ঘন কুয়াশার চাদরে ঢাকা নওগাঁর জনপদ

উত্তর জনপদের জেলা নওগাঁয় গত কয়েক দিন ধরে বেড়েই চলছে শীতের তীব্রতা। সন্ধ্যা নামার সঙ্গে সঙ্গে বৃষ্টির মতো পড়ছে শীতের শিশির। সেই সঙ্গে উত্তরের হিমেল হাওয়া। এর পাশাপাশি চারিদিক জুড়ে ঘন কুয়াশা। গত কয়েকদিন হালকা কুয়াশা থাকলেও শুক্রবার বিকাল থেকে ঘন কুয়াশায় ঢাকা পড়ছে নওগাঁর বিভিন্ন উপজেলা। দিনের বেলাতেও যানবাহনগুলা লাইট জ্বালিয়ে চলাচল করছে। সূর্যের দেখা না মেলায় হিমেল হাওয়ার কারণে কনকনে শীতে নাকাল হয়ে পড়েছে সর্বস্তরের মানুষ।
হিমেল হাওয়া ও ঘন কুয়াশায় শীতের তীব্রতাকে বাড়িয়ে তুলেছে। এতে করে মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে। বিপাকে পড়ছেন শ্রমজীবী ও কর্মজীবী মানুষ।
অন্যদিক শীতের তীব্রতা কাঁপন ধরিয়েছে মানুষের হারে। তাপমাত্রা হ্রাস পেতে শুরু করায় শীতের কারণে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে শিশু ও বৃদ্ধরা। বাড়ছে করোনার প্রকোপও।
ঘন কুয়াশা ও তীব্র শীতে বিপাকে পড়েছেন ছিন্নমূল পথ শিশুরাও। ঘন কুয়াশার কারণে বিভিন্ন ধরনের ফসল ও সবজির ক্ষতির আশঙ্কা করছেন জেলার কৃষকরা।
এদিকে ঘন কুয়াশায় কোনো কিছু স্পষ্ট দেখা না যাওয়ায় সড়ক দুর্ঘটনার আশঙ্কা করা হচ্ছে। তাই বাধ্য হয়ে জেলার আঞ্চলিক সড়কসহ অন্যান্য সড়কে চলাচলরত বাস, ট্রাক, ভটভটি, অটোচার্জারসহ সকল যানবাহন হেড লাইট জ্বালিয়ে চলাচল করছে।
সরজমিনে জেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, শ্রমজীবী নারীদের একটি উল্লেখযাগ্য অংশ কাজ করেন বিভিন্ন ফসলের মাঠে। তারা জানান, ভোরে ঘুম থেকে ওঠে নিজেই রান্না করতে হয়। এই শীতে সাংসারিক কাজকর্ম সেরে কর্মস্থলে যেতে তাদের অনেক কষ্ট হয়।
শনিবার (২৪ ডিসেম্বর) সকালে কথা হয় আত্রাই উপজেলার পাইকারা গ্রামের শ্রমজীবী নারী শারমিন আক্তারের সঙ্গে। তিনি জানান, খুব সকাল সকাল তাকে ঘুম থেকে উঠে রান্না শেষে সন্তানদের স্কুলে পাঠিয়ে তাকে কর্মস্থলে আসতে হয়। কয়েক দিনের শীতে তাকে কর্মস্থলে আসতে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। পেটের দায়ে অনেকেই দিনমজুর হিসেবে মাটি কাটা, ইট ভাটায় কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। এদের মধ্য অনেকেই রয়েছে বৃদ্ধ। শীতের তীব্রতা ও গরম কাপড়ের অভাবে মানবেতর জীবনযাপন করতে হচ্ছে তাদের।
ইটভাটায় কর্মরত সাজেদুর রহমান জানান, তার বাড়ি কিশোরগঞ্জে। পেটের দায়ে বৃদ্ধ বয়সে কাজ করছেন ইটভাটায়। থাকেন ইটভাটার এক খুপড়ি ঘরে।
তিনি বলেন, শীতের কারণে রাতে মাঝে মাঝে মনে হয় হাত-পা বরফ হয়ে গেছে।
শহরের পার-নওগাঁর সিএনজিচালক বিপ্লব হোসেন বলেন, সকাল বেলা গাড়ি নিয়ে বের হলেও শীতের তীব্রতা বৃদ্ধি থাকায় লোকজন কম থাকে। এজন্য তাকে গাড়ি নিয়ে বসে থাকতে হয়।
এসব নিম্নআয়ের বিভিন্ন পেশার মানুষ চায় স্বাভাবিকভাবে বাঁচতে। এজন্য খেটে খাওয়া এসব শ্রমজীবী মানুষের পাশে বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও সরকার সদয় হয়ে পাশে দাঁড়াবেন এমনটাই প্রত্যাশাই করছেন তারা।
এ ব্যাপারে নওগাঁর বদলগাছী আবহাওয়া অধিদপ্তরর উচ্চ পর্যবেক্ষক হামিদুল হক জানান, শনিবার সকালে নওগাঁয় সর্বনিম্ম তাপমাত্রা ছিল ১০ দশমিক ০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এই মৃদু শৈত্য প্রবাহ আরো বেশ কিছু দিন থাকতে পারে।
এসআইএইচ
