কুমিল্লায় পাঁচ দিনে ৪ খুন, এক মাসে ৭টি
গত ৩০ ডিসেম্বর রাতে মাহফিলে গায়ের সঙ্গে ধাক্কা লেগে ছোলা-বুট পড়ে যাওয়ায় ছুরিকাঘাতে খুন করা হয় মো. ইয়াসিন (১৯) নামে এক তরুণকে। তুচ্ছ কারণে জেলার সদর দক্ষিণ উপজেলার রামচন্দ্রপুরে ঘটে যাওয়া শুধুমাত্র এই একটি হত্যাকাণ্ড নয়, গত ৫ দিনে পরপর ৪টি খুনের ঘটনা ঘটেছে কুমিল্লায়। সব মিলিয়ে এই জেলায় এখন পর্যন্ত হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে মোট ৯টি। যার সর্বশেষটি ঘটেছে ২ জানুয়ারি রাতে নগরীর মোগলটুলি এলাকায়। মাদকের টাকার ভাগ-বাটোয়ারা নিয়ে সংঘর্ষে খুন হন মাহবুব হোসেন মান্না নামে আরেক যুবক। পরপর ঘটে যাওয়া এসব হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় আতঙ্কিত এলাকার মানুষেরা। আর পুলিশ বলছে, তুচ্ছ কিংবা আধিপত্য বিস্তার-যে কারণেই খুনের ঘটনা ঘটুক না কেন অভিযুক্তদের ছাড় দেওয়া হবে না।
পুলিশ ও স্থানীয়দের ভাষ্যে জানা গেছে, ৩০ ডিসেম্বর রাত ৯টার দিকে সদর দক্ষিণ উপজেলার রামচন্দ্রপুর এলাকায় মাহফিলকে কেন্দ্র করে ইয়াসিনের সঙ্গে ধাক্কা লেগে এক যুবকের হাত থেকে ছোলা-বুট পড়ে যায়। এই নিয়ে বাকবিতণ্ডা থেকে ছুরিকাঘাত করলে হাসপাতালে নেওয়ার পথেই মারা যান ইয়াসিন (১৯)। তিনি সদর দক্ষিণ উপজেলার দুর্গাপুর এলাকার জাহাঙ্গীর হোসেনের ছেলে।
এর পরদিন ৩১ ডিসেম্বর নগরীর হাউজিং এস্টেট এলাকায় ১০ তলা নির্মাণাধীন ভবন থেকে প্রহরী আবদুস সালামের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এর দুই দিন আগে থেকেই নিখোঁজ ছিলেন সালাম। তার ছেলে জাহিদ জানিয়েছেন, কয়েকদিন পূর্বে কয়েকজন দুর্বৃত্ত এসে তার (সালামের) কাছ থেকে ৩ হাজার টাকা ছিনিয়ে নিয়ে যায়। সেই সূত্র ধরেই খুন হতে পারেন তিনি।
চলতি বছরের প্রথম দিন (১ জানুয়ারি) ভোরে নগরীর দক্ষিণ চর্থা এলাকায় পূর্ব বিরোধের জের ধরে নিউ ইয়ারের পার্টি থেকে ডেকে নিয়ে ফয়সাল ইসলাম হৃদয় (১৯) নামে এক তরুণকে ছুরিকাঘাতে খুন করা হয়। নিহত হৃদয় দক্ষিণ চর্থা বড়পুকুর পাড় এলাকার বাবু মিয়ার ছেলে। বিশ্বকাপ ফুটবল চলাকালে ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা সমর্থন নিয়ে বিরোধের জের ধরে এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে বলে জানান নিহতের স্বজনরা। এ হত্যাকাণ্ডের একদিন পর সোমবার (২ জানুয়ারি) সকালে নিহত হৃদয়ের বড় ভাই পারভেজ হোসেন বাদী হয়ে কোতোয়ালি মডেল থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলায় ৬ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরো ১০/১২ জনকে আসামি করা হয়েছে।
এ ছাড়া সর্বশেষ ২ জানুয়ারি রাতে কুমিল্লা নগরীর মোগলটুলিতে মাদকের টাকা ভাগাভাগি ও আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দুই গ্রুপের সংঘর্ষে প্রতিপক্ষের ছুরিকাঘাতে মাহাবুব হোসেন মান্না (২৩) নামের এক যুবক নিহত হন। সোমবার রাতের এ ঘটনার পর মঙ্গলবার ভোরে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ঢাকায় নেওয়ার পথে মান্নার মৃত্যু হয়। নিহত মান্না নগরীর গাংচর চৌধুরীপাড়া সড়কের আব্দুল কাদিরের ছেলে।
এ বিষয়টি নিশ্চিত করে কুমিল্লার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মো. কামরান হোসেন বলেন, নিহত মান্না এবং আহতরা প্রত্যেকেই মাদক ব্যবসায়ী। মাদক ব্যবসাকে কেন্দ্র করেই এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। অভিযুক্তদের দ্রুত গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
এর আগে গত ২ ডিসেম্বর রাতে চৌদ্দগ্রামে ব্যাডমিন্টন খেলাকে কেন্দ্র করে কিশোর গ্যাংয়ের হামলায় পাবেল (১৯) নামে এক কলেজ শিক্ষার্থী খুন হন। ৪ ডিসেম্বর কুমিল্লার নাঙ্গলকোটে স্ত্রীকে উত্যক্তের প্রতিবাদ করায় কিল-ঘুষিতে জসিম উদ্দিন (৪৫) নামে এক পত্রিকা বিক্রেতা হকার নিহত হন। ৬ ডিসেম্বর কুমিল্লার তিতাসে মাছের প্রজেক্টের মালিকানা নিয়ে বিরোধের জের ধরে পুলিশের সামনে ঘরে ঢুকিয়ে জহিরুল ইসলাম (৩৫) নামে এক যুবলীগ নেতাকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। ১০ ডিসেম্বর কুমিল্লার লালমাই উপজেলার কনকশ্রী গ্রামে প্রবাসী ফেরত ছেলে শাবলের আঘাতে নুরজাহান বেগম (৫৫) নামে এক নারী নিহত হন। এ ছাড়াও ১৪ ডিসেম্বর রাতে জেলার বরুড়া উপজেলার ভাউকসার এলাকায় ধর্ষণের পর তৃতীয় শ্রেণির এক ছাত্রীকে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় আটক অভিযুক্ত জসিম (২০) শিশুটিকে ধর্ষণের পর হত্যা করেছে বলে পুলিশের কাছে স্বীকার করেছে।
পরপর ঘটে যাওয়া এসব হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে জানতে চাইলে কুমিল্লা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) খন্দকার আশফাকুজ্জামান বলেন, গত কয়েক দিনে ঘটে যাওয়া হত্যাকাণ্ড গুলো প্রায় একই কারণে হয়েছে। নিজেদের মধ্যে কথা কাটাকাটি কিংবা আধিপত্য বিস্তার নিয়ে এসব হত্যাকাণ্ডের কারণও প্রায় সুস্পস্ট। যে কারণেই খুনের ঘটনা ঘটুক না কেন অভিযুক্তদের ছাড় দেওয়া হবে না।
সর্বশেষ নগরীর মোগলটুলিতে মান্না হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে তিনি বলেন, মান্না খুন হওয়ার পর বিষয়টি আমরা গুরুত্ব সহকারে খতিয়ে দেখছি। প্রাথমিকভাবে জানতে পেরেছি যে মাদকের টাকা ভাগাভাগি নিয়ে প্রতিপক্ষের সঙ্গে তার দ্বন্দ্ব ছিল। এ খুনের ঘটনায় যারা হতাহত হয়েছেন এবং হামলা করেছেন তাদের সবার বিরুদ্ধেই নানা অপরাধের অভিযোগ রয়েছে। আমরা সুনির্দিষ্ট প্রমাণের ভিত্তিতে তাদের দ্রুত গ্রেপ্তারের চেষ্টা করছি। খুব শীঘ্রই এ বিষয়ে আমরা ভালো ফলাফল দিতে পারব।
এসআইএইচ