল্যে দুধ ক্রয় করতো মিল্কভিটা। ক্রয়কৃত দুধগুলো ৫হাজার লিটার ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন অত্যাধুনিক শীতলীকরণ মেশিনের মাধ্যমে প্রক্রিয়া শেষে ঢাকার মিরপুরে মিল্কভিটার মূল কেন্দ্রে পাঠানো হতো। খামার পরিচালনার জন্য ২০ হাজার থেকে ৭০ হাজার টাকারও অধিক ঋণের পাশাপাশি গবাদিপশুর চিকিৎসা সেবা নিশ্চিতকরণ ও ঔষধ দেয়া হতো সমবায়দের খামারীদের।

দেনায়েতপুর প্রাথমিক দুগ্ধ উৎপাদনকারী সমবায় ইউনিয়ন লি. এর সভাপতি দিলিপ চন্দ্র ঘোষ বলেন, সাপ্তাহে ৪/৫ লক্ষ টাকার দুধ সরবরাহ করা হতো তার খামারগুলো থেকে। শুরুর দিকে ৩২.৮১ টাকা হারে দুধ ক্রয় করেছে মিল্কভিটা। বাজারে যখন ৫০/৬০ টাকা মূল্য তখনও সর্বোচ্চ ৪০ টাকা, ৪২ টাকা হারেও দুধ সংগ্রহ করতো তারা। দুধ বিক্রির অংশ থেকে পরিবহন ব্যয়, সুধের কিস্তির টাকা, শেয়ার খরিদ ৪০ পয়সা, সঞ্চয় ৬৫ পয়সা ও কমিশন ১ টাকা ধরা হতো। তার একটি খামারে ৩০টি গরু ও ৭০টি মহিষ ছিলো। চরে এখন খালি খামারই রয়েছে।

তিনি আরো বলেন, মিল্কভিটা কার্যক্রম বন্ধ করার পর ঋণের কিস্তি নগদ টাকা নেয়া শুরু করে। গত ২০১৯ সালে হঠাৎ সমবায়ী সমিতিগুলোকে ঋণের সম্পন্ন টাকা পরিশোধ করার জন্য আইনী নোটিশ দেয় মিল্কভিটা কর্তৃপক্ষ। কিন্তু মিল্কভিটায় সমবায়ী খামারীদের শেয়ার ও সঞ্চয়ের যে পরিমান আমানত জমা রয়েছে, তা বকেয়া ঋণের থেকেও বেশি টাকা, সেগুলো ফেরত দেয়নি মিল্কভিটা।

কাছিয়ার চর দুগ্ধ উৎপাদনকারী সমবায়ী সমিতির সভাপতি আবুল গাজী, মালেক গাজী, মো. সোহাগ, মোজাম্মেলসহ আমরা স্ব-স্ব সমিতির পক্ষ থেকেও হাইকোটের একজন আইনজীবীর মাধ্যমে শেয়ার ও সঞ্চয়ের টাকা ফেরত চেয়ে মিল্কভিটা কর্তৃপক্ষের নিকট আইনী নোটিশ পাঠাই। এর মধ্যে সমবায়ী সমিতির সভাপতি মালেক গাজী ইতোমধ্যে মারা গেছে। তবে এরপরও খামারীদের সঞ্চয়ের টাকা দেয়নি সংশ্লিষ্ট মিল্কভিটার।

রায়পুর মিল্কভিটার এক কর্মকর্তা বলেন, ৩৮টি সমবায় সমিতি মিল্কভিটা থেকে ঋন নিয়ে খামার পরিচালনা করতো। মিল্কভিটায় দুধ দেয়ার মাধ্যমে কিস্তিতে ঋণের টাকা পরিশোধ করতো তারা। দুধ সংগ্রহ বন্ধ হওয়ার পর থেকে লোকসানে পড়ে খামারীরা নিয়মিত কিস্তি পরিশোধ করতে পারেনি। এতে খামারীদের কাছ ৬০ লক্ষ টাকা বকেয়া ঋণ পড়ে রয়েছে মিল্কভিটার। এজন্য মিল্কভিটা আইননী নোটিশও করেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, এক একটি সমবায় সমিতি প্রতিদিন গরু-মহিষ থেকে উৎপাদিত কমপক্ষে ৪০০/৫০০ লিটার দুধ শর্ত সাপেক্ষে নির্ধারিত স্বল্প মূল্যে রায়পুর মিল্কভিটায় সরবরাহ করতো। এতে গড়ে প্রায় ৩ হাজার লিটার দুধ সংগ্রহ করতেন সংশ্লিষ্টরা। দুধ সংগ্রহ করে মিল্কভিটা লাভের মুখ দেখলেও, লাভের মুখ দেখেনি খামারীরা। তবে বিশেষ প্রকল্পের মাধ্যমে খামারীদের ভাগ্য উন্নয়নের আশ্বাসও দেন কর্তৃপক্ষ। খামারীদের দেয়া সেই আশ্বাস আশ্বাসই রয়ে গেলো।

স্থানীয় সূত্রে আরও জানা যায়, সে সময় কারখানা পরিচালনার দায়িত্ব ছিলেন, ডাঃ ফরহাদ হোসেন। অভিযোগ রয়েছে সমবায় খামারীদের নিকট থেকে ক্রয়কৃত দুধের গুণগত মান নিয়ে অহেতুক বির্তক সৃষ্টি করা হতো। এতে খামারীরাও মিল্কভিটায় দুধ দেয়া নিয়ে অনাগ্রহী হয়ে উঠে। মিল্কভিটা চরাঞ্চলের খামারীদের জন্য আশিরবাদ হিসেবে এলেও কিছু অসাধু কর্মকর্তার ও চক্রের ছত্রছায়ায় ক্ষতির কারণ হয়ে দাড়িয়েছে।

রায়পুরের চরাঞ্চলের খামারীদের ভাগ্য ফেরাতে শীতলীকরণ মেশিনটি পুনরায় স্থাপন করে বাজার মূল্যের সাথে সামঞ্জস্য রেখে মূল্য নির্ধারন পূর্বক দুধ সংগ্রহ করার দাবী জানান স্থানীয় সচেতন মহল। একই সাথে খামারীদের জমাকৃত সঞ্চয়ের টাকা ফেরতসহ বিনা সুধে ঋণের মাধ্যমে খামারীদের পুনরায় সচল রাখার দাবী করেন তারা।

কাছির চর ও চর কোরালিয়ায় কয়েকজন খামারী জানান, মিল্কভিটা দুধের মূল্য যদিও বাজার থেকেও কম দিতো, সেটি আবার প্রজনন বীজ, চিকিৎসা সেবা, ৫% সুধে ঋণ দিয়ে খামারীরে সহযোগিতা করতো। যা চরাঞ্চলের খামারীদের জন্য আশিরবাদ হিসেবে কাজ করতো। কিন্তু খামারে গরুর অসুস্থ হয়ে পড়লে বার বার অনুরোধ করলে চিকিৎসা সেবা পাওয়া যেতো না। তাছাড়া ওষধসহ নানাবিদ প্রনোদনা প্রদানেও রয়েছে সংশ্লিষ্টদের অনিয়ম।

কাজির চর দুগ্ধ উৎপাদনকারী সমবায় সমিতির সভাপতি মফিজ মিয়া বলেন, দুধ সংগ্রহ বন্ধ করে দেয়ার পর খামারীরা দিশেহারা হয়ে কমে সব গুরু বিক্রি করে দেয়। ডাক্তার ফরহাদ থাকা কালে আমার গরুর ভাইরাস রোগ দেখা দিলে অনুরোধ করেও চিকিৎসা সেবা পাইনি। বিনা চিকিৎসায় আমার ৮টি গরু মারা গেছে। বিষয়টি নিয়ে সহযোগীতা চেয়েও মিল্কভিটার কৃর্তপক্ষের পক্ষ থেকে কোন সাড়া পাইনি। ওই সময় আমার ১৫ লক্ষ টাকা লোকসান হয়ে।

মিল্কভিটার দুধ সংগ্রহ পুনরায় চালুর বিষয়ে তিনি বলেন, মিল্কভিটা বড় বড় রাগববোয়ালরা নিয়ন্ত্রণ করে। সেখানে আমরা অনিয়মের প্রতিবাদ করে কিছু করতে পারবো না। বড় অফিসাররা যদি বলে তাহলে কার্যক্রম চালু হবে। অন্যথায় খামারীদের ভাগ্য মাটিতে মিশে থাকবে।

চর কাছিয়া সমাবায় সমিতির সভাপতি বলেন, গরু অসুস্থ হয়ে পড়লে মিল্কভিটা সংশ্লিষ্ট ডাক্তারকে চিকিৎাসার জন্য অনুরোধ করে কোন সেবা না পেয়ে বাধ্য হয়ে আড়াই লক্ষ টাকার গরু মাত্র ৭২ হাজার টাকায় বিক্রি করে দিয়েছি। উল্টো সংশ্লিষ্টরা বলে দুধ সংগ্রহ বন্ধ কিসের চিকিৎসা সেবা।

অপর খামারী বলেন, করোণা কালে ক্ষতিগ্রস্থ খামারীদের প্রনোদনার আওতায় আনা হবে বলে পরিচয়পত্র ও ছবি নিয়ে যায়। কিন্তু করোনার দুই বছর পরও খামারীদের কোন প্রনোদনার আওতায় আনা হয়নি। তবে রাজনীতিক ছত্রছায়ায় এসব প্রনোদনা গায়েব হয়েগেছে বলে জানান ওই খামারী।

উন্নতজাতের মহিষ প্রকল্প:
এদিকে খামারীদের ভাগ্য উন্নেয়নের সোয়া ১৮ কোটি টাকার রায়পুর মহিষ উন্নয়ন প্রকল্পটি অনিয়ম অব্যবস্থাপনায় শূন্য অর্জনেই মেয়াদ উত্তির্ণ হয়ে ভেস্তে যাওয়ায় এমন অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। দুধ ও মাংসের উৎপাদন বৃদ্ধিসহ খামারিদের ভাগ্য উন্নয়নের লক্ষ্যে গৃহিত প্রকল্পে ব্যাপক সম্ভবনা থাকলেও নীতিমালা অনুযায়ী প্রত্যাশা পুরণ হয়নি। এতে স্থানীয় ৫ শতাধিক সমবায়ী খামারীদের দেয়া আশ্বাস আশ্বাসই রয়ে গেছে। এসব খামারীদের মাঝে সৃষ্টি হয় চরম ক্ষোভ। তবুও সংশ্লিষ্টরা বলছে কার্যক্রম চলমান রয়েছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, দুধ ও মাংসের পাশাপাশি খামারীদের ভাগ্য উন্নয়নের সেই বিশেষ প্রকল্পটি রায়পুর মহিষ উন্নয়ন ও কৃক্রিম প্রজনন প্রকল্প নামে অনুমোদন লাভ করে। সরকারি ৭৫ ভাগ ও মিল্কভিটা সমবায়ীদের ২৫ ভাগ অর্থায়নে ১৮ কোটি ২৩ লক্ষ ৪৭ হাজার টাকা ব্যায়ের এ প্রকল্পটি ২০১৩ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যস্ত বাস্তবায়নের মেয়াদ কাল ধরা হয়। এর মধ্যে ভারতের থেকে উন্নত মুররাহ্ জাতের ২০০টি গাভী, ২০০টি বাছুর ও ১০টি ষাঁড় মহিষ ক্রয় করে কর্তৃপক্ষ।

ক্রয়কৃত এসব মহিষের বেশির ভাগ স্থানীয় ক্ষুদ্র সমবায়ী খামারীদের মাঝে ভুর্তকি মূল্যে বিতরণ করা ও ষাড় মহিষ থেকে সংগৃহিত বীজ (সীমেন) খামারীদের দেশীয় প্রজাতীর মহিষে সরবরাহ করার কথা ছিলো। যা করা হলে দেশীয় প্রজাতির সাধারণ মহিষ থেকে যেখানে পাওয়া যেত আড়াই থেকে ৩ কেজি দুধ আর প্রজনন উন্নয়নের পর ওই জাতের মহিষ থেকে পাওয়া যেত ৮ থেকে ১০ কেজি দুধ। দুধ ও মাংসের উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে বাস্তবায়ন, উন্নত খামার প্রতিষ্ঠায় প্রশিক্ষিত খামারীরা বেশ লাভবান হয়ে আগ্রহী হয়ে উঠতো।

রায়পুর কাজির চর দুগ্ধ উৎপাদকারী সমবায় সমিতির কয়েকজন খামারী বলেন, মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী মহিষ গুলো মূলত আনা হয়েছে সমবায়ী খামারীদের বন্টন করার জন্য। কিন্তু এখানকার সংশ্লিষ্টরা কি কারণে মহিষগুলো খামারীদের বন্টন না করে নিজেরাই পালন করা শুরু করেছে।

পরে তারা জানায় সমবায়ীতে দুধ উৎপাদন কম দেখে কর্তৃপক্ষের নিদেশেই তারা নিজেরা রাখাল নিয়োগ করে মহিষ পালন শুরু করে, দুধের ঘাটতি পুরন করার জন্য। কিন্তু উন্নত জাতের মহিষ থেকে উৎপাদিত দুধ দায়িত্বে থাকা ডাঃ ফরহাদ লোভে পড়ে, টাকার বিনিময়ে টেন্ডারের মাধ্যমে মহিষের দুধ বাহিরে বিক্রি করে দেয়। কারখানায় উৎপাদিত মহিষের দুধ যদি সমবায়ের সাথে যোগ করা হতো। তাহলে রায়পুর মিল্কভিটার দুধ সংগ্রহ করণ কার্যক্রম বন্ধ হতো না।

একই কথা জানান খামারী আবুল গাজী, তিনি বলেন, দুধসংগ্রহ বন্ধের পর থেকে জোড়াতালী দিয়ে খামার চালিয়ে যাচ্ছি। গো খাদ্যের দাম বৃদ্ধির কারণে আমার খামারও বন্ধের পথে। মিল্কভিটার শীতলীকরণ মেশিন চালু করতে ৩০০ লিটার দুধ লাগে, রায়পুর কারখানায় ৩০০ লিটারেরও বেশি দুধ খামারীদের নিকট থেকে সংগ্রহ হতো।

অথচ মিল্কভিটায় যে মহিষের প্রকল্প রয়েছে সেখানে ২০০ লিটার দুধ হয়। কিন্তু মহিষের দুধ গুলো সংশ্লিষ্টরা লাভের জন্য বাহিরের বাজারে বেশি দামে বিক্রি করে দেয়। যার জন্য দুধ সংগ্রহ কার্যক্রম শুরু করতে পারেনি। এর জন্য সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারাই দায়ী। আর খেসারতও দিতে হয়েছে আমারা সমবায়ী খামারীদের।

তিনি আরও বলেন, কৃষক ও খামারীরা স্বাভলম্বী হওয়ার জন্য ভালো একটি সংস্থা মিল্কভিটা। কিন্তু সংস্থাটিতে কিছু অসাধু কর্মকর্তা সর্বনাশ করে দিয়েছে।

অভিযোগের বিষয় অস্বীকার করে ডা. ফরহাদুল আলম বলেন, আমার বদলি হয়েছে দুই বছর পূর্বে। বর্তমানে খুনলা বিভাগের একটা পদে আছি। রায়পুর মিল্কভিটা কেন্দ্রে একজন প্রজেক্ট ডিরেক্টর (পিডি) ছিলো, স্বার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ করার জন্য। এতে অনিয়ম করার কোন সুযোগ নেই। খামারীদের সর্বাত্তক সহযোগিতা করার চেষ্টা করেছি। যারা স্বার্থ হাসিল করতে পারেনি, তারাই আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করে আমাকে বদলি করেছে। আমি কোন অনিমের সাথে জড়িত ছিলাম না।

এদিকে প্রকল্পের আওতায় খামারীদের সেবা দেওয়ার জন্য মিল্কভিটায় ৫টি শেড, একটি বীজাগার মেশিন, একটি গবেষণাগার, প্রজনন মেশিন, আধুনিক নিক্তিসহ বিভিন্ন যন্ত্রাংশ স্থাপন করা হয়। কিন্তু সরজমিনে দেখা যায় ৫টি শেডেই রাখা হয়েছে মহিষ।

রায়পুর মিল্কভিটার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা ডাঃ আশ্রাফুজ্জামান বলেন, এখনপর্যন্ত প্রকল্পের অগ্রগতি সন্তোষজনক। কর্তৃপক্ষের নিদেশনা অনুযায়ী উন্নত জাতের মহিষগুলো রাখাল নিয়োগের মাধ্যমে দেখ বাল করা হচ্ছে। তাছাড়া কেন্দ্রের ভেতরেই ঘাস উৎপাদক করা হয় মহিষের জন্য। বিগত ৫বছর পূর্বে ১০০টি মহিষ আনা হয় এ কেন্দ্রে। বর্তমানে গাভী ও চাছুরসহ ১৬৩টি মহিষ আছে মিল্কভিটায়। প্রথমবার ৮০ মহিষ বিক্রি করা হয়েছে। এতে দেড় কোটি টাকা মিল্কভিটার আয় হয়েছে।

দুধ সংগ্রহ বন্ধ ও বকেয়া ঋণ আদায়ের বিষয়ে জানতে চাইলে ডাঃ আশ্রাফুজ্জামান বলেন, এসব বিষয়ে মন্তব্য করতে উর্ধ্বতণ কর্তৃপক্ষের নিদেশনা প্রয়োজন। শীতলীকরণ মেশিনের চাহিদা মত দুধ না পাওয়ায় মেশিন নিয়ে যায় কর্তৃপক্ষ। কিন্তু খামারীরা মিল্কভিটায় দুধের দাম কম দেখে বাজারে মিষ্টির দোকানগুলোতে দেয়। খামারীরা দুধ দিতে চাইলে রামগঞ্জ কেন্দ্রের মাধ্যমে সংগ্রহ করা হবে। তবে এখানে উৎপাদিত মহিষের দুধ টেন্ডারের মাধ্যমে বাহিরে বিক্রি করে রাজস্ব আয় হয়।
এএজেড

Header Ad
Header Ad

৪৬তম বিসিএস লিখিত পরীক্ষা, মানতে হবে ৪ নির্দেশনা

ছবি: সংগৃহীত

আগামী ৮ মে শুরু হচ্ছে ৪৬তম বিসিএসের আবশ্যিক বিষয়ের লিখিত পরীক্ষা, যা চলবে ১৯ মে পর্যন্ত। এই পরীক্ষাগুলো ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল, সিলেট, রংপুর ও ময়মনসিংহ কেন্দ্রসহ দেশব্যাপী একযোগে অনুষ্ঠিত হবে। পরীক্ষার্থীদের জন্য চারটি গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা দিয়েছে বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি)।

রবিবার (২০ এপ্রিল) পিএসির প্রকাশিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, পরীক্ষার হলে নিষিদ্ধ সামগ্রী পাওয়া গেলে সংশ্লিষ্ট পরীক্ষার্থীর প্রার্থিতা বাতিল করা হবে এবং তাকে ভবিষ্যতের সব নিয়োগ পরীক্ষার জন্য অযোগ্য ঘোষণা করা হবে।

লিখিত পরীক্ষায় মানতে হবে যেসব নির্দেশনা:

১. পরীক্ষার হলে বই, ঘড়ি, মুঠোফোন, ক্যালকুলেটর, ইলেকট্রনিক ডিভাইস, ব্যাংক/ক্রেডিট কার্ডসদৃশ ডিভাইস, গয়না, ব্রেসলেট ও ব্যাগ আনা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। এসব সামগ্রীসহ কাউকে পরীক্ষার হলে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না।

২. পরীক্ষাকেন্দ্রে প্রবেশের সময় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও পুলিশের উপস্থিতিতে, মেটাল ডিটেক্টরের সাহায্যে মুঠোফোন ও অন্যান্য নিষিদ্ধ সামগ্রী তল্লাশি করা হবে। প্রবেশপত্র অবশ্যই সঙ্গে থাকতে হবে।

৩. পরীক্ষার দিন নিষিদ্ধ সামগ্রী সঙ্গে না আনার জন্য এসএমএসের মাধ্যমে সতর্কবার্তা পাঠানো হবে। পরীক্ষার্থীদের এই নির্দেশনা অবশ্যই অনুসরণ করতে হবে।

৪. পরীক্ষার সময় কানের ওপর কোনো আবরণ রাখা যাবে না এবং কানে হিয়ারিং এইড ব্যবহারের প্রয়োজন হলে, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শপত্রসহ কমিশনের পূর্বানুমোদন নিতে হবে।

৪৬তম বিসিএসে মোট ৩,১৪০টি পদের বিপরীতে সবচেয়ে বেশি নিয়োগ দেওয়া হবে স্বাস্থ্য ক্যাডারে। এর মধ্যে সহকারী সার্জন ১,৬৮২ জন এবং সহকারী ডেন্টাল সার্জন ১৬ জন নেওয়া হবে। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ নিয়োগ থাকবে শিক্ষা ক্যাডারে, যেখানে ৫২০ জন প্রার্থীকে বিভিন্ন বিষয়ে নিয়োগ দেওয়া হবে।

Header Ad
Header Ad

প্রাইমএশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী পারভেজ হত্যায় আটক ৩ জন

প্রাইমএশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের নিহত শিক্ষার্থী পারভেজ। ছবি: সংগৃহীত

রাজধানীর বনানীতে প্রাইমএশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী পারভেজ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় তিনজনকে আটক করেছে পুলিশ। সোমবার (২১ এপ্রিল) ভোরে তাদের আটক করা হয় বলে গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রাসেল সারোয়ার। তবে আটককৃতদের নাম-পরিচয় এখনো প্রকাশ করা হয়নি।

এর আগে, শনিবার বিকেলে পারভেজের সহপাঠীদের সঙ্গে পাশের ইউনিভার্সিটি অব স্কলার্সের দুই ছাত্রীকে ঘিরে হাসাহাসির জেরে বাগবিতণ্ডা হয়। পরে বিষয়টি মীমাংসা হয়েছে বলে জানায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। কিন্তু ক্যাম্পাস থেকে বের হওয়ার পরপরই পারভেজকে ৩০ থেকে ৪০ জনের একটি দল ঘিরে ধরে এবং ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে। এতে তিনি গুরুতর আহত হন। পরে তাকে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

রোববার দুপুরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে ময়নাতদন্ত শেষে পারভেজের মরদেহ নেওয়া হয় নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে, যেখানে প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর রাত ১০টার দিকে ময়মনসিংহের ভালুকার কাইচান গ্রামে তার দাফন সম্পন্ন হয়।

এই ঘটনায় পারভেজের মামাতো ভাই হুমায়ুন কবীর বাদী হয়ে বনানী থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। মামলায় প্রাইমএশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও বহিরাগতসহ আটজনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এ ছাড়া অজ্ঞাত পরিচয়ের আরও ২৫-৩০ জনকে আসামি করা হয়েছে। মামলার অভিযুক্তরা হলেন—মেহেরাজ ইসলাম (২০), আবু জহর গিফফারি পিয়াস (২০), মো. মাহাথির হাসান (২০), সোবহান নিয়াজ তুষার (২৪), হৃদয় মিয়াজি (২৩), রিফাত (২১), আলী (২১) ও ফাহিম (২২)। তবে উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, ঘটনার সূত্রপাত যাকে ঘিরে, সেই ‘কথিত প্রেমিকা’ শনাক্ত হলেও মামলায় তার নাম নেই।

পুলিশ জানিয়েছে, তদন্তের মাধ্যমে দোষীদের শনাক্ত করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে এবং ঘটনার মূল রহস্য উদ্ঘাটনে কাজ চলছে।

Header Ad
Header Ad

ঢাকাসহ ১৪ অঞ্চলে ঝড়-বৃষ্টির সম্ভাবনা: আবহাওয়া অফিস

ছবি: সংগৃহীত

রাজধানী ঢাকাসহ দেশের ১৪টি অঞ্চলে আজ ঝড়ো হাওয়া ও বজ্রসহ বৃষ্টির সম্ভাবনার কথা জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। সোমবার (২১ এপ্রিল) সকাল ৬টা ৪৫ মিনিটে আবহাওয়া অফিসের ফেসবুক পেজে দেওয়া এক বিজ্ঞপ্তিতে এই পূর্বাভাস জানানো হয়।

ঢাকা, কিশোরগঞ্জ, ময়মনসিংহ, সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইল, বগুড়া, পাবনা, গাইবান্ধা, দিনাজপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কুমিল্লা, নোয়াখালী, চট্টগ্রাম এবং সিলেট।

এসব অঞ্চলের উপর দিয়ে পরবর্তী দুই থেকে চার ঘণ্টার মধ্যে ৪৫-৬০ কিলোমিটার বা তারও বেশি গতিতে ঝোড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। সেইসঙ্গে বজ্রপাতসহ বৃষ্টি বা বজ্রবৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

সকাল থেকেই রাজধানীতে গুমোট আবহাওয়া বিরাজ করছে। সকাল ৮টা ৫৫ মিনিট পর্যন্ত আকাশ কালো মেঘে ঢাকা ছিল। ঢাকায় আজ সকাল ৭টা থেকে পরবর্তী ছয় ঘণ্টার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, আকাশ আংশিক মেঘলা থেকে সাময়িক মেঘলা থাকতে পারে। দক্ষিণ বা দক্ষিণ-পূর্ব দিক থেকে ঘণ্টায় ৮-১২ কিমি বেগে বাতাস প্রবাহিত হতে পারে, যা সময়ের সঙ্গে ৩০-৪০ কিমি পর্যন্ত বাড়তে পারে। দিনের তাপমাত্রাও সামান্য বাড়তে পারে।

সকাল ৬টায় ঢাকায় রেকর্ড করা তাপমাত্রা:

- সর্বোচ্চ: ২৮.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস
- সর্বনিম্ন: ২৮.০ ডিগ্রি সেলসিয়াস
- বাতাসে আর্দ্রতা: ৮৭ শতাংশ

চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় এবং রংপুর, রাজশাহী, ময়মনসিংহ, ঢাকা, খুলনা ও বরিশাল বিভাগের দু’এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ বিদ্যুৎ চমকানো বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেইসঙ্গে সারাদেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা সামান্য বাড়তে পারে।

সূত্র: আবহাওয়া অধিদপ্তর

Header Ad
Header Ad

সর্বশেষ সংবাদ

৪৬তম বিসিএস লিখিত পরীক্ষা, মানতে হবে ৪ নির্দেশনা
প্রাইমএশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী পারভেজ হত্যায় আটক ৩ জন
ঢাকাসহ ১৪ অঞ্চলে ঝড়-বৃষ্টির সম্ভাবনা: আবহাওয়া অফিস
গ্রীষ্মে স্বাভাবিক থাকবে বিদ্যুৎ সরবরাহ: বিপিডিবি চেয়ারম্যান
পরমাণু কর্মসূচি থেকে না সরার ঘোষণা ইরানের
পর্যটকদের ভ্যাটের অর্থ ফেরত দেবে সৌদি সরকার
আজ কাতার যাচ্ছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস
ভুল বোঝাবুঝিতে গাজায় ১৪ জরুরি সেবাদাতা কর্মীকে হত্যা!
জেলা প্রশাসকের দফতরে স্মারকলিপি দিল আওয়ামী লীগ
বিয়ের আশ্বাসে স্বামীর ১১ লাখ টাকা নিয়ে ঘর ছাড়লেন নারী, প্রেমিকের ফাঁদে পড়ে দলবেঁধে ধর্ষণের শিকার
বিয়ে না করেই পঞ্চাশে অন্তঃসত্ত্বা অভিনেত্রী, তোলপাড় নেটদুনিয়া
পারভেজের মৃত্যুতে গ্রামের বাড়িতে মাতম, পাগলপ্রায় মা-বাবা ও একমাত্র বোন
বাংলাদেশের হয়ে খেলতে রাজি কিউবা মিচেল
আসিফ মাহমুদ ও মাহফুজ আলমের পদত্যাগ দাবি করলেন নুর
২০২৫ শেষ হওয়ার আগেই ৫০ সেঞ্চুরিতে দেশের প্রথম এনামুল হক
ভিসা বাতিল করায় ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ভারতীয় ও চীনা শিক্ষার্থীদের মামলা
একনেকে ২৪ হাজার কোটি টাকার ১৬ প্রকল্প অনুমোদন
বিগত ৩ নির্বাচনের সঙ্গে জড়িতদের বিচার চায় এনসিপি
এপ্রিলে ১৯ দিনেই প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স ২১ হাজার কোটি টাকা ছাড়াল
দুইবারের বেশি প্রধানমন্ত্রী না হওয়া নিয়ে বিএনপির অভিমত