হাতের তৈরি জুতা দিয়ে উদ্যোক্তা হতে চান রাঙ্গুনিয়ার সুজন
মানুষের কল্যানে জুতার প্রচলন সূদুর অতীত থেকে শুরু হয়। জুতা মানব সভ্যতার ইতিহাসে এক অপরিহার্য বস্তু। বর্তমান যুগেও আভিজাত্য রক্ষায় জুতার জুড়ি নেই। তাই দেশের বিভিন্ন জেলা, উপজেলা ও শহরে গড়ে উঠছে ছোট বড় বহু সংখ্যক জুতা তৈরির কারখানা। আর এই সকল কারখানায় কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করছে লাখ লাখ মানুষ। তেমনি জুতা তৈরি করে ভাগ্য বদলিয়েছেন চট্টগ্রামে রাঙ্গুনিয়া উপজেলার ৪ নং মরিয়মনগর ইউনিয়নের ১ নং ওয়ার্ডের গঙ্গা রবি দাশের ছেলে তরুণ উদ্যোক্তা সুজন রবি দাশ (৩২)।
সুজন রবি দাশ পারিবারিক অচ্ছলতার কারণে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের গন্ডি পাড়ি দিতে পারেননি। পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত পড়ার পর লেখাপড়ার পরিসমাপ্তি ঘটান। উপার্জনক্ষম বাবার অসুস্থতার কারণে অল্প বয়সেই হাল ধরতে হয় সংসারের। অসুস্থ বাবার চিকিৎসা খরচ মা, ভাই বোনের ভরণ-পোষণের কথা চিন্তা করে ২০০৪ সালে মরিয়ম নগরের বিয়ান বাজারে একটি দোকান ঘর নিয়ে জুতা সেলাইয়ের কাজ শুরু করেন। তবে তার বাবা গঙ্গা রবি দাশও দীর্ঘদিন চট্টগ্রাম শহরের একটি জুতার কারখানায় কাজ করেছেন। জুতা সেলাই করার ফাঁকে ফাঁকে বাবার কাছ থেকে জুতা তৈরির কলা-কৌশল শিখেন সুজন।
এরপর ২০১১ সালে বাবার কাছ থেকে সে জুতা তৈরির সকল কলা-কৌশল শিখে ফেলেন। পরে বাবার অনুপ্রেরণায় চাঁদপুর থেকে জুতা তৈরির প্রাথমিক যন্ত্রাংশ অর্থাৎ একটি বব মেশিন, একটি পেসার মেশিন, একটি সেলাই মেশিন এবং চট্টগ্রামের মাদাদবাড়ী থেকে ক্রেফসোল্ট ও ফাইবার কিনে নিয়ে আসেন। ২০১২ সালে প্রথম সে নিজে নিজে জুতা তৈরির কাজ শুরু করেন। ধীরে ধীরে অল্পদিনের মধ্যেই সে রাঙ্গুনিয়া উপজেলার সকলের মাঝে পরিচিতি লাভ করেন।
সুজনের তেমন শিক্ষাগত যোগ্যতা না থাকলেও তিনি এখন জুতার দক্ষ কারিগর। জুতা ও স্যান্ডেলের নমুনা তৈরি করেন। তার জুতার কদর বাড়ছে এখন সবার কাছেই। তার হাতের তৈরি নৃত্য নতুন ডিজাইনের জুতা তরুণ প্রজন্মের নজর কেড়েছে ধারুনভাবে। শুধু তাই নয় গ্রাহক বা ক্রেতার চাহিদামতো মডেল পেলেই সুজন স্বল্প সময়েই জুতা তৈরি করে ফেলতে পারেন। বর্তমানে সুজন শুধু তার দোকানেই জুতা বিক্রি করেন না। তার হাতের তৈরি জুতা রাঙ্গুনিয়া, রাউজান, হাটহাজারী চট্টগ্রাম শহর ছাড়াও পার্বত্য চট্টগ্রামের রাঙ্গামাটি ও বান্দরবানসহ বিভিন্ন অঞ্চলে পাইকারী দরে বিক্রি হচ্ছে।
সুজন রবি দাশ বলেন, 'আমি ৫ম শ্রেণীতে অধ্যায়নরত অবস্থায় হঠাৎ বাবা অসুস্থ হয়ে পড়েন, ফলে পরিবারে শুধু হয় অভাব টানাপোড়ন। পরে সাংসারের অভাব মেটাতে নিজেই বেছে নিলাম জুতা সেলাইয়ের কাজ। জুতা সেলাই করে যা আয় হয়, তা দিয়ে বাবার চিকিৎসা, সংসারের খরচ এবং ছোট ভাইবোনের লেখাপড়ার খরচ যোগাতে হিমশিম খেতে হয়। পরে বাবার অনুপ্রেরণায় জুতা তৈরির কাজ শুরু করি। বর্তমানে পাইকারী জুতায় তেমন লাভ না হলেও সেলস বেশি হওয়ার কারণে পাইকারী জুতা বিক্রি হয় বেশি।'
তিনি আরও বলেন, আমার ইচ্ছা আছে একটি জুতার ফ্যাক্টরি করার, কিন্তু পুজিঁ নেই। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কৃষকদের সুবিধার জন্য বিভিন্ন ধরনের প্রণোদনা দিয়ে আসছেন। যদি সরকারি সহায়তা বা স্বল্প সুদের দীর্ঘমেয়াদী ঋণ সুবিধা পায়, তাহলে আমার ব্যবসাকে রাঙ্গুনিয়া উপজেলায় একটি মডেল হিসাবে দাঁড় করাতে পারবো। রাঙ্গুনিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আতাউল গণি ওসমানী বলেন, 'বিষয়টি আমরা খোঁজ নেব। তার পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করবে উপজেলা প্রশাসন। এই ধরণের মানুষদের কিছু কাঠামোগত সুবিধা দেয়ার পরিকল্পনা আছে আমাদের।'
এএজেড