কুষ্টিয়ায় মুক্তিযোদ্ধাকে পিটিয়ে জখম করেছে রাজাকারপুত্র
কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে এক মুক্তিযোদ্ধাকে পিটিয়ে মারাত্মক জখম করেছেন রাজাকারপুত্র শফিক ও তার লোকজন। আহত ওই মুক্তিযোদ্ধা হলেন, মাহমুদ হোসেন মানু।
বুধবার (১২ জানুয়ারি) সন্ধ্যা ৭টার দিকে কুমালখালী মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের অফিসে ওই মুক্তিযোদ্ধাকে মারধর করা হয়েছে। মারাত্মক জখম অবস্থায় তাকে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
মুক্তিযোদ্ধা মাহমুদ হোসেন মানুর সরকারি নিবন্ধনপ্রাপ্ত সমবায় সমিতি আছে। এ সমিতি থেকে বেশ কয়েক বছর আগে ঋণ নিয়ে পরিশোধ করেননি অভিযুক্তরা। এ কারণে তাদের বিরুদ্ধে সমবায় সমিতির পক্ষ থেকে মামলা করা হয়েছে। মামলাটি তুলে নিতে চাপ দিতে শুরু করে তারা। মামলা না তুললে তারা ওই মুক্তিযোদ্ধার ছেলের উপরে হামলা করেন। ছেলের উপর হামলা করার কারণে তাদের বিরুদ্ধে আরো একটি মামলা দায়ের করেন মাহমুদ হোসেন। হামলাকারীদের বিরুদ্ধে দুটি মামলা চলমান। মামলা দুটি তুলে নিতে আবার হুমকি-ধামকি দেন শফিক ও তার লোকজন। কাজ না হওয়ায় এ তার ওপর এ হামলা চালানো হয়েছে। হামলাকারীদের বিরুদ্ধে আরো বেশ কয়েকটি চেক জালিয়াতির মামলা রয়েছে বলেও জানা যায়।
মাহমুদ হোসেন জানান, ১১জানুয়ারি সন্ধ্যায় তার মুঠোফোনে নিপুন নামের এক ব্যক্তি ফোন দিয়ে মামলা তুলে নিতে হুমকি দেন। কিন্তু মামরা তুলে নিতে তিনি অস্বীকার করেন। তখন নিপুন তাকে গালিগালাজ করেন। পরে বুধবার শফি, রতন, আশরাফ, সুলতান, হারুন সহ অজ্ঞাত বেশ কয়েকজন তাকে মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের অফিসে গিয়ে বেধড়ক মারধর করেন। মারতে মারতে তাকে রাস্তা দিয়ে টেনে-হিঁচড়ে প্রায় বিবস্ত্র অবস্থায় নিপুনের অফিসে নিয়ে যান তারা। সেখানে গিয়ে দেখেন সদকী ইউনিয়নের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান দীপ ও দ্বীপের বাবা নিপুন সেখানে আছেন। তখন অফিসের দরজা আটকে তাকে আবারও মারধর করা হয়। নিপুন তার মুখে একাধারে ঘুষি মারতে থাকেন। একপর্যায়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ এসে তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যান।
মাহমুদ হোসেন বলেন, 'আমি মারা গেলেও কারোর সঙ্গে মারামারি করতে চাই না, আমি এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাই।'
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী মুক্তিযোদ্ধা এটিএম আবুল মনসুর মজনু জানান, কুমারখালীর মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের অফিসে শফিসহ কয়েকজন মাহমুদ হোসেনকে মারধর করে। পরে পুলিশ গিয়ে নিপুনের অফিস থেকে তাকে উদ্ধার করে। তিনি এখন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
তিনি বলেন, ‘যারা দেশ স্বাধীন করেছিলেন আজ স্বাধীনতার ৫০ বছর পরেও তারা হামলার শিকার হচ্ছেন। দুঃখের বিষয় যে শফির নেতৃত্বে আজ বীর মুক্তিযোদ্ধার উপর হামলা চালানো হয়েছে, সেই শফির বাবা ও দাদা কুমারখালী তালিকাভুক্ত রাজাকার। এটা খুবই লজ্জাজনক। আমি আশা করি প্রধানমন্ত্রী এ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেবেন।’
আরেক প্রত্যক্ষদর্শী মুক্তিযোদ্ধা অহিদুর রহমান টগর ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, ‘একজন মুক্তিযোদ্ধাকে এভাবে মারা সমীচীন নয়, এটা বড় অন্যায়।’
কুমারখালী মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট থেকে পাওয়া ১৯৭১ সালের কুমারখালী পৌর এলাকার (বর্তমান) রাজাকারদের তালিকায় ১৩ নম্বরে শফিকের বাবা মসলেম উদ্দিন ও ১৫ নম্বরে দাদা মুনির উদ্দিনের নাম রয়েছে। মসলেম উদ্দিন ও মনির উদ্দিন কুমারখালী পৌরসভার শেরকান্দি বাধপাড়া এলাকার বাসিন্দা।
এদিকে ভুক্তভোগী মাহমুদ হোসেনের ছেলে আসাদুজ্জামান নয়ন বলেন, এক বছর আগে শফি, হারুন, সুলতানসহ তাদের অনুসারীরা তাকে মারধর করেছিলেন। তার নাকের টিস্যু ও পা ভেঙে দিয়েছেন তারা। এমনকি গলায় ফাঁসি দিয়ে হত্যা করারও চেষ্টা করেছিল তারা।
কুষ্টিয়া জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক ডেপুটি কমান্ডার রফিকুল আলম টুকু মুঠোফোনে বলেন, ‘অন্যায়কারী যেই হোক না কেন ভয়ের কোনো কারণ নেই। তার বিচার হবেই।’
বিষয়টি নিয়ে কুমারখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (তদন্ত) আকিবুল ইসলাম জানান, এখন পর্যন্ত কোনো অভিযোগ তারা পাননি। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ দিতে বলেছেন। অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এসএন