কুমিল্লায় এক বছরে ৮৩ খুন
গত এক বছরে কুমিল্লা জেলায় ৮৩টি হত্যার ঘটনা ঘটেছে। ব্যক্তিগত দ্বন্দ্ব-রেষারেষি ছাড়াও মুরগি চুরি, ঘাস কাটা নিয়ে তর্ক, পাতা কুড়ানো, গাছ কাটা, মাইক্রোবাসের ভাড়া নিয়ে তুচ্ছ ঘটনার কারণেও ঘটেছে খুনের ঘটনা। তবে জেলাজুড়ে বেশির ভাগ হত্যাকাণ্ডই ঘটেছে পারাবারিক কলহ এবং পূর্ব শত্রুতার জের ধরে। যার ‘ধারাবাহিকতা’ বছরের শেষ দিন এবং চলতি বছরের প্রথম দিনও লক্ষ্য করা গয়েছে। গত দুই দিনে পরপর দুটি হত্যকাণ্ড ঘটেছে কুমিল্লায়।
জেলা পুলিশের তথ্য মতে, নভেম্বর পর্যন্ত জেলায় খুনের সংখ্যা ৭৬টি। ডিসেম্বর ৩১ তারিখ পর্যন্ত খুন হয়েছে আরও ৭টি। গেল বছরে কুমিল্লায় পারাবারিক কলহের জেরে খুন হয়েছে সবচেয়ে বেশি ১৪টি। জমিসংক্রান্ত বিরোধের জেরে খুন হয়েছে ১০টি। আধিপত্যসংক্রান্ত বিরোধের জেরে খুন হয়েছে তিনটি। এ ছাড়া পুলিশ বলছে, অজ্ঞাত কারণে খুনের সংখ্যা ১২টি। এদিকে তুচ্ছ ঘটনায় হাতাহাতি, ধর্ষণের পর হত্যা, ভারত সীমান্তে হত্যা, পুরাতন মোবাইল ক্রয়-বিক্রয়, মাদ্রাসা শিক্ষকের বেত্রাঘাতে ছাত্র খুন, কিশোর গ্যাং ও মাদকাসক্ত হয়ে বন্ধুকে হত্যা, পরকিয়া প্রেমের বিরোধে, মোটরসাইকেল ক্রয়-বিক্রয়, পাওনা টাকা নিয়ে বিরোধের জেরে অন্যসব হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে।
কুমিল্লা জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) খন্দকার আশফাকুজ্জামান জানান, এসব হত্যাকাণ্ডে দায়ের করা মামলার মধ্যে ৫২টির তদন্ত চলছে। এ ছাড়া ২৪টির অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়েছে। এসব মামলায় মোট এজাহারনামীয় আসামি ২৭১ জন। গ্রেপ্তার আসামির সংখ্যা ১২২ জন। ১৬৪ ধারায় জবানবান্দি দিয়েছে ৩৭ জন।
তিনি আরও জানান, খুনের মামলাগুলো সব সময়ই গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়। প্রতিটি মামলায়ই দৃশ্যমান অগ্রগতি রয়েছে এবং অনেক মামলায়ই বিচারাধীন। আমরা চেষ্টা করছি মামলাগুলো গুরুত্ব অনুসারে আমলে নিয়ে তদন্ত করছি।
কুমিল্লা আদালতের আইনজীবী এএমএম মঈন জানান, আদালতে সাক্ষীদের অনিয়মিত উপস্থিতির প্রবণতা থাকায় হত্যা মামলায় বিচারকার্য ধীর গতিতে হয়। এব্যাপারে মামলার স্ব স্ব তদন্ত কর্মকর্তাকে সচেতন হতে হবে। এ ছাড়া সাক্ষীদের নিরাপত্তার ক্ষেত্রেও সতর্ক থাকতে হবে। শুনানিতে সাক্ষীদের নিয়মিত উপস্থিতি হত্যা মামলার দ্রুত নিষ্পত্তিতে সহায়ক।
তিনি আরও জানান, পারিবারি কলহের জেরে হত্যাকাণ্ড বেশি হওয়ার কারণ সামাজিক মূল্যবোধ কমে যাওয়া। এ ছাড়া পরিবারের সদস্যদের ঝগড়া নিষ্পত্তি না করে তা বাড়তে দিলেই কোনো কোনো ঘটনা হত্যাকাণ্ডের মতো নির্মম পরিণতির দিকে যায়। তাই পারিবারিক সম্পর্কগুলো আমাদের ঘর থেকেই তৈরি করতে হবে এবং ধৈর্য্যের সঙ্গে এসব বিষয় মোকাবিলা করতে হবে।
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) কুমিল্লা জেলা শাখার সাবেক সাধারণ সম্পাদক আলী আকবর মাসুম বলেন, ‘সম্পদ ও সম্পত্তির দাম দিন দিন অনিয়ন্ত্রিতভাবে বাড়ছে। যা ন্যায্য নয়। যার লাগাম সরকার বা সমাজ কেউই ধরে রাখতে পারছে না। যার কারণে মানুষের ভোগবিলাস আর লোভের মাত্রাও নিয়ন্ত্রণে নেই। তাই মানুষ শুধু চায় আর চায়। তা ছাড়া আমাদের চাওয়া পাওয়ার মাত্রাও দিন দিন আকাশচুম্বী হচ্ছে। অন্যের জিনিসে আমাদের জোর খাটানো ঐতিহ্য হয়ে যাচ্ছে। তাই সম্পত্তির লোভে কেউ কাউকে খুন করতেও দ্বিধা বোধ করে না।
এসএন