কক্সবাজারে বিক্রি হচ্ছে বিষাক্ত পটকা মাছ
কক্সবাজারের মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে বিক্রয় করা হচ্ছে বিষাক্ত পটকা মাছ। ঔষুধী গুণের অজুহাত দিয়ে এসব বিষাক্ত পটকা মাছ বিক্রি করছে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী। ১৪ ডিসেম্বর কক্সবাজার মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে এমন দৃশ্য দেখা গেছে। ২২ দিনের মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা শেষে আবারও চাঙা হয়ে উঠেছে কক্সবাজার মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র। ফিশারিঘাটমুখী রাস্তা ইতিমধ্যে ব্যস্ত হয়ে উঠেছে। মাছ ভর্তি ড্রাম ও ঝুড়ি নিয়ে ছুটছে রিকশা-ভ্যান, পিকআপ আর ট্রাক।
গত ২৮ অক্টোবর মধ্যরাতে শেষ হয়েছে মাছ ধরায় সরকারি ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা। এই ২২ দিন সাগরে ইলিশ আহরণ, ক্রয়-বিক্রয়, মজুদ ও পরিবহন সম্পূর্ণভাবে বন্ধ ছিলো। ২৯ অক্টোবর থেকে মৎস্য কেন্দ্রে জেলে,মাঝি ও মাছ ব্যবসায়ীদের হাঁকডাকে সরগরম হয় অবতরণ কেন্দ্র। সাগর থেকে মাছ ভর্তি ট্রলার আসছে এবং খালি ট্রলার যাচ্ছে মাছ ধরতে।
ইলিশের পাশাপাশি ধরা পড়ছে নানা জাতের মাছ। আর সেখানে ঔষুধী গুণের দোহাই দিয়ে মওজুদ করছে বিষাক্ত পটকা মাছ। পটকা মাছ দেশের অনেক জায়গায় নিষিদ্ধ হলেও কিছু অসাধু ব্যবসায়ী বিক্রি করছেন এসব বিষাক্ত মাছ। মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের মাছ ব্যবসায়ী ফাহাদ হোসেন জানান, ৪০ টাকা কেজিতে পটকা বিক্রি করা হচ্ছে। এগুলো চট্টগ্রাম ও ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হবে।
ফাহাদ আরও বলেন, পটকা মাছ খাওয়া যায়, কিন্তু এর ডিম খেলে মানুষ মারা যায়। এটা ঔষধী মাছ। তাছাড়া এই ব্যবসা আমার নয় আমি মজুরি নিয়ে কাজ করছি। এ বিষয়ে কক্সবাজার মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক মোঃ বদরুদ্দৌজা বলেন, মাছটি আমার নজরে আসেনি। আমার চোখে পড়লে হয়তো আমি সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নিতে পারতাম। ব্যবসায়ীরা এসব মাছ বিক্রি করতে চোখে পড়লে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোঃ বদরুজ্জামান বলেন, দেশের দক্ষিণাঞ্চলের জেলাগুলোর কোথাও কোথাও বিশেষ পদ্ধতিতে রান্না করে পটকা মাছ খাওয়া হয়। কিন্তু মাছটি বিষাক্ত।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে তিন প্রজাতির পটকা মাছ পাওয়া যায়। প্রায় ১২ সে.মি. লম্বা হয় এসব মাছ। মাথা ও পিঠ চওড়া, লেজের দিকটা সরু। পিঠের দিকে জলপাই রঙ, পাশে ও পেটের অংশ সাদা এবং পিঠে কালো কালো দাগ থাকে। এই মাছ পানিতে নিজের আকৃতি পরিবর্তন করতেও সক্ষম৷ মাছটি দেখতে খুবই সুন্দর। তবে খুবই বিষাক্ত। এই মাছ খেয়ে মারা গেছেন অনেক মানুষ।
পটকা মাছের ৪টি বৈজ্ঞানিক নাম আছে যথাক্রমে, টেট্রোডন প্যাটোকা, শেলোনোডন প্যাটোকা, টেট্রোডন ডিসুটিডেনস এবং টেট্রোডন কাপ্পা। সংশ্লিষ্টদের মতে, পটকা মাছের বিষক্রিয়া সবার ক্ষেত্রে সমানভাবে হয় না। কারও প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি থাকতে পারে আবার কারও কম থাকতে পারে। সে হিসেবে পটকা মাছ খাওয়ার ২০ মিনিট থেকে ৩ ঘণ্টার মধ্যে বিষক্রিয়া শুরু হতে পারে।
জানা গেছে, কক্সবাজারের এক শ্রেণির মাছ ব্যবসায়ী এই পটকা মাছ আহরণ করে আসছে দীর্ঘদিন ধরে। চট্টগ্রাম ও ঢাকায় তাদের নির্দিষ্ট কিছু লোক আছে। ২০১২ সাল থেকে কক্সবাজার মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র হয়ে পটকা মাছের চালান নিয়ে যাচ্ছে এই ব্যবসায়ীরা। পরিচিত মাছ না হওয়ায় তেমন একটা নজরে আসেনা এই পটকা। আর এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র হয়ে পটকা মাছ নিয়ে যাচ্ছে এই ব্যবসায়ীরা।
মাছ ব্যবসায়ী মোহাম্মদ ইয়াছিন বলেন, পটকা মাছ বিশেষ কিছু ঔষধের জন্য খুবই কার্যকর। এজন্য জেলেদের জালে ধরা পড়লে সেগুলো ছেড়ে না দিয়ে নির্দিষ্ট কিছু ব্যবসায়িরা দাম দিয়ে কিনে নেয়।
মৎস্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিষাক্ত একটি পটকা মাছের বিষে কমপক্ষে ৩০ জন মারা যেতে পারে। প্রতি বছর এই মাছ খেয়ে মানুষ মারা গেলেও বাংলাদেশে তেমন একটা গবেষণা হয়নি। গবেষণা করা হলে এই মাছ বিক্রয় বন্ধ এবং পাশাপাশি এই বিষ কাজে লাগানো যেতো।
কক্সবাজার সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ জাকারিয়া বলেন, পটকা মাছ বিক্রি হচ্ছে এ ধরনের কোনো তথ্য আমাদের জানা নেই। বিষাক্ত এই মাছ বিক্রয় করা হচ্ছে এধরণের তথ্য পেলে আইনগত ব্যবস্থাগ্রহণ করা হবে।
এএজেড