জমির উপরিভাগের মাটি বিক্রি, ফলন কমার আশঙ্কা
সরকারি আইন লঙ্ঘন করে নওগাঁয় কৃষিজমির মাটি অবৈধ ইটভাটায় সরবরাহ করা হচ্ছে। উপরের অংশের মাটি কেটে নেওয়ায় জমির উর্বরতা শক্তি কমে যাচ্ছে। জমির মালিকেরা টাকার আশায় এসব মাটি না বুঝে বিক্রি করে দিচ্ছেন। এভাবে অপরিকল্পিতভাবে মাটি খনন করায় উৎপাদন কমার আশঙ্কা করছে কৃষি বিভাগ।
১৯৮৯ সালের ইট পোড়ানো নিয়ন্ত্রণ আইন (সংশোধিত ২০০১) অনুযায়ী, কৃষিজমির টপ সয়েল বা উপরিভাগের মাটি কেটে বিক্রি করে জমির শ্রেণি পরিবর্তন করা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। এসব কাজে জড়িত ব্যক্তিদের সর্বোচ্চ ২ লাখ টাকা জরিমানা ও ২ বছরের কারাদণ্ড দেওয়ার বিধান রয়েছে।
জেলা পরিবেশ অধিদপ্তর ও জেলা প্রশাসনের হিসাব মতে, জেলার ১১টি উপজেলায় ইটভাটা রয়েছে ২০৮টি। এর মধ্যে পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র পেয়েছে মাত্র ৯টি। বাকি ১৯৯টি ভাটার পরিবেশের ছাড়পত্র নেই। এরপরও এসব ভাটায় থেমে নেই ইট পোড়ানো। ইট তৈরির প্রধান কাঁচামাল মাটি। ফসলি জমির মাটি ইট তৈরির জন্যও ভালো। বছরের পর বছর কৃষকদের অসচেতনতার সুযোগে এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী কৃষিজমির উপরিভাগের মাটি কিনে নেন। এরপর তারা সেই মাটি বেশি দামে ইটভাটায় সরবরাহ করেন।
গত শনিবার মহাদেবপুর উপজেলার চান্দাশ এলাকার একটি ফসলি মাঠে গিয়ে দেখা যায়, খননযন্ত্র দিয়ে ফসলি জমির মাটি খনন করছেন কয়েকজন শ্রমিক। জমির মালিক চান্দাশ গ্রামের কৃষক আশাদুল ইসলাম বলেন, তার জমি মাঠের অন্য জমির চেয়ে একটু উঁচু হওয়ায় সবজির আবাদ ভালো হতো। তবে ধানের আবাদ করার জন্য আড়াই বিঘা জমির মাটি ইটভাটায় ৪০ হাজার টাকায় বিক্রি করেছেন। জমির উপরিভাগ থেকে আড়াই থেকে তিন ফুট মাটি কেটে নেওয়ার চুক্তি হয়েছে।
জমির উপরিভাগের মাটি বিক্রি করায় জমির কী ধরনের ক্ষতি হতে পারে জিজ্ঞেস করলে কৃষক আশাদুল জানান, এ বিষয়ে তিনি তেমন কিছু জানেন না।
বাগডোব গ্রামের এবাদুল হক, আমজাদ হোসেন বলেন, মূলত ফসলি জমির উপরের অংশের মাটি তিন থেকে চার ফুট পর্যন্ত ইটভাটায় বিক্রি করা হয়ে থাকে। এতে ওই সব জমিতে দেড় থেকে দুই বছর তেমন ফসল উৎপাদন হয় না। প্রচুর পরিমাণ জৈব সার, খৈল, জিপসাম, ফসফেট, পটাশসহ বিভিন্ন সার ব্যবহার করতে হয় ভালো ফলনের জন্য।
পত্নীতলা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা প্রকাশ চন্দ্র সরকার বলেন, মাটি চারটি উপাদানের সমন্বয়ে গঠিত। যার মধ্যে খনিজ পদার্থ ৪৫ শতাংশ, জৈব পদার্থ ৫ শতাংশ, বায়ু ২৫ শতাংশ ও পানি ২৫ শতাংশ। জমির উপরিভাগে ৫ শতাংশ জৈব পদার্থ থাকে। জৈব পদার্থ সব পুষ্টি উপাদানের গুদামঘর হিসেবে কাজ করে। কিন্তু মাটি ব্যবসায়ীরা উপরিভাগের মাটি কেটে নেওয়ায় ওই জমিতে জৈব পদার্থ থাকছে না। ফলে কেঁচোসহ উপকারী পোকামাকড় নষ্ট হচ্ছে। এতে জমিগুলো দ্রুত উর্বরতা শক্তি হারাচ্ছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, জেলায় আবাদি জমির পরিমাণ ২ লাখ ৬৫ হাজার ৮৭৩ হেক্টর। মূলত আমন মৌসুমে ধান ওঠার পর থেকে মাটি কাটার হিড়িক পড়ে যায়।
অধিদপ্তরের উপপরিচালক আবু হোসেন বলেন, যেভাবে ফসলি জমির মাটি ইটভাটায় যাচ্ছে, এতে আস্তে আস্তে ফসল উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। দু-তিন বছর ওই জমি থেকে ভালো ফলন আশা করা যায় না।
নওগাঁর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মুহাম্মদ ইব্রাহীম বলেন, ইট পোড়ানো নিয়ন্ত্রণ আইন অনুযায়ী ভাটায় কৃষিজমির মাটি বিক্রি করা দণ্ডনীয় অপরাধ। ফসলি জমি থেকে ইটভাটায় মাটি বিক্রি ও অবৈধভাবে ভাটা পরিচালনা করার জন্য গত মাসে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান চালিয়ে ১৪টি মামলা করা হয়েছে। ভবিষ্যতেও এ ধরনের অভিযান অব্যাহত থাকবে।
এসএন