বিনা টিকিটে পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার ও জাদুঘর দর্শন

বিজয় দিবস উপলক্ষে সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী শুক্রবার( ১৬ ডিসেম্বর) নওগাঁর বদলগাছী উপজেলার পাহাড়পুরে অবস্থিত পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার ও জাদুঘরে প্রবেশে পর্যটকদের কোনও প্রবেশ ফি বা টিকিট লাগবে না। বৃহস্পতিবার (১৫ ডিসেম্বর) সকালে এ তথ্য নিশ্চিত করেন পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহারের কাস্টোডিয়ান ফজলুল করিম আরজু।
তিনি বলেন, ১৬ ডিসেম্বর, রক্তস্নাত বিজয়ের ৫১তম বার্ষিকী। স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের মাথা উচু করার দিন। দীর্ঘ ৯ মাস সশস্ত্র সংগ্রাম করে বহু প্রাণ আর এক সাগর রক্তের বিনিময়ে এদিন বীর বাঙালি ছিনিয়ে আনে বিজয়ের লাল সূর্য। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী এদেশের মুক্তিকামী মানুষের উপর অত্যাচার-নির্যাতনের পর এদিন আত্মসমর্পণ করে মুক্তিকামী মানুষের কাছে। আর পাকিস্তানি বাহিনীর এই আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে সমাপ্তি ঘটে দীর্ঘ দুই যুগের পাকিস্তানি শোষণ আর বঞ্চনার। নির্যাতন, নিষ্পেষণের কবল থেকে মুক্ত হয় বাঙালি জাতি। তাই এই স্মৃতিবহ দিনে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের নির্দেশনায় এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
ফজলুল করিম আরজু বলেন, প্রতিদিন ৭০০ থেকে ১০০০ দর্শনার্থীর সমাগম ঘটে পাহাড়পুরে। আমরা আশা করছি বিজয় দিবসের দিনে আরো বেশি সংখ্যক দর্শনার্থী আসবে এখানে। এছাড়া এদিন পিঠামেলারও আয়োজন থাকবে বিহার চত্বরে। চাইলে দর্শনার্থীরা তাদের পছন্দের পিঠা কিনে খেতে পারবেন।
তিনি আরো বলেন, আমরা চাই বিজয় দিবসের ছুটির দিনে পরিবার নিয়ে সবাই এখানে আসুক। এদিন সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত বিনা টিকিটে সর্বসাধারণ প্রবেশ করতে পারবে। সেই সঙ্গে ইউনেস্কোর মতে পাহাড়পুর বিহার বা সোমপুর বৌদ্ধ বিহার দক্ষিণ হিমালয়ের দ্বিতীয় বৃহত্তম বৌদ্ধ বিহার ঘুরে ঘুরে সবাই উপভোগ করুক।
উল্লেখ্য, পাহাড়পুর নামটি আধুনিক, এর প্রাচীন নাম সোমপুর। বাংলাদেশে সপ্তম শতাব্দিতে (৭৭০-৮১০ খ্রিষ্টাব্দ) বৌদ্ধ ধর্মীয় পাল রাজ বংশের প্রতিষ্ঠা হয়। খ্রিষ্টীয় অষ্টম ও নবম শতাব্দিতে পাল বংশের দ্বিতীয় ও তৃতীয় রাজা ধর্মপাল এবং তার পুত্র দেবপাল বাংলা, বিহার এবং কনৌজ পর্যন্ত বিরাট সম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন। বৌদ্ধ ধর্মের চরম উৎকর্ষতার যুগে তাদেরই পৃষ্ঠপোষকতায় বাংলাদেশে এই পাহাড়পুর বিহার ও মন্দির গড়ে উঠে। মোট ৭০.৩১ একর জমির উপর পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহার অবস্থিত। ১৯৩৪ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত খননের ফলে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ এই বিহারের পূর্ব দিকে সত্যপিরের ভিটা ও মন্দিরের চতুর্দিকে বেষ্টীত কক্ষগুলো এবং সমগ্র বিহারটি আবিস্কার করেন। এর মধ্যভাগে প্রধান বিহার এবং তাকে ঘিরে ১৯৮টি বাসপযোগী কক্ষ, বিস্তৃত প্রবেশ পথ, অসংখ্য বিনোদন স্তুপ, ছোট ছোট মন্দির, পুষ্করিণী অবস্থিত।
মন্দিরটি উত্তর-দক্ষিণে দৈঘ্য ৩৫৭ ফুট এবং প্রস্থে পূর্ব-পশ্চিমে ৩১৪ ফুট। মূল বিহারটি এর মধ্যস্থলে অবস্থিত। সন্ধ্যাবর্তী এখানকার রাজার মেয়ে ছিলেন। আকর্ষণীয় স্থাপত্য বিশাল আয়তন ও ঐতিহাসিক গুরুত্বের জন্য পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার আজ বিশ্বের অন্যতম প্রাচীন সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃতপ্রাপ্ত। এটি ইউনেস্কো কর্তৃক বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকাভুক্ত। মূল ভূমি থেকে বিহারটির উচু প্রায় ৭২ ফুট। পাহাড়পুরকে প্রাচীন নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের মিনি সংস্করণ হিসেবে চিহ্নিত করা যায়। প্রতি বছর এখানে বহু দেশি-বিদেশী পর্যটক ও সাধারণ মানুষের সমাগম হয়।
এসআইএইচ
