উত্তর জনপদে ঠান্ডার প্রকোপ, বিপর্যস্ত জনজীবন
দেশের উত্তরের সীমান্তঘেষা জনপদ কুড়িগ্রামে পৌষের হাঁড় কাঁপানো তীব্র শীত ও হিমেল হাওয়ার সাথে ঘন কুয়াশায় জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। সব চেয়ে বিপাকে পড়েছেন এ জেলার নিম্ন আয়ের মানুষজন। চরম বেকায়দায় পড়েছেন জীবন-জীবিকার তাগিতে ঘর থেকে বেড় হওয়া শ্রমজীবি মানুষ। কনকনে ঠান্ডায় শিশু ও বৃদ্ধরা কাবু হয়ে পড়েছেন। বিকাল গড়াতেই তাপ মাত্রাহ্রাস পেয়ে জেলার বাসিন্দাদের উষ্ণ কাপড় পরিধান করতে বাধ্য করছে।
গভীর রাত জুড়ে ঘনকুয়াশার দাপুটে সকাল ১১টা পর্যন্ত চারপাশ আবৃত রাখছে। প্রচন্ড ঠান্ডার মাঝেও যে সব শ্রমজীবি মানুষের ঘরে খাবার নেই, সেই সব শ্রমজীবি মানুষ পৌষের হাঁড় কাঁপানো ঠান্ডায় সকাল সকাল জীবন-জীকার তাগিদে কাজে বেড়িয়ে পড়েন এবং প্রচন্ড ঠান্ডার মাঝে কাজ-কাম করে পরিবার-পরিজনকে দু-মূঠো খাবার জোগান দিচ্ছে। এভাবে প্রতিদিন দেশের উত্তর জনপদের নিম্ন আয়ের মানুষজন অসহনী ঠান্ডা অতিক্রম করে জীবন-জীবিকা নির্বাহ করছেন।
এ দিকে ঠান্ডার প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় শিশু ও বৃদ্ধরা শীত জনিত রোগে ভুকছেন। খরকুটো জালিয়ে শীত নিবারনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বয়োবৃদ্ধ ও শিশুরা। সামগ্রিক এ পরিস্থিতিতে বেড়েছে শীত বস্ত্রের চাহিদা। এজেলায় অধিকাংশই খেটে খাওয়া ও নিম্ন আয়ের মানুষ। শীত এলেই তাদের কষ্ট ও দুর্ভোগে বাড়ে। যেন দেখার কেউ নেই।
স্থানীয় আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ সুত্র জানায়, পৌষের শুরু থেকে শীতের তীব্রতা বেড়ে জানুয়ারীর শেষের দিকে একটি শৈত্য প্রবাহ বয়ে যেতে পারে। জেলা জুড়ে ছিন্নমূল মানুষের চরম ভোগান্তি বেড়ে যেতে পারে। তবে শীত মোকাবিলায় জনভোগান্তি সহনীয় মাত্রায় রাখতে সরকারের সকল প্রস্তুতি রয়েছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন।
কুড়িগ্রামের রাজারহাট আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার সূত্র জানায়, এ জেলায় গত কয়েক সপ্তাহ ধরে ক্রমান্বয়ে তাপমাত্রা হ্রাস পেয়েছে। শনিবার সকাল ৯ টায় এজেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১০ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। জানুয়ারীর শেষের দিকে জেলায় একটি মৃদু ধরণের শৈত্য প্রবাহ বয়ে যেতে পারে বলে জানান আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তুহিন মিয়া।
এদিকে শীতের তীব্রতা বাড়ায় গরম কাপড়ের দোকানগুলোতে ভিড় বাড়ছে। সামর্থবানদের চাহিদা থাকায় বৈদ্যুতিক দোকানগুলোতে গ্রিজার আর ইলেকট্রিক ক্যাটলির বিক্রিও বেড়েছে। তবে চরম দুঃচিন্তায় পড়েছেন প্রান্তিক কৃষক ও খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষ। বিশেষ করে আসছে বোরো মৌসুমে মজুরি বিক্রি করে রোজগারের সম্ভাবনায় শীতের তীব্রতা তাঁদের কপালে ভাঁজ ফেলেছে।
নাগেশ্বরী উপজেলার বেরুবাড়ী এলাকার দিন মজুর সবুজ মিয়া জানান, শীতে বৌ-বাচ্চা নিয়া আর এক চরম বিড়ম্বনায় আছি বাহে! শীত বেশি হইলে মাঠে কাজ করতে খুব কষ্ট হয়। এই ঠান্ডায় হাত পা হিম হইয়া যায়। তাই ঠান্ডার কারণে কয়েক দিন থেকে কাজে যেতে পারছি না বাহে!
ফুলবাড়ী উপজেলার ভ্যানচালক বাবলু চন্দ্র রায় ও হাক্কু মিয়া জানান, এমন শীত ও ঠান্ডা থাকলে ভ্যান চালা খুবেই কষ্টকর হয়ে যায়। তারপরও জীবন-জীবিকার তাগিদে প্রচন্ড ঠান্ডার মধ্যেও বের হতে হয়। তারা এখনো গরম কাপড় অথবা কম্বল পায়নি বলে জানান এই দুই ভ্যানচালক। প্রান্তিক মানুষের এমন কষ্টের কথা ভেবে স্থানীয় প্রশাসন শীত নিবারণে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নিয়েছে বলে জানিয়েছে জেলা প্রশাসনের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা শাখা। এছাড়াও বেসরকারি পর্যায়েও শীতবস্ত্র বিতরণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
কুড়িগ্রাম জেলাত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আব্দুল হাই সরকার জানান, ইতোমধ্যে সরকারি ভাবে বরাদ্দ পাওয়া ৩৮ হাজার কম্বল ৯ উপজেলার গরীব অসহায় নিম্ন আয়ের মানুষদের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে। জেলা প্রশাসন থেকে আমরা নতুন করে ১ লাখ ১৪ হাজার কম্বল বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ১৫ হাজার কম্বল বরাদ্দ পাওয়া গেছে সেগুলোও বিতরণ করাও হয়েছে।
এএজেড