দফায় দফায় মেয়াদ বাড়িয়েও শেষ হয়নি আখাউড়া-লাকসাম রেলপথ নির্মাণ
তিন দফা মেয়াদ বাড়িয়েও আখাউড়া থেকে কুমিল্লার লাকসাম পর্যন্ত ৭২ কিলোমিটার ডুয়েলগেজ ডাবল রেলপথ নির্মাণকাজ শেষ করা সম্ভব হয়নি। ইতোমধ্যে লাকসাম থেকে কুমিল্লা পর্যন্ত ২৪ কিলোমিটার অংশে ডাবল লাইনের উন্নতিকরণ কাজ শেষ হয়েছে। আর পুরো প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে প্রায় ৭০ শতাংশ।
২০১৬ সালের নভেম্বরে শুরু হয় প্রকল্পের কাজ। প্রকল্পের ব্যয় ৬ হাজার ৫০৪ কোটি ৫৪ লাখ টাকা। কিন্তু দফায় দফায় মেয়াদ বাড়ালেও শেষ হয়নি প্রকল্পের কাজ। এ মেয়াদ আরও বাড়তে পারে এবং ৪০০ কোটি টাকা ব্যয় বাড়ানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে বলে রেলওয়ের একটি সূত্র জানিয়েছে।
জানা গেছে, ২০১৪ সালের ২৩ ডিসেম্বর জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় আখাউড়া থেকে কুমিল্লার লাকসাম পর্যন্ত ৭২ কিলোমিটার ডুয়েলগেজ ডাবল লাইন রেলপথ নির্মাণ প্রকল্প অনুমোদন পায়। এরপর কাজ শুরু হয় ২০১৬ সালের নভেম্বরে।
২০২০ সালের জুনের মধ্যে এ প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও করোনা পরিস্থিতির কারণে স্বয়ংক্রিয়ভাবে প্রকল্পের মেয়াদ এক বছর বাড়িয়ে ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত করা হয়। কিন্তু এ সময়ের মধ্যেও তা সম্ভব না হওয়ায় প্রকল্পের মেয়াদ আরও দুই দফায় এক বছর করে বাড়ানো হয়। মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত করা হলেও কাজ শেষ হয়নি। বর্তমানে প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।
তবে রেলওয়ের অপর একটি সূত্র বলছে, প্রকল্পটির মেয়াদ আরও এক বছর বাড়িয়ে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত করা হতে পারে। পাশাপাশি ৪০০ কোটি ব্যয় বাড়ানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে বলেও জানা গেছে।
নির্মাণ কাজের দায়িত্ব পাওয়া ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান সূত্রে জানা গেছে, প্রকল্পের কসবা ও সালদা নদী এলাকায় কাজ শুরু হওয়ার পর বিএসএফ বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবিকে জানায়, ‘কাজটি নো-ম্যান্স ল্যান্ডে হচ্ছে’। পরে বিজিবি এসে বিএসএফের আপত্তির কথা জানালে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান কাজ বন্ধ রাখে।
এখন পর্যন্ত প্রকল্পটির ৭০ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে জানিয়ে রেলওয়ে কুমিল্লার উপ সহকারী প্রকৌশলী (পথ) মো. লিয়াকত আলী মজুমদার জানান, ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথটি দেশভাগের আগেই নির্মিত হওয়ায় কসবা-সালদা এলাকার সীমান্ত শূন্য রেখা থেকে রেলপথটি সরিয়ে নেওয়া হয়নি। যে কারণে এখন ডাবল লাইন নির্মাণের সময় জটিলতা দেখা দিয়েছে।
তিনি আরও জানান, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা এলাকায় ২০০ মিটার এবং সালদা নদী এলাকায় ৩০০ মিটার রেলপথ বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তের শূন্য রেখায় পড়ায় বিএসএফের আপত্তিতে সেখানে ডাবল লাইন নির্মাণকাজ বন্ধ রয়েছে। তবে যতটুকু জেনেছি, মন্ত্রণালয়ের উচ্চপর্যায় থেকে ভারতীয় হাইকমিশনের সঙ্গে এ বিষয়ে দ্বিপাক্ষিক আলোচনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
রেলওয়ে সূত্র জানায়, ঢাকা-চট্টগ্রাম ৩২১ কিলোমিটার রেলপথের ১১৮ কিলোমিটার আগে থেকেই ডাবল লাইন। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর তিনটি প্রকল্পের মাধ্যমে আরও ১৩১ কিলোমিটার ডাবল লাইন নির্মাণ করা হয়েছে। বাকি ৭২ কিলোমিটার রেলপথ ডুয়াল গেজ লাইনে উন্নীত করার জন্য ‘লাকসাম-আখাউড়া ডাবল লাইন প্রকল্প’ হাতে নেয় বাংলাদেশ রেলওয়ে।
যৌথভাবে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে চায়না রেলওয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশন, বাংলাদেশের তমা কনস্ট্রাকশন ও ম্যাক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচারসহ ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান সিটিএম জয়েন্ট ভেঞ্চার। প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৬ হাজার ৫০৪ কোটি ৫৪ লাখ টাকা।
সূত্র বলছে, রেললাইন নির্মাণকাজের প্রায় শেষ পর্যায়ে চলছে রেলওয়ে স্টেশন নির্মাণের কাজ। কসবা রেলওয়ে স্টেশন ও সালদানদী রেলওয়ে স্টেশনের নির্মাণ কাজ প্রায় অর্ধেক শেষ হওয়ার পর কাজ বন্ধ হয়ে যায়। ফলে বর্ধিত সময়ের মধ্যে লাকসাম-আখাউড়া ডাবল লাইন প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়া নিয়েও দেখা দিয়েছে সংশয়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রকল্পের কসবা ও সালদানদী এলাকায় ডাবল লাইন নির্মাণের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান তমা কনস্ট্রাকশনের এক কর্মকর্তা বলেন, কুমিল্লার হরিমঙ্গল থেকে আখাউড়া পর্যন্ত ৩৬ কিলোমিটার নির্মাণকাজ আমরা করছি। এর মধ্যে প্রায় ৮০ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। সালদা নদী এবং কসবা এলাকায়-এ দুটি জায়গায় কাজের মাঝামাঝি সময় আমরা বাধাপ্রাপ্ত হই। এর মধ্যে দুই এলাকাতেই একটি করে লাইনের কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে। সালদা নদীতে সেতুর পাইলিং হওয়ার পর কাজ বন্ধ হয়ে যায়। সেখানে স্টেশন ও সেতু নির্মাণ হবে। আর কসবা এলাকায় নতুন স্টেশন নির্মাণ হবে।
তিনি আরও জানান, কাজ বন্ধ হওয়ার পর ঢাকা থেকে এখন পর্যন্ত পুনরায় কাজ শুরুর কোনো নির্দেশনা পাওয়া যাচ্ছে না। এর মধ্যে একদিন অনুমতি পেয়ে কাজ শুরু করেছিলাম। কিন্তু পরে সেটাও বন্ধ হয়ে গেছে।
অপর একটি সূত্র জানায়, চলতি মাসে রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন প্রকল্পের কাজ বন্ধ থাকা এলাকা পরিদর্শন করেন। আন্তঃমন্ত্রণালয়ের বৈঠকে পুনরায় কাজ শুরু হওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে।
এসআইএইচ