তীব্র শীতে বিপর্যস্ত ফেনীর জনজীবন
ফেনীতে তীব্র শীতে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। তিন দিন ধরে ফেনী জেলায় মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। শৈত্যপ্রবাহের প্রভাবে সূর্যের দেখা মিলছে কম। এর সঙ্গে হিমেল বাতাস ও ঘনকুয়াশা শীতের মাত্রাকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে। তীব্র শীতের কারণে শীতজনিত নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন বয়স্ক ও শিশুরা।
ভীষণ কষ্টে দিন কাটছে দিনমজুরদের। পেটের দায়ে শীতের মধ্যে কাজ করতে বের হলেও পাচ্ছেন না। আবার কেউ কেউ শীতের মধ্যে কাজ করতে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন।
আব্দুল করিম মিয়া বলেন, তিন দিন ধরে হঠাৎ করে এমন শীত পড়েছে, যে ঘর থেকে বের হওয়া কষ্টকর। শীতের তীব্রতার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে নানা রোগ বালাই। জ্বর-সর্দি ও কাশিসহ নানা ধরনের অসুখ হচ্ছে। পাশাপাশি ছোট বাচ্চাদের অসুখ-বিসুখও বেড়েছে। এর উপর দিনের বেলা হালকা গরম লাগলেও বিকালের পর থেকে শীতের মাত্রা বাড়তে থাকে।
শিক্ষার্থী ফারহান মাহতাব অয়ন বলেন, সকালে কোচিং করতে যেতে হয়, কিন্তু গত কয়েকদিন ধরে বেশ শীত পড়েছে এতে করে আমাদের যেতে খুব কষ্ট হয়।
বৃদ্ধ রবিউল হক বলেন, কী আর বলব শীতের কথা, গত কয়েকদিন ধরে যে শীত পড়েছে, তাতে বাঁচাই দায়। একে তো ডায়াবেটিস, এর জন্য সকালে হাঁটতে যাওয়ারও উপায় নেই। তার ওপর সর্দি-কাশি তো লেগেই আছে। শীতে আমাদের মতো বয়স্কদের খুবই কষ্ট।
এদিকে ঘন কুয়াশার কারণে দিনের বেলাতেও হেডলাইট জ্বালিয়ে চলাচল করছে যানবাহন। সদর উপজেলার কৃষিশ্রমিক খাদেম ও সাইফুল বলেন, তীব্র শীতে হাত-পা জমে যাওয়ার মতো অবস্থা। এই পরিস্থিতিতে মাঠে থাকাটাও কষ্টকর।
শহরের সহদেবপুর এলাকার আলফাতুন নেছার ভাষ্য, ঘরের বেড়ার ফাঁক দিয়ে ক্রমাগত ঠান্ডা বাতাস প্রবেশ করায় ২-৩টা কাঁথা-কম্বল দিয়েও শীত মানানো যাচ্ছে না।
দিনমজুর মমিন হায়দার বলেন, আমরা প্রতিদিন মানুষের বাড়িতে শ্রমিকের কাজ করে যা পাই তা দিয়ে পরিবার পরিজন নিয়ে খেয়ে পড়ে চলি। কিন্তু যে শীত পড়েছে বাড়ি থেকে বেরই হওয়া খুব কষ্টকর। কিন্তু বাড়ি থেকে বের না হয়ে উপায়ও নেই। কাজ না করলে ভাত তো খাওয়া হবে না।
ফেনী আবহাওয়া অফিসের সিনিয়র অবজারভার মনিরুজ্জামান বলেন, আজ ফেনীতে সর্বনিম্ম তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ফেনী জেলায় মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বিরাজ করছে। ধীরে ধীরে শীতের তীব্রতা কমে আসবে। তাপমাত্রা অল্প অল্প করে বাড়তে থাকবে বলে জানান তিনি।
এদিকে ফেনী জেনারেল হাসপাতালে শীতজনিত রোগে আক্রান্ত মানুষের চাপ বাড়ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। যাদের মধ্যে শিশু ও বয়স্কদের সংখ্যাই বেশি।
এ ব্যাপারে ফেনী জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. মো. আসিফ ইকবাল জানান, হাসপাতালে শিশু ওয়ার্ডে থাকা শয্যার তুলনায় অনেক বেশি সংখ্যক রোগীকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। অন্য ওয়ার্ডগুলোতেও দৈনিক শীতজনিত অসুস্থতা নিয়ে গড়ে আড়াই'শ রোগী অবস্থান করছেন। হাসপাতালের বহির্বিভাগেও রোগীর অতিরিক্ত চাপ দেখা যাচ্ছে।
এসএন