শনিবার, ১৫ মার্চ ২০২৫ | ১ চৈত্র ১৪৩১
Dhaka Prokash

খামারীদের ভাগ্য ও মিল্কভিটার অস্তিত্ব দুটোই জলে!

২০০৫ সাল থেকে রায়পুর মিল্কভিটায় দুধ সরবরার করে আসছিলেন দুগ্ধ উৎপাদনকারী খামারী দিলিপ চন্দ্র ঘোষ। তাঁর পারিবারিক তিনটি খামারে গরু-মহিষ থেকে প্রতি প্রতিদিন গড়ে ১ হাজার লিটার হারে বছরে ৩ লক্ষ ৬০ হাজার লিটার দুধ সরবরাহ করতেন তিনি। এতে নিজের স্বাবলম্ভীতার পাশাপাশি সৃষ্টি হয়েছে চরাঞ্চলের কয়েকজন শ্রমিকেরও কর্মসংস্থান। কিন্তু মিল্কভিটা কর্তৃপক্ষ হঠাৎ দুধ সংগ্রহ বন্ধ করে দেয়ায় বিপাকে পড়েন তিনি।

এতে মিল্কভিটা থেকে নেয়া ঋণ ও গো-খাবার সংকট সহ নানা প্রতিকূলতায় লোকসানে পড়ে বাধ্য হয়ে কম দামে গরু বিক্রি করে দিতে হয় তাকে। তাছাড়া গরু মরে এক একটি খামারে প্রায় ২০ লক্ষাধিক টাকার ক্ষতি হয় তার। দিলিপ চন্দ্র ঘোষ রায়পুর মিল্কভিটার আওতাধিন দেনায়েতপুর প্রাথমিক দুগ্ধ উৎপাদনকারী সমবায় ইউনিয়ন লি. এর সভাপতি। এছাড়াও চর কোরালিয়া ও শাকচর নামে দুটি দুগ্ধ উৎপাদক সমবায় সমিতি রয়েছে।

শুধু দিলিপ চন্দ্র ঘোষ-ই-নয়, লক্ষ্মীপুর জেলার রায়পুর উপজেলায় ৩৮টি প্রাথমিক দুগ্ধ উৎপাদকারী সমবায় ইউনিয়ন রয়েছে। প্রতিটি সমবায় ইউনিয়ন এর আওতায় ৩০/৪০জন হারে ৫শতাধিক খামারী উৎপাধিত দুধ মিল্কভিটা সংগ্রহ কেন্দ্রে সরবরাহের সঙ্গে জড়িত। হঠাৎ করে ২০১৮ সালে ৬ জানুয়ারী রায়পুর মিল্কভিটার দুধ শীতলীকরণ কেন্দ্রের দুধ সংগ্রহ কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়া হয়। শীতলীকরণের অত্যাধুনিক মেশিনটিও গত বছর ফেরত নিয়ে যায় উর্ধ্বতণ কর্তৃপক্ষ। এতে খামারীরা সবাই উৎপাদিত দুধ বিক্রি ও ঋণ পরিশোধ নিয়ে বিপাকে পড়েন।

একপর্যায়ে ঋণের ভোজা মাথায় নিয়ে বাধ্য হয়ে দুধ উৎপাদন ও গরু পালন চেড়েছেন চরাঞ্চলের অধিকাংশ খামারী। এদিকে সমবায় খামারীদের বন্টনের জন্য আনা সোয়া ১৮ কোটি টাকা ব্যয়ের উন্নত জাতের মহিষ প্রকল্পেও চরম অনিয়ম-অব্যবস্থাপনায় এখন প্রায় বন্ধের পথে রায়পুর মিল্কভিটার দুগ্ধ কেন্দ্রেটি। এতে ব্যস্তে যেতে বসেছে মিল্কভিটার মাধ্যমে চরাঞ্চলের দারিদ্র বিমোচনে সরকারের বৃহত্তর পরিকল্পনা।

অপরদিকে দুধ সংগ্রহ বন্ধ থাকায় এক দিকে খামারীদের কাছ থেকে ঋণের টাকা পরিশোধ এবং অন্যদিকে খামারীরা মিল্কভিটায় জমাকৃত শেয়ার-সঞ্চয় টাকা ফেরৎ চেয়ে পাল্টা-পাল্টি আইনী নোটিশ চালাচালি করে উভয় পক্ষ। এতে পাওনা নিয়ে সমবায়ী খামারী ও মিল্কভিটার মধ্যে দেখা দিয়েছে দ্বন্দ্ব।

জানা যায়, ১৯৯৮ সালে দুধ উৎপাদনকারী খামারী ও কৃষকদের দারিদ্র বিমোচন ও ন্যায্য প্রাপ্তি নিশ্চিত করণের লক্ষে লক্ষ্মীপুর জেলার রায়পুর উপজেলার মিতালী বাজারে ৫.৪৭ একর এরিয়া নিয়ে দুগ্ধ উৎপাদনকারী সমবায় ইউনিয়ন লিমিটেড নামে দুগ্ধ শীতলীকরণ (ঠান্ডা) ও সরবরাহ কেন্দ্র স্থাপন করে মিল্কভিটা কর্তৃপক্ষ।

এ কেন্দ্রের আওতায় প্রাথমিক দুগ্ধ উৎপাদনকারী সমবায় সমিতি গঠনের মাধ্যমে স্থানীয় খামারীদের কাছ থেকে নির্ধারীত মূল্যে দুধ ক্রয় করতো মিল্কভিটা। ক্রয়কৃত দুধগুলো ৫হাজার লিটার ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন অত্যাধুনিক শীতলীকরণ মেশিনের মাধ্যমে প্রক্রিয়া শেষে ঢাকার মিরপুরে মিল্কভিটার মূল কেন্দ্রে পাঠানো হতো। খামার পরিচালনার জন্য ২০ হাজার থেকে ৭০ হাজার টাকারও অধিক ঋণের পাশাপাশি গবাদিপশুর চিকিৎসা সেবা নিশ্চিতকরণ ও ঔষধ দেয়া হতো সমবায়দের খামারীদের।

দেনায়েতপুর প্রাথমিক দুগ্ধ উৎপাদনকারী সমবায় ইউনিয়ন লি. এর সভাপতি দিলিপ চন্দ্র ঘোষ বলেন, সাপ্তাহে ৪/৫ লক্ষ টাকার দুধ সরবরাহ করা হতো তার খামারগুলো থেকে। শুরুর দিকে ৩২.৮১ টাকা হারে দুধ ক্রয় করেছে মিল্কভিটা। বাজারে যখন ৫০/৬০ টাকা মূল্য তখনও সর্বোচ্চ ৪০ টাকা, ৪২ টাকা হারেও দুধ সংগ্রহ করতো তারা। দুধ বিক্রির অংশ থেকে পরিবহন ব্যয়, সুধের কিস্তির টাকা, শেয়ার খরিদ ৪০ পয়সা, সঞ্চয় ৬৫ পয়সা ও কমিশন ১ টাকা ধরা হতো। তার একটি খামারে ৩০টি গরু ও ৭০টি মহিষ ছিলো। চরে এখন খালি খামারই রয়েছে।

তিনি আরো বলেন, মিল্কভিটা কার্যক্রম বন্ধ করার পর ঋণের কিস্তি নগদ টাকা নেয়া শুরু করে। গত ২০১৯ সালে হঠাৎ সমবায়ী সমিতিগুলোকে ঋণের সম্পন্ন টাকা পরিশোধ করার জন্য আইনী নোটিশ দেয় মিল্কভিটা কর্তৃপক্ষ। কিন্তু মিল্কভিটায় সমবায়ী খামারীদের শেয়ার ও সঞ্চয়ের যে পরিমান আমানত জমা রয়েছে, তা বকেয়া ঋণের থেকেও বেশি টাকা, সেগুলো ফেরত দেয়নি মিল্কভিটা।

কাছিয়ার চর দুগ্ধ উৎপাদনকারী সমবায়ী সমিতির সভাপতি আবুল গাজী, মালেক গাজী, মো. সোহাগ, মোজাম্মেলসহ আমরা স্ব-স্ব সমিতির পক্ষ থেকেও হাইকোটের একজন আইনজীবীর মাধ্যমে শেয়ার ও সঞ্চয়ের টাকা ফেরত চেয়ে মিল্কভিটা কর্তৃপক্ষের নিকট আইনী নোটিশ পাঠাই। এর মধ্যে সমবায়ী সমিতির সভাপতি মালেক গাজী ইতোমধ্যে মারা গেছে। তবে এরপরও খামারীদের সঞ্চয়ের টাকা দেয়নি সংশ্লিষ্ট মিল্কভিটার।

রায়পুর মিল্কভিটার এক কর্মকর্তা বলেন, ৩৮টি সমবায় সমিতি মিল্কভিটা থেকে ঋন নিয়ে খামার পরিচালনা করতো। মিল্কভিটায় দুধ দেয়ার মাধ্যমে কিস্তিতে ঋণের টাকা পরিশোধ করতো তারা। দুধ সংগ্রহ বন্ধ হওয়ার পর থেকে লোকসানে পড়ে খামারীরা নিয়মিত কিস্তি পরিশোধ করতে পারেনি। এতে খামারীদের কাছ ৬০ লক্ষ টাকা বকেয়া ঋণ পড়ে রয়েছে মিল্কভিটার। এজন্য মিল্কভিটা আইননী নোটিশও করেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, এক একটি সমবায় সমিতি প্রতিদিন গরু-মহিষ থেকে উৎপাদিত কমপক্ষে ৪০০/৫০০ লিটার দুধ শর্ত সাপেক্ষে নির্ধারিত স্বল্প মূল্যে রায়পুর মিল্কভিটায় সরবরাহ করতো। এতে গড়ে প্রায় ৩ হাজার লিটার দুধ সংগ্রহ করতেন সংশ্লিষ্টরা। দুধ সংগ্রহ করে মিল্কভিটা লাভের মুখ দেখলেও, লাভের মুখ দেখেনি খামারীরা। তবে বিশেষ প্রকল্পের মাধ্যমে খামারীদের ভাগ্য উন্নয়নের আশ্বাসও দেন কর্তৃপক্ষ। খামারীদের দেয়া সেই আশ্বাস আশ্বাসই রয়ে গেলো।

স্থানীয় সূত্রে আরও জানা যায়, সে সময় কারখানা পরিচালনার দায়িত্ব ছিলেন, ডাঃ ফরহাদ হোসেন। অভিযোগ রয়েছে সমবায় খামারীদের নিকট থেকে ক্রয়কৃত দুধের গুণগত মান নিয়ে অহেতুক বির্তক সৃষ্টি করা হতো। এতে খামারীরাও মিল্কভিটায় দুধ দেয়া নিয়ে অনাগ্রহী হয়ে উঠে। মিল্কভিটা চরাঞ্চলের খামারীদের জন্য আশিরবাদ হিসেবে এলেও কিছু অসাধু কর্মকর্তার ও চক্রের ছত্রছায়ায় ক্ষতির কারণ হয়ে দাড়িয়েছে।

রায়পুরের চরাঞ্চলের খামারীদের ভাগ্য ফেরাতে শীতলীকরণ মেশিনটি পুনরায় স্থাপন করে বাজার মূল্যের সাথে সামঞ্জস্য রেখে মূল্য নির্ধারন পূর্বক দুধ সংগ্রহ করার দাবী জানান স্থানীয় সচেতন মহল। একই সাথে খামারীদের জমাকৃত সঞ্চয়ের টাকা ফেরতসহ বিনা সুধে ঋণের মাধ্যমে খামারীদের পুনরায় সচল রাখার দাবী করেন তারা।

কাছির চর ও চর কোরালিয়ায় কয়েকজন খামারী জানান, মিল্কভিটা দুধের মূল্য যদিও বাজার থেকেও কম দিতো, সেটি আবার প্রজনন বীজ, চিকিৎসা সেবা, ৫% সুধে ঋণ দিয়ে খামারীরে সহযোগিতা করতো। যা চরাঞ্চলের খামারীদের জন্য আশিরবাদ হিসেবে কাজ করতো। কিন্তু খামারে গরুর অসুস্থ হয়ে পড়লে বার বার অনুরোধ করলে চিকিৎসা সেবা পাওয়া যেতো না। তাছাড়া ওষধসহ নানাবিদ প্রনোদনা প্রদানেও রয়েছে সংশ্লিষ্টদের অনিয়ম।

কাজির চর দুগ্ধ উৎপাদনকারী সমবায় সমিতির সভাপতি মফিজ মিয়া বলেন, দুধ সংগ্রহ বন্ধ করে দেয়ার পর খামারীরা দিশেহারা হয়ে কমে সব গুরু বিক্রি করে দেয়। ডাক্তার ফরহাদ থাকা কালে আমার গরুর ভাইরাস রোগ দেখা দিলে অনুরোধ করেও চিকিৎসা সেবা পাইনি। বিনা চিকিৎসায় আমার ৮টি গরু মারা গেছে। বিষয়টি নিয়ে সহযোগীতা চেয়েও মিল্কভিটার কৃর্তপক্ষের পক্ষ থেকে কোন সাড়া পাইনি। ওই সময় আমার ১৫ লক্ষ টাকা লোকসান হয়ে।

মিল্কভিটার দুধ সংগ্রহ পুনরায় চালুর বিষয়ে তিনি বলেন, মিল্কভিটা বড় বড় রাগববোয়ালরা নিয়ন্ত্রণ করে। সেখানে আমরা অনিয়মের প্রতিবাদ করে কিছু করতে পারবো না। বড় অফিসাররা যদি বলে তাহলে কার্যক্রম চালু হবে। অন্যথায় খামারীদের ভাগ্য মাটিতে মিশে থাকবে।

চর কাছিয়া সমাবায় সমিতির সভাপতি বলেন, গরু অসুস্থ হয়ে পড়লে মিল্কভিটা সংশ্লিষ্ট ডাক্তারকে চিকিৎাসার জন্য অনুরোধ করে কোন সেবা না পেয়ে বাধ্য হয়ে আড়াই লক্ষ টাকার গরু মাত্র ৭২ হাজার টাকায় বিক্রি করে দিয়েছি। উল্টো সংশ্লিষ্টরা বলে দুধ সংগ্রহ বন্ধ কিসের চিকিৎসা সেবা।

অপর খামারী বলেন, করোণা কালে ক্ষতিগ্রস্থ খামারীদের প্রনোদনার আওতায় আনা হবে বলে পরিচয়পত্র ও ছবি নিয়ে যায়। কিন্তু করোনার দুই বছর পরও খামারীদের কোন প্রনোদনার আওতায় আনা হয়নি। তবে রাজনীতিক ছত্রছায়ায় এসব প্রনোদনা গায়েব হয়েগেছে বলে জানান ওই খামারী।

উন্নতজাতের মহিষ প্রকল্প:
এদিকে খামারীদের ভাগ্য উন্নেয়নের সোয়া ১৮ কোটি টাকার রায়পুর মহিষ উন্নয়ন প্রকল্পটি অনিয়ম অব্যবস্থাপনায় শূন্য অর্জনেই মেয়াদ উত্তির্ণ হয়ে ভেস্তে যাওয়ায় এমন অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। দুধ ও মাংসের উৎপাদন বৃদ্ধিসহ খামারিদের ভাগ্য উন্নয়নের লক্ষ্যে গৃহিত প্রকল্পে ব্যাপক সম্ভবনা থাকলেও নীতিমালা অনুযায়ী প্রত্যাশা পুরণ হয়নি। এতে স্থানীয় ৫ শতাধিক সমবায়ী খামারীদের দেয়া আশ্বাস আশ্বাসই রয়ে গেছে। এসব খামারীদের মাঝে সৃষ্টি হয় চরম ক্ষোভ। তবুও সংশ্লিষ্টরা বলছে কার্যক্রম চলমান রয়েছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, দুধ ও মাংসের পাশাপাশি খামারীদের ভাগ্য উন্নয়নের সেই বিশেষ প্রকল্পটি রায়পুর মহিষ উন্নয়ন ও কৃক্রিম প্রজনন প্রকল্প নামে অনুমোদন লাভ করে। সরকারি ৭৫ ভাগ ও মিল্কভিটা সমবায়ীদের ২৫ ভাগ অর্থায়নে ১৮ কোটি ২৩ লক্ষ ৪৭ হাজার টাকা ব্যায়ের এ প্রকল্পটি ২০১৩ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যস্ত বাস্তবায়নের মেয়াদ কাল ধরা হয়। এর মধ্যে ভারতের থেকে উন্নত মুররাহ্ জাতের ২০০টি গাভী, ২০০টি বাছুর ও ১০টি ষাঁড় মহিষ ক্রয় করে কর্তৃপক্ষ।

ক্রয়কৃত এসব মহিষের বেশির ভাগ স্থানীয় ক্ষুদ্র সমবায়ী খামারীদের মাঝে ভুর্তকি মূল্যে বিতরণ করা ও ষাড় মহিষ থেকে সংগৃহিত বীজ (সীমেন) খামারীদের দেশীয় প্রজাতীর মহিষে সরবরাহ করার কথা ছিলো। যা করা হলে দেশীয় প্রজাতির সাধারণ মহিষ থেকে যেখানে পাওয়া যেত আড়াই থেকে ৩ কেজি দুধ আর প্রজনন উন্নয়নের পর ওই জাতের মহিষ থেকে পাওয়া যেত ৮ থেকে ১০ কেজি দুধ। দুধ ও মাংসের উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে বাস্তবায়ন, উন্নত খামার প্রতিষ্ঠায় প্রশিক্ষিত খামারীরা বেশ লাভবান হয়ে আগ্রহী হয়ে উঠতো।

রায়পুর কাজির চর দুগ্ধ উৎপাদকারী সমবায় সমিতির কয়েকজন খামারী বলেন, মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী মহিষ গুলো মূলত আনা হয়েছে সমবায়ী খামারীদের বন্টন করার জন্য। কিন্তু এখানকার সংশ্লিষ্টরা কি কারণে মহিষগুলো খামারীদের বন্টন না করে নিজেরাই পালন করা শুরু করেছে।

পরে তারা জানায় সমবায়ীতে দুধ উৎপাদন কম দেখে কর্তৃপক্ষের নিদেশেই তারা নিজেরা রাখাল নিয়োগ করে মহিষ পালন শুরু করে, দুধের ঘাটতি পুরন করার জন্য। কিন্তু উন্নত জাতের মহিষ থেকে উৎপাদিত দুধ দায়িত্বে থাকা ডাঃ ফরহাদ লোভে পড়ে, টাকার বিনিময়ে টেন্ডারের মাধ্যমে মহিষের দুধ বাহিরে বিক্রি করে দেয়। কারখানায় উৎপাদিত মহিষের দুধ যদি সমবায়ের সাথে যোগ করা হতো। তাহলে রায়পুর মিল্কভিটার দুধ সংগ্রহ করণ কার্যক্রম বন্ধ হতো না।

একই কথা জানান খামারী আবুল গাজী, তিনি বলেন, দুধসংগ্রহ বন্ধের পর থেকে জোড়াতালী দিয়ে খামার চালিয়ে যাচ্ছি। গো খাদ্যের দাম বৃদ্ধির কারণে আমার খামারও বন্ধের পথে। মিল্কভিটার শীতলীকরণ মেশিন চালু করতে ৩০০ লিটার দুধ লাগে, রায়পুর কারখানায় ৩০০ লিটারেরও বেশি দুধ খামারীদের নিকট থেকে সংগ্রহ হতো।

অথচ মিল্কভিটায় যে মহিষের প্রকল্প রয়েছে সেখানে ২০০ লিটার দুধ হয়। কিন্তু মহিষের দুধ গুলো সংশ্লিষ্টরা লাভের জন্য বাহিরের বাজারে বেশি দামে বিক্রি করে দেয়। যার জন্য দুধ সংগ্রহ কার্যক্রম শুরু করতে পারেনি। এর জন্য সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারাই দায়ী। আর খেসারতও দিতে হয়েছে আমারা সমবায়ী খামারীদের।

তিনি আরও বলেন, কৃষক ও খামারীরা স্বাভলম্বী হওয়ার জন্য ভালো একটি সংস্থা মিল্কভিটা। কিন্তু সংস্থাটিতে কিছু অসাধু কর্মকর্তা সর্বনাশ করে দিয়েছে।

অভিযোগের বিষয় অস্বীকার করে ডা. ফরহাদুল আলম বলেন, আমার বদলি হয়েছে দুই বছর পূর্বে। বর্তমানে খুনলা বিভাগের একটা পদে আছি। রায়পুর মিল্কভিটা কেন্দ্রে একজন প্রজেক্ট ডিরেক্টর (পিডি) ছিলো, স্বার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ করার জন্য। এতে অনিয়ম করার কোন সুযোগ নেই। খামারীদের সর্বাত্তক সহযোগিতা করার চেষ্টা করেছি। যারা স্বার্থ হাসিল করতে পারেনি, তারাই আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করে আমাকে বদলি করেছে। আমি কোন অনিমের সাথে জড়িত ছিলাম না।

এদিকে প্রকল্পের আওতায় খামারীদের সেবা দেওয়ার জন্য মিল্কভিটায় ৫টি শেড, একটি বীজাগার মেশিন, একটি গবেষণাগার, প্রজনন মেশিন, আধুনিক নিক্তিসহ বিভিন্ন যন্ত্রাংশ স্থাপন করা হয়। কিন্তু সরজমিনে দেখা যায় ৫টি শেডেই রাখা হয়েছে মহিষ।

রায়পুর মিল্কভিটার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা ডাঃ আশ্রাফুজ্জামান বলেন, এখনপর্যন্ত প্রকল্পের অগ্রগতি সন্তোষজনক। কর্তৃপক্ষের নিদেশনা অনুযায়ী উন্নত জাতের মহিষগুলো রাখাল নিয়োগের মাধ্যমে দেখ বাল করা হচ্ছে। তাছাড়া কেন্দ্রের ভেতরেই ঘাস উৎপাদক করা হয় মহিষের জন্য। বিগত ৫বছর পূর্বে ১০০টি মহিষ আনা হয় এ কেন্দ্রে। বর্তমানে গাভী ও চাছুরসহ ১৬৩টি মহিষ আছে মিল্কভিটায়। প্রথমবার ৮০ মহিষ বিক্রি করা হয়েছে। এতে দেড় কোটি টাকা মিল্কভিটার আয় হয়েছে।

দুধ সংগ্রহ বন্ধ ও বকেয়া ঋণ আদায়ের বিষয়ে জানতে চাইলে ডাঃ আশ্রাফুজ্জামান বলেন, এসব বিষয়ে মন্তব্য করতে উর্ধ্বতণ কর্তৃপক্ষের নিদেশনা প্রয়োজন। শীতলীকরণ মেশিনের চাহিদা মত দুধ না পাওয়ায় মেশিন নিয়ে যায় কর্তৃপক্ষ। কিন্তু খামারীরা মিল্কভিটায় দুধের দাম কম দেখে বাজারে মিষ্টির দোকানগুলোতে দেয়। খামারীরা দুধ দিতে চাইলে রামগঞ্জ কেন্দ্রের মাধ্যমে সংগ্রহ করা হবে। তবে এখানে উৎপাদিত মহিষের দুধ টেন্ডারের মাধ্যমে বাহিরে বিক্রি করে রাজস্ব আয় হয়।
এএজেড

Header Ad
Header Ad

বাংলাদেশি ২৪ জেলেকে ফেরত দিলো আরাকান আর্মি

ছবি: সংগৃহীত

মিয়ানমারের বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র সংগঠন আরাকান আর্মির হাতে আটক ২৪ বাংলাদেশি জেলে শনিবার (১৫ মার্চ) বিকেলে কক্সবাজারের টেকনাফে ফেরত এসেছে। শনিবার (১৫ মার্চ) বিকেলে টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপের জেটি ঘাট দিয়ে বাংলাদেশি এসব জেলেকে ফেরত এনেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)।

টেকনাফ ২ বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্নেল আশিকুর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

তিনি জানান, সেন্টমার্টিন থেকে একটু দূরের এলাকা থেকে ধরে নিয়ে যাওয়া ২৪ বাংলাদেশি জেলেকে ফেরত দেওয়া হয়েছে। তাদের শাহপরীর দ্বীপের জেটি ঘাট দিয়ে আনা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে মেডিকেল টেস্ট করা হচ্ছে। এরপর তাদের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।

লে. কর্নেল আশিকুর রহমান জানান, জেলেরা মাছ ধরতে ধরতে এক সময় ভুলবশত বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের শূন্য লাইন অতিক্রম করে মিয়ানমারের জলসীমার ঢুকে পড়ে। এ কারণে তাদের ধরে নিয়ে যায়। এটি নিয়ে জেলেদের সচেতন করা হচ্ছে।

টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ এহসান বলেন, সাগরে মাছ ধরতে গিয়ে মিয়ানমারের বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র সংগঠন আরকান আর্মির হাতে আটক হাওয়া জেলেদের ফেরত আনা হয়েছে। তাদের পরিবারের কাছে হস্তান্তরের প্রক্রিয়া চলছে।

Header Ad
Header Ad

‘ধর্ষণ’ শব্দের বদলে ‘নারী নির্যাতন’ ব্যবহারের অনুরোধ ডিএমপি কমিশনারের

ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএম‌পি) ক‌মিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী। ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএম‌পি) ক‌মিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী গণমাধ্যমে ‘ধর্ষণ’ শব্দটি ব্যবহার না করার অনুরোধ জানিয়েছেন। এর বদলে তিনি ‘নারী নির্যাতন’ বা ‘নারী নিপীড়ন’ শব্দ ব্যবহারের অনুরোধ জানিয়েছেন।

শনিবার (১৫ মার্চ) ঢাকার কাজী নজরুল ইসলাম অ্যাভিনিউয়ে ডেইলি স্টার ভবনে আয়োজিত ‘হেল্প’ অ্যাপের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। ব্রডকাস্ট জার্নালিস্ট সেন্টার (বিজেসি) ও সুইচ বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন যৌথভাবে অ্যাপটি চালু করেছে। যা গণপরিবহনে নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।

ডিএম‌পি ক‌মিশনার বলেন, আমি দুইটি শব্দ খুব অপছন্দ করি, এর মধ্যে একটি হলো ‘ধর্ষণ’। আপনাদের কাছে অনুরোধ, এটা ব্যবহার করবেন না। আপনারা ‘নারী নির্যাতন’ বা ‘নিপীড়ন’ বলবেন। আমাদের আইনেও নারী ও শিশু নির্যাতন বলা হয়েছে। যে শব্দগুলো শুনতে খারাপ লাগে, সেগুলো আমরা না বলি।

যেসব ঘটনা জনমনে আতঙ্ক বা ভয় সৃষ্টি করে, তা কম দেখানোর অনুরোধ জানিয়েছেন শেখ সাজ্জাত আলী। একটি গণমাধ্যমের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, তারা বসিলার একটি ছিনতাইয়ের ঘটনা, আমরা ডিটেক্ট করেছি। দুই–তিন ঘণ্টায় কয়েকবার দেখিয়েছে। যেসব ঘটনা প্যানিক সৃষ্টি করে, সেন্স অব ইনসিকিউরিটি তৈরি করে, তা যদি আপনারা বারবার না দেখান তাহলেই আমার মনে হয় ভালো হবে।

অনুষ্ঠানে ম‌হিলা প‌রিষ‌দের সভাপ‌তি ডা. ফৌ‌জিয়া মোস‌লেম ব‌লেন, কমিউনিটির সম্পৃক্তরা ছাড়া এই সমস্যা থেকে আমরা কোনোভাবেই বেরিয়ে আসতে পারব না। তি‌নি ব‌লেন, একটি মেয়ে ধর্ষিত হলে পুরো দেশ ধর্ষিত হয়। এটি কোনো ব্যক্তির ইস্যু নয়, এটি একটি সামাজিক ইস্যু, পুরো দেশের ইস্যু।

সুইচ বাংলা‌দে‌শের নির্বাহী প‌রিচালক মাইনুল আহসান ফয়সাল ব‌লেন, প‌রিসংখ‌্যনে দেখা গে‌ছে, গণপরিবহণে ৬৪ শতাংশ নারী বিভিন্ন ধরণের হ্যারাজমেন্টের শিকার হচ্ছে। এসব হ্যারাজমেন্ট কমাতেই আমাদের এই অ্যাপ।

সভাপ‌তির বক্ত‌ব্যে বি‌জে‌সির চেয়ারম‌্যান রে‌জোয়ানুল হক ব‌লেন, ধর্ষণ শব্দটি ব্যবহার না করে ঘটনার ভয়াবহতা বোঝাতে ভিন্ন কী শব্দ ব্যবহার করা যেতে পারে সে বিষয়ে ভাবা যেতে পারে। নারী নির্যাতন প্রতিরোধে সব ধরনের সংগঠনকে এগিয়ে আসার আহ্বানও জানান তিনি।

অনুষ্ঠা‌নে আরও বক্তব‌্য রা‌খেন স‌লিউশন স্পি‌নের প‌রিচালক আব্দ‌ুল্লাহ্ আল সা‌লেহ, বি‌জে‌সির সদস‌্য স‌চিব ইলিয়াস হো‌সেন। এ ছাড়াও উপস্থিত ছি‌লেন, বি‌জে‌সির ট্রেজারার মানস ঘোষ, ট্রা‌স্টি নূর সাফা জুলহাজ ও তালাত মামুন।

Header Ad
Header Ad

চুয়াডাঙ্গায় দুই ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে ৯০ হাজার টাকা জরিমানা

ভেজাল শিশু খাদ্য ধ্বংস। ছবি: ঢাকাপ্রকাশ

চুয়াডাঙ্গার কার্পাসডাঙ্গা বাজারে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের তদারকিতে দুটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করা হয়েছে। শনিবার (১৫ মার্চ) সকাল ১১টা থেকে ২টা পর্যন্ত নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য, শিশু খাদ্য ও বেকারী পণ্য সংক্রান্ত তদারকি কার্যক্রম পরিচালিত হয়।

চুয়াডাঙ্গা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ মামুনুল হাসান জানান, মেসার্স কালাম স্টোরের মালিক আবুল কালামকে কোমল পানি উৎপাদন সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় তথ্য এবং কেনা সংক্রান্ত কাগজপত্র না থাকার কারণে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন, ২০০৯ এর ধারা ৩৭ ও ৪৫ অনুসারে ৭০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।

অপরদিকে, মেসার্স গাউছিয়া ফুডের মালিক হাফিজুর রহমানকে বেকারী পণ্য অপরিচ্ছন্ন পরিবেশে সংরক্ষণ এবং নিম্নমানের সুগন্ধী ব্যবহার করার জন্য ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন, ২০০৯ এর ধারা ৪৩ অনুসারে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।

এসময়, ১৫০ বস্তা কোমল পানি জব্দ করে পুড়িয়ে ধ্বংস করা হয়। তদারকি কার্যক্রমে প্রতিষ্ঠানগুলোকে মানসম্মত পরিচ্ছন্ন পরিবেশে পণ্য তৈরী ও সংরক্ষণ এবং অনুমোদিত পানীয় ও শিশু খাদ্য বিক্রি করার জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়।

তদারকি কার্যক্রমে ক্যাবের সদস্য রফিকুল ইসলাম ও জেলা পুলিশের একটি দল সার্বিক সহযোগিতা প্রদান করেন।

Header Ad
Header Ad

সর্বশেষ সংবাদ

বাংলাদেশি ২৪ জেলেকে ফেরত দিলো আরাকান আর্মি
‘ধর্ষণ’ শব্দের বদলে ‘নারী নির্যাতন’ ব্যবহারের অনুরোধ ডিএমপি কমিশনারের
চুয়াডাঙ্গায় দুই ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে ৯০ হাজার টাকা জরিমানা
সহকর্মীর সঙ্গে প্রেম, যেসব বিষয়ে সতর্ক থাকা জরুরী
মাগুরায় শিশু ধর্ষণ: আদালতে দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দিলেন ধর্ষক হিটু শেখ
স্ত্রী,সন্তানসহ ৯ সফরসঙ্গী নিয়ে ঢাকা আসছেন হামজা, বরণে প্রস্তুত বাফুফে
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার প্রবেশপত্র বিতরণ শুরু
বিরামপুরে মাদকসহ ১৬ লক্ষাধিক টাকার ভারতীয় মালামাল জব্দ, আটক ১
প্রাথমিকের শূন্যপদে নিয়োগ শিগগিরই
জাতিসংঘ মহাসচিবের সঙ্গে বৈঠক শেষে যা বললেন বিএনপি মহাসচিব
গৃহবধূকে ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগে বৃদ্ধ আটক
রাজশাহী স্টেশনে ধুমকেতু ও বাংলাবান্ধা ট্রেনের সংঘর্ষ
নওগাঁ মেডিকেল কলেজ বন্ধ হলে চাল সরবরাহ বন্ধসহ কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি
দেশে তিন মাসেই কোটিপতি হয়েছেন ৫ হাজার
পাকিস্তান থেকে এলো ২৬ হাজার টন আতপ চাল
বাংলাদেশের সংকটে পাশে থাকার ঘোষণা জাতিসংঘ মহাসচিবের
অধ্যাপক আরেফিন সিদ্দিকের মৃত্যুতে ঢাবিতে এক দিনের ছুটি ঘোষণা  
স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগে ইফতার ও দোয়া মাহফিল
ট্রাম্পের অনুরোধের পর ইউক্রেনের সেনাদের আত্মসমর্পণের আহ্বান পুতিনের
এক বছর পর ব্রাজিল জাতীয় দলে ডাক পেয়েই আবার ইনজুরিতে নেইমার