তিন পুলিশ কর্মকর্তার বেতন বন্ধে আদালতের নির্দেশ
আদালতের আদেশ উপেক্ষা করায় কুড়িগ্রাম চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত তিন পুলিশ কর্মকর্তার বেতন বন্ধের নির্দেশ দিয়েছেন। একই সঙ্গে পরবর্তী তারিখে স্ব-শরীরে হাজির হয়ে কারণ দর্শানো নোটিশের জবাব দিতে বলা হয়েছে। বিচারিক আদালাতে সাক্ষীর জন্য মামলা থাকলেও অভিযুক্ত পুলিশ কর্মকর্তারা ১১ থেকে ২২ কার্য দিবস আদালতের আদেশ কপি পেয়েও হাজির না হওয়ায় বিচারক ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
যা আদালত অবমাননার সামিল মর্মে প্রতিয়মান হওয়ায় জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ৩য় আদালতের বিচারক মোঃ মজনু মিয়া এ আদেশ দেন। আদেশে বলা হয় আদালতের আদেশ ও সমন পেয়ে আদালতে হাজির না হওয়া সিআরপিসি এর ৪৮৫(এ) ধারা অনুযায়ী শাস্তি যোগ্য অপরাধ।
এ ছাড়া সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট ডিভিশন বেঞ্চ মাননীয় বিচারপতি এম এনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান এর সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ ফৌজদারী আপীল নং-৭২৫/২০১৯ এ মোঃ রাহেলা ওরফে রায়হান বনাম রাস্ট্র ও ফৌজদারী আপীল নং-৭৩৫৭/২০১৯ এ মোঃ সেকেন্দার আলী বনাম রাস্ট্র এর বিগত ০৮/০৭/২০১৯ইং তারিখের সিদ্ধান্ত অনুসারে যেসব সরকারি কর্মচারী মামলায় সাক্ষী রয়েছে, তারা যদি সাক্ষ্য দিতে আদালতে হাজির না হন, তাহলে অন্যান্য নির্দেশনার পাশাপাশি তাদের বেতন আটক দেওয়ার নির্দেশনা রয়েছে।
কুড়িগ্রামের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রুহুল আমিন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, এ সংক্রান্ত পৃথক তিনটি আদালতের আদেশ মঙ্গলবার পেয়েছেন। এ ব্যাপারে আইনানুগ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এ বিচারিক আদালতের সরকারি আইন কর্মকর্তা (এ পি পি) অ্যাডভোকেট লুৎফর রহমান বলেন, সময় মতো সাক্ষী না আসায় বিচার কাজ বিলম্বিত হচ্ছিল। ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার স্বার্থে আদালত এ আদেশ দেন। আদেশে বলা হয়-সার্বিক বিবেচনায় অত্র মামলায় উল্লেখিত সাক্ষীর বিরুদ্ধে এর ৪৫৮ (এ) ধারার অপরাধ আমলে নেওয়া হলো।
উক্ত ধারা মতে সংক্ষিপ্ত বিচারের মাধ্যমে কেন অত্র মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও এজাহারকারী কর্মকর্তার সাজা প্রদান করা হবে না তৎমর্মে আগামী ধার্য্য তারিখে স্ব-শরীরে হাজির হয়ে কারণ দর্শানোর নির্দেশ প্রদান করা হলো।
আরো আদেশ হলো যে, অত্র আদালত কর্তৃক ইস্যুকৃত কোর্ট সার্টিফিকেট সংশ্লিষ্ট শাখায় জমা না দেওয়া পর্যন্ত অথবা অত্র আদালত কর্তৃক পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত বর্ণিত সাক্ষীর বেতন আটক রাখার নির্দেশনা রইলো। অত্র আদেশের কপি অবগতি ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট সকলকে প্রদান করা হোক।
এ সংক্রান্ত আদেশের কপি ডিআইজি রংপুর, পুলিশ সুপার কুড়িগ্রাম এবং সংশ্লিষ্ট থানার অফিসার ইনচার্জকে কার্যার্থে ও জ্ঞাতার্থে প্রেরণ করা হয়। আদেশের কপি পাঠানো হয় অভিযুক্ত তিন পুলিশ কর্মকর্তা বরাবর।
জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ৩য় আদালতের পেশকার লিয়াকত আলী বলেন,রাজিবপুর থানার জিআর মামলা নং-৪৭/২০১৯ এ বিচার প্রার্থীদের ন্যায় বিচার দেয়ার সার্থে জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ৩য় আদালত থেকে (বিচারিক আদালত) তদন্তকারী কর্মকর্তা রাজিবপুর থানার এসআই মোঃ আবু বক্কর সিদ্দিক (যার বিপি নং-৭৫৯৫০২৪৮৯৭ কে বিগত ২২/০৩/২০২০ আদালতে হাজির হয়ে সাক্ষ্য দিতে সমন ইস্যু করা হয়। কিন্তু তিনি হাজির হননি। শুধু তাই নয় বিচারিক আদালত থেকে পর্যায়ক্রমে ২২টি ধার্য্য তারিখ ইস্যু করা হলেও তিনি হাজির না হয়ে আদালত অবমাননা করেছেন।
এ মামলার এসআই আবু বক্কর সিদ্দিককে আগামী ১৩/০২/২০২৩ তারিখ স্ব-শরীরে আদালতে হাজির হয়ে কারণ দর্শানোর জবাব দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। রাজারহাট থানার জিআর মামলা নং-৬৪/২০২১ এর এজাহারকারী এসআই তসির উদ্দিন মামলায় সাক্ষী দিতে আসেননি ১১ধার্য্য তারিখ। তাকে স্ব-শরীরে শোকজের জবাবসহ সাক্ষী দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে আগামী ১৩ ফেব্রুয়ারী।
অপর মামলা রাজারহাট থানার জিআর-২০৩/২০১৯ এর তদন্তকারী কর্মকর্তা এস আই আশেদুজ্জামান বিচারিক আদালতে বিচারকের নির্দেশ উপেক্ষা করে গত ১৯ ধার্য্য তারিখ অনুপস্থিত ছিলেন। তাকে আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারী স্ব-শরীরে আদালতে হাজির হয়ে কারণ দর্শনানো নোটিশের জবাব এবং মামলার সাক্ষী দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়। এ তিনটি মামলা শুনানী হয় গত বৃহস্পতিবার ০৫ জানুয়ারি বিচারক সাক্ষীদের আদলত অবজ্ঞা করায় ক্ষোভ প্রকাশ করে এ আদেশ দেন। আর বিচারক লিখিত আদেশে স্বাক্ষর করেন সোমবার ৯ জানুয়ারি।
রাজারহাট থানার জিআর-২০৩/২০১৯ এর আসামী পক্ষের আইনজীবী জিন্নাত আরা পারুল বলেন, এটি মাদক মামলা। আসামী ২জন হায়বর ও বিপ্লব। মাদকের পরিমান ৫০ গ্রাম করে ১০০গ্রাম গাঁজা রাখার অভিযোগ। প্রায় চার বছর ধরে মামলা চলছে। আসামীরা নিয়মিত হাজিরা দিলেও রাস্ট্রপক্ষ সাক্ষী না দেয়ায় ন্যায় বিচার মিলছে না। আদালত ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠায় এবং হয়রানী বন্ধে সাহসী আদেশ দিয়েছেন।
কুড়িগ্রামের পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট এসএম আব্রাহাম লিংকন বলেন, আদালতের এ আদেশের ফলে আগামীতে সকল সরকারি দপ্তরের সাক্ষীদের অনুপস্থিতি হ্রাস পাবে। যা মামলা নিষ্পত্তিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। ইচ্ছাকৃত অনুপস্থিতি রহিত হবে। বিভিন্ন মামলায় সাক্ষী দেয়া সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পবিত্র দায়িত্ব। তা না হলে ব্যাহত হয় বিচার কার্যক্রম। হয়রানির শিকার হবে বিচার প্রার্থী। সময় নষ্ট হবে বিচার বিভাগের। অর্থের অপচয় ঘটে রাস্ট্রের। এসব কারণেই মামলার জট ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। তা আর চলতে দেয়া যায় না ন্যায় বিচারের স্বার্থে।
এএজেড