গরিবের শীতবস্ত্র মার্কেট এখন ধনীদের দখলে
গাইবান্ধা শহরের পি কে বিশ্বাস রোডের দুইধারে সারি সারি শীতবস্ত্রের দোকান সাজিয়ে বসেছে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। এটি গাউন পট্টি হিসেবে খ্যাত। এখানকার দোকানগুলোতে কম দামে শীতবস্ত্রসহ অন্যান্য বস্ত্রাদি পাওয়া যায়। কয়েক যুগ ধরে এই পট্টিতে অল্প দামে কেনাকাটা করেন নিম্নআয়ের মানুষ। ফলে এটি গরিবের মার্কেট হিসেবেও পরিচিত। কিন্তু সেই মার্কেট এখন ধনীদের পদচারণে মুখরিত হয়ে উঠেছে। শীত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তারা হুমড়ি খেয়ে কিনছেন গরম কাপড়।
সম্প্রতি শহরের পি কে বিশ্বাস রোড ও টেনিস ক্লাব চত্বরে গিয়ে দেখা যায়, শীতার্ত মানুষদের গরম কাপড় কেনার দৃশ্য। ফুটপাতের গাউন পট্টিটি গরিবের মার্কেট হিসেবে পরিচিত থাকলেও সেখানে হুমড়ি খেয়ে পড়েছেন সকল শ্রেণি-পেশার মানুষ। আর এতে বেকায়দায় পড়ছেন ছিন্নমূল পরিবারের সদস্যরা।
লক্ষ্য করা গেছে, পৌষের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে গাইবান্ধায় জেঁকে বসতে শুরু করেছে শীতের তীব্রতা। গত কয়েকদিন ধরে মধ্যরাত থেকে সকাল ১০টা পর্যন্ত ঘন কুয়াশার চাদরে ঢাকা থাকে প্রত্যন্ত অঞ্চল। কনকনে এই শীত নিবারণে সকল শ্রেণি-পেশার মানুষ ঝুঁকে পড়েছে গরম কাপড়ের দিকে। ওই পট্টিতে কেউ কিনছেন লেপ-তোষক। আবার কেউ কেউ সোয়েটার, জ্যাকেট, মাফলার ও মোজাসহ বিভিন্ন ধরনের বস্ত্রাদি কিনতে ভিড় জমাচ্ছেন। এখানকার অধিকাংশ ক্রেতা ছিন্নমূলের হওয়ার কথা থাকলেও সেখানে উচ্চ ও মধ্যবিত্তদের আনাগোনা লক্ষ্যণীয়।
জানা যায়, নদীবেষ্টিত গাইবান্ধার প্রায় ৪ লক্ষাধিক মানুষের বসবাস চরাঞ্চলে। জেলার অন্যান্য এলাকার চেয়ে এই অঞ্চলে শীতের প্রকোপ বেশি। এখানকার অধিকাংশ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস। প্রাকৃতিক নানা দুর্যোগ পেরিয়ে কোনো মতে বেঁচে থাকা তাদের। এরই মধ্যে শীতে কাবু তার। ছিন্নমূল পরিবারের এসব মানুষদের শীত নিবারণ এখন কষ্টের হয়ে পড়েছে। সামর্থ্য না থাকায় সেই গরিবের মার্কেটেও কিনতে পারছেন না শীতের কাপড়।
এদিকে শীতের তৗব্রতা বেড়ে যাওয়া চরম বেকায়দায় পড়েছেন খেটে খাওয়া মানুষরা। শীতের কবলে তাদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে। নিত্যপণ্যের দামবৃদ্ধির পাশাপাশি গরম কাপড় কেনার ব্যাপারটিও সমস্যায় যোগ হয়েছে তাদের।
নজরুল ইসলাম নামের এক রিকশাচালক বলেন, শীতের কারণে একদিকে কমেছে রোজগার, অন্যদিকে ছেলে-মেয়েদের শীতবস্ত্র কিনতে হিমশিম খাচ্ছি। তাও আবার গরিবের মার্কেটে ধনীদের ঠেলায় কাপড়াদি কেনা দায় হয়ে পড়েছে।
মেরিনা আক্তার নামের এক স্কুলশিক্ষিকা জানান, হঠাৎ করে শীতের তীব্রতা বেড়েছে। বড় বড় মার্কেটে গরম কাপড়ের দাম বেশি। তাই গাউন পট্টির ফুটপাতের দোকানগুলোতে কম দামে শীতবস্ত্র কিনতে এসেছেন। এখানে থেকে বেছে বেছে সোয়েটার-জ্যাকেট ও মোজা কিনেছেন তিনি।
বিক্রেতা লুৎফর রহমান বলেন, আমরা যারা আছি তাদের মধ্যে অনেকেই বিশেষ করে শীতকালে এখানে অস্থায়ী দোকান বসাই। এখানে কম দামে ভালো মানের শীতবস্ত্র পাওয়া যায়।
তিনি আরও বলেন, আগে শুধু নিম্নআয়ের মানুষরা এখানে কাপড় কিনতেন। ইদানিং সব শ্রেণি-পেশার মানুষ এখানে বস্ত্রাদি কিনতে আসেন।
গাইবান্ধা জেলা প্রশাসক মো. অলিউর রহমান বলেন, ছিন্নমূল মানুষরা যাতে করে শীত নিবারণ করতে পারে, সে বিষয়ে নজরদারি রাখা হয়েছে। ইতোমধ্যে কম্বল বিতরণ কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।
এসজি