কক্সবাজারে সৈকতে পর্যটকদের বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস

তিন দিনের টানা ছুটিতে কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে পর্যটকের উপচে পড়া ভিড়। কক্সবাজার শহরের কোথাও তিল ধারণের জায়গা নেই। শহর এখন পর্যটকদের দখলে। ছুটি তিন দিন হলেও পর্যটকদের ভিড় থাকবে সপ্তাহ জুড়ে।
সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা বলছেন, আগামী ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত পর্যটকে ঠাসা থাকবে কক্সবাজার। অধিকাংশ হোটেল-মোটেলের ৭০-৮০ শতাংশ রুম অগ্রিম বুকিং হয়ে আছে। বছরের শেষ সূর্যাস্ত ও নতুন বছরের সূর্যদোয় দেখতে প্রতি বছর কয়েক লাখো পর্যটক জড়ো হন কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে। এ বছর অন্য বছরের চেয়ে আরও বেশি পর্যটকের ভিড় দেখা যাচ্ছে বলে হোটেল-মোটেল অফিসার্স ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক কলিম উল্লাহ জানান।
পর্যটকের ঢল দেখে ভীষণ খুশি ব্যবসায়ীরা। খালি নেই হোটেল, মোটেল, গেস্ট হাউস, রেস্ট হাউস। সাপ্তাহিক ছটি শুক্র ও শনিবারের সঙ্গে যোগ হয়েছে বড়দিনের ছুটি। সব মিলিয়ে তিন দিনের টানা ছুটিতে কক্সবাজার সমুদ্র এখন পর্যটকে ভরপুর। পর্যটকদের নিরাপত্তায় কাজ করছেন টুরিস্ট পুলিশ ও জেলা প্রশাসকের বিচ কর্মীরা। পর্যটকের আনাগোনা ও ভিড় ডিসেম্বর মাস জুড়ে থাকবে বলে মনে করেন ট্যুরিস্টি পুলিশের কর্মকর্তারা।
শুক্রবার (২৩ ডিসেম্বর) বিকাল থেকে পর্যটকে ভরে গেছে কক্সবাজার। যানজট আর জনজটে একাকার কক্সবাজার শহর। অতিরিক্ত পর্যটকের চাপ সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে প্রশাসন। টানা তিন দিন আড়াই লাখ পর্যটকের পদভারে মুখর থাকবে বিশ্বের দীর্ঘতম কক্সবাজার সমুদ্রসৈকত- এমনটা মনে করেন হোটেল ব্যবসায়ী নেতারা।
২৩ ও ২৪ ডিসেম্বর সাপ্তাহিক ছুটি এবং ২৫ তারিখ বড়দিনের ছুটিতে অগ্রিম হোটেলের কক্ষ বুকিং দিয়েছেন পর্যটকরা। এতে ২৩ ডিসেম্বর কক্সবাজারের অধিকাংশ হোটেলের সব কক্ষ বুকিং হয়ে গেছে। তাই বৃহস্পতিবার বিকেল থেকেই পর্যটকরা কক্সবাজারমুখী হয়েছেন।
কয়েকটি হোটেল ঘুরে দেখা যায়, অধিকাংশ হোটেল পর্যটকের পদচারণায় মুখর হয়ে উঠেছে। কক্ষ পেতে ব্যাগপত্র নিয়ে এক হোটেল থেকে অন্য হোটেলে ছোটাছুটি করতেও দেখা যায় বেশকিছু পর্যটককে।
অন্যদিকে শুক্রবার (২৩ ডিসেম্বর) বিকেলে সৈকতের লাবণী, সুগন্ধা ও কলাতলী পয়েন্টে দেখা গেছে, হাজারো পর্যটকের ভিড়। কেউ বালিয়াড়িতে দৌঁড়ঝাপ, কেউ সমুদ্রস্নানে ব্যস্ত, কেউ ঘোড়ার পিঠে চড়ছে আবার কেউ কেউ জেটস্কি বা বিচ বাইকে পুরো সৈকত ঘুরে বেড়াচ্ছেন। যে যার মতো করে আনন্দে মেতেছেন।
পর্যটন মৌসুমে বিনোদনপ্রেমীদের চাপ বাড়ায় প্রতিটি স্পটে সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করছে টুরিস্ট পুলিশ ও জেলা প্রশাসকের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট।
শুধু কক্সবাজার সমুদ্রসৈকত নয়, পর্যটকরা ঘুরে বেড়াচ্ছেন প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিন, পাথুরে সৈকত ইনানী, পাটোয়ার টেক হিমছড়ি ও রামু বৌদ্ধ মন্দির, মহেশখালী আদিনাথ মন্দির, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্ক ডুলাহাজারা, টেকনাফের মার্টিনের কূপ ও সোনাদিয়া।
শাহবাগ এলাকা থেকে আসা সামুন ও লিনা বলেন, নিরিবিলি প্রকৃতির সঙ্গে সময় পার করতে কক্সবাজার চলে এসেছি। রুম পেতে একটু কষ্ট হয়েছে। তবে সমুদ্রেস্নান ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে পেরে সব কষ্ট ভুলে গেছি।
দিনাজপুর থেকে আসা পর্যটক নাঈম খান বলেন, বছরের শেষে ছুটি কাটাতে কক্সবাজার এসেছি। আসার সময় রুম বুকিং দেওয়া হয়নি। এখানে এসে রুম না পেয়ে একটু কষ্ট হচ্ছে।
হোটেল লং বিচের ম্যানেজার মাসুদ রহমান বলেন, ডিসেম্বরে আমাদের পর্যটক মৌসুম শুরু হলেও প্রথম দিকে পর্যটকের তেমন সাড়া পাইনি আমরা। আজ থেকে যে টানা ছুটি ছিল সেটাতে আমাদের হোটেলে শতভাগ বুকিং হয়েছে। এতে আমরা ক্ষতি পূরণ করতে পারব। আশা করছি ডিসেম্বরের শেষ পর্যন্ত এ ধারা অব্যাহত থাকবে।
ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন অব কক্সবাজারের (টুয়াক) উপদেষ্টা মফিজুর রহমান বলেন, কিছুদিন ধরে আমাদের ব্যবসা মন্দা যাচ্ছিল। এতে হতাশায় ভুগছিলেন পর্যটক ব্যবসায়ীরা। টানা তিন দিনের ছুটিতে কক্সবাজারের সব হোটেল বুকিং হয়েছে। অনেক পর্যটক রুমের জন্য কল দিচ্ছে তারপরও আমরা তাদের রুম দিতে পারছি না।
কক্সবাজার টুরিস্ট পুলিশ জিল্লুর রহমান বলেন, টানা তিন দিনের ছুটিতে কয়েক লাখ পর্যটকের সমাগম হতে পারে। তাই আমাদের টুরিস্ট পুলিশের একাধিকও টিমও কাজ করছে। শুধু তাই নয় পর্যটকের এ চাপ থার্টি ফার্স্ট নাইট পর্যন্ত থাকবে। পর্যটকদের নিরাপত্তায় আমরা সবসময়ই সজাগ আছি।
কক্সবাজার পর্যটক সেলের ম্যাজিস্ট্রেট মাসুম বিল্লাহ বলেন, আমরা পর্যটকদের নিরাপত্তায় সবসময় মাঠে আছি। খাবার থেকে শুরু করে সবকিছু দাম নিয়ন্ত্রণ করতে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।
গেস্ট হাউস রেস্ট হাউস মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাসেম সিকদার বলেন, ডিসেম্বর হচ্ছে পর্যটন মৌসুমের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময়। এ সময় স্কুল, কলেজ ও কোর্ট-কাচারি বেশির ভাগ বন্ধ থাকে। ফলে পরিবার পরিজন, শিক্ষার্থী, শিক্ষক, প্রেমিক যুগল ছুটে আসেন কক্সবাজারে। আগামী এক সপ্তাহ কক্সবাজারে অন্তত ৮ থেকে ১০ লাখ পর্যটক ঢুকবে কক্সবাজারে। সামগ্রিক পরিবেশ পরিস্থিতি অনুকূলে থাকলে কয়েক হাজার কোটি টাকার ব্যবসা হতে পারে। বিভিন্ন খাতে বিশেষ করে, হোটেল, রেস্তোরাঁ, শুঁটকি, বার্মিজ মার্কেট, ডাব-কলা ব্যবসায়ী, বিচ বাইক, ঝিনুক, ঘোড়া ব্যবসায়ী, মার্কেট, ফটোগ্রাফার, জেট স্কি, ক্ষুদ্র ও মাঝারি যানবাহনসহ অন্তত কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত ও পার্শ্ববর্তী পর্যটন স্পটগুলোতে দেড় লাখেরও বেশি মানুষ পর্যটন ব্যবসা করে জীবিকা নির্বাহ করেন।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শাহীন ইমরান বলেন, কক্সবাজার পর্যটন শিল্পকে আরও আধুনিক, উন্নত, আকর্ষণীয় করার লক্ষ্যে ব্যাপক কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়েছে। সব পর্যটন স্পটগুলোকে সিসিটিভির আওতায় আনার কাজ চলছে। সারা বছর যাতে কক্সবাজারে পর্যটকের আনাগোনা থাকে সে দৃষ্টি ভঙ্গি নিয়ে পর্যটন শিল্প উন্নয়নে ব্যাপক কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়েছে। পর্যটকেরা যেখানে যাক নিরাপত্তার চাদরে ঢাকা থাকবে। বর্তমানে আড়াই থেকে তিন লাখ পর্যটকের রাত্রিযাপনের ব্যবস্থা রয়েছে। আগামী পাঁচ বছরে আরও দ্বিগুণ পর্যটক থাকার ব্যবস্থা তৈরি করা হচ্ছে কক্সবাজারে। শুধু তাই নয় পর্যটক সেবাখাতকে উন্নত প্রযুক্তি নির্ভর করা হবে।
এসএন
