খাবারের দোকানে নেই নজরদারি, স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে লাখো মানুষ
গাজীপুরের শ্রীপুরে অবাধে গড়ে উঠছে খাবারের দোকান-রেস্তোরাঁ। নিয়ম-কানুনের বালাই নেই এসব ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে। অধিক মুনাফার লোভে রেস্তোরা পরিচালকরা অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে অখাদ্য, বাসি, পচা খাবার পরিবেশন করছে ভোক্তাদের সামনে। সঙ্গে ফুটপাথ ঘিরেও গড়ে উঠছে অনেক খাবারের দোকান। নিরাপদ খাবারের অভাবে স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়েছে উপজেলার লাখো মানুষ।
উপজেলার অন্যতম ব্যস্ততম এলাকা মাওনা চৌরাস্তায় অনিয়মভাবে পরিচালিত হচ্ছে অর্ধশত রেস্তোরাঁ। বিকাল হলেই সড়কের পাশে ফুটপাত দখল করে বিভিন্ন মুখরোচক খাবারের দোকানের পসরা সাজিয়ে বসেন বিক্রেতারা। মাওনা চৌরাস্তার বরমী হোটেল এন্ড মিষ্টি ঘর, রাজধানী হোটেল, নিউ চাদপুর হোটেল, সুমন বিরানীসহ আরো বেশ কয়েকটি রেস্তোরাঁ মহাসড়কের পাশে ফুটপাত দখল করে অবৈধভাবে পরিচালিত হচ্ছে।
সম্প্রতি ইয়াকুব আলী মাষ্টার টাওয়ারের পেছনের গলির চিকেন ফ্রাইয়ের দোকানের প্রস্তুত করা খাবার তৈরি হচ্ছে একটি টয়লেটের ভেতর, এমন দৃশ্যও দেখা গেছে। মাওনা চৌরাস্তার ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক দখল করে বিকাল হতেই ভ্রাম্যমাণ ভ্যানগাড়ী বসিয়ে সেখানে চলে অস্বাস্থ্যকর খাবার বিক্রির প্রতিযোগিতা। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে তৈরি হালিম, পেয়াজু, পুড়ি, সিঙ্গারা বিভিন্ন ছোলা বুট খোলা বাজারে বিক্রি হচ্ছে। মবিল দিয়ে তৈরি বিশেষ তেল, পুড়া তেলের তৈরি খাবার ও ফুটপাতের খোলা খাবারে নানা ধরনের জীবাণুর কারণে স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়েছেন অনেকে।
এসব বিষয়ে দেখাশোনার দায়িত্বে থাকা শ্রীপুর উপজেলা স্যানিটারী ইন্সপেক্টর রফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে নিয়মিত মাসহারা আদায়ের অভিযোগ রয়েছে। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি প্রতিটি ভ্রাম্যমাণ দোকান, রেস্তোরাঁ, বেকারী, মুদির দোকান থেকে মাসোহারা আদায় আদায় করেন। তার মাসোহারার একটি ভাগ পায় সংশ্লিষ্ট স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা। যদিও প্রায় অর্ধশত দোকান হতে বিভিন্ন অংকের টাকা নেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন এই সরকারি কর্মকর্তা।
স্থানীয় স্বাস্থ্য বিভাগ জানায়, একটি রেস্তোরাঁ স্থাপনের জন্য বিধি মোতাবেক সিভিল সার্জনের কাছ থেকে লাইসেন্স নিতে হয়। সেই সাথে ব্যবসা পরিচালনার জন্য স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের কাছ হতে ট্রেড লাইসেন্স ও সিভিল সার্জনের কাছ হতে রেস্তোরাঁয় কর্মরত শ্রমিকদের ফিটনেস সার্টিফিকেট নিতে হয়। তবে অভিযোগ রয়েছে রেস্তোরাঁ গড়ে তোলার যোগ্যতা না থাকা সত্বেও সিভিল সার্জন অফিসকে নিয়মিত টাকা দিলেই মেলে অনুমোদন।
বেশ কয়েকটি রেস্তোরাঁ ঘুরে দেখা যায়, কিচেন রুমের অবস্থা খুবই খারাপ। এর সাথে প্রতিটি রেস্তোরাঁয় স্বল্প বেতনের কর্মচারী হিসেবে শিশু শ্রমিকদের বেছে নেওয়া হয়। প্রতিটি রেস্তোরাঁয় নিম্নমানের পণ্য ব্যবহার করা হয়। খাবার মুখরোচক করতে ব্যবহৃত হয় নানা ধরনের কেমিক্যাল। রোগাক্রান্ত পশু-পাখির মাংস ও ভোক্তাদের খাবার হিসেবে ব্যবহার করা হয়। অভিযানের খবর পেলেই রেস্তোরাঁ বন্ধ করে গা ঢাকা দেয় অনেকে। অবাদে গড়ে উঠা এসব রেস্তোরাঁর কারণে স্থানীয় পরিবেশের উপরও হুমকি তৈরি হচ্ছে। অনেকেই ঝুঁকিপূর্ণভাবে ফুটপাতের উপর গ্যাসের বোতল (জ্বালানি) ব্যবহার করায় তা বিস্ফোরণ ও অগ্নিকাণ্ডের ঝুঁকিতে সাধারণ মানুষের হতাহতেরও আশঙ্কা রয়েছে।
এ ব্যাপারে গাজীপুর জেলার নিরাপদ খাদ্য কর্মকর্তা ফারজানা ইয়াসমিন সোনিয়া জানান, নিরাপদ খাদ্য প্রতিটি মানুষের অধিকার। তা নিশ্চিতে আমরা কাজ করছি। সবার আগে সেই বিষয়টি তা হলো সচেতনতার অভাব। সচেতনতা সৃষ্টি করতে ভোক্তা ও রেস্তোরাঁ কর্তৃপক্ষের প্রশিক্ষণ, সেমিনারসহ নানা ভাবে কাজ হচ্ছে।
এ বিষয়ে গাজীপুর জেলা সিভিল সার্জন ডা. খায়রুজ্জামান জানান, আমরা প্রতিটি উপজেলায় একজন স্যানেটারী ইন্সপেক্টর দিয়ে এসব রেস্তোরাঁ নজরদারি করছি। তারা যে রিপোর্ট দেয় সিই অনুযায়ী আমরা ব্যবস্থা নিয়ে থাকি। কোনো প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে যদি অভিযোগ পাওয়া যায় তখন। এ ছাড়াও জেলা প্রশাসন, ভোক্তা অধিকারের উদ্যোগে নিয়মিত ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হচ্ছে।
এসআইএইচ