মুক্তিযুদ্ধের ক্ষত নিয়ে আজও দাঁড়িয়ে আছে সেই বাড়ি
ফেনীর অপু চৌধুরীর কাঠের তৈরি বাড়ি ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ব্রিটিশ আমলে তৈরি এই বাড়িতে লুকিয়ে আছে মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসও। মুক্তিযুদ্ধের ক্ষত চিহ্ন নিয়ে বাড়িটি আজো দাঁড়িয়ে আছে। ইতিহাস, ঐতিহ্যে ভরপুর এই বাড়ি ফেনীর ফুলগাজী উপজেলায় অবস্থিত।
মহান মুক্তিযুদ্ধে স্মৃতিবিজড়িত পুরোনো এই বাড়িটি দেখতে দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে ছুটে আসেন ঐতিহ্যপ্রেমীরা। দোতলা বিশিষ্ট এই বাড়ির ভেতরে রয়েছে অপূর্ব কারুকাজ। প্রাচীন এই বাড়ির দেয়ালের পরতে পরতে আছে সৌন্দর্যের ছোঁয়া। মিয়ানমার থেকে আনা মালামাল দিয়ে নির্মিত হয় বাড়িটি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাড়িটির উত্তরাধিকার অপু রঞ্জন চৌধুরী বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় তৎকালীন আমজাদহাট ইউনিয়নের মধ্যে এই বাড়িটা সবচেয়ে বেশি বিধ্বস্ত হয়েছিল। মুক্তিযোদ্ধাদের অবস্থানের কারণে পাক হানাদার ও রাজাকাররা বাড়িটিকে টার্গেট করে হামলা চালিয়েছিল। হামলার ঘটনার আগে টের পেয়ে বাড়ির লোকজনসহ সবাই সরে গিয়েছিল। ফলে হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। সেই থেকে এই বাড়িটির পুনর্বাসন বা পুননির্মাণ কাজ মোটেও করা হয়নি। এই ঘরগুলো দোতলা বিশিষ্ট। ঘরে এখনো মানুষ বসবাস করে।
তিনি আরো বলেন, স্থাপনাটির বয়স দুই শতাধিক বছর। আমার বাবা-চাচারা ছয় ভাই ছিলেন। তাদের মধ্যে পাঁচ ভাই মিয়ানমারে কাঠের ব্যবসা করতেন। বাকি একজন দেশে থাকতেন। সেখান থেকে নদীপথে এই সমস্ত কাঠ এনে আমার বাবা এই স্থাপনা নির্মাণ করেন।
বাড়ি নির্মাণের কাঁচামাল প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এই স্থাপত্যের কাঠগুলো তৎকালীন মিয়ানমার থেকে চট্টগ্রামে আসত। পরে চট্টগ্রাম থেকে মুহুরী নদী হয়ে আমাদের বাড়ির পাশের কহুয়া খালে আসত। খাল থেকে শ্রমিকরা বিভিন্নভাবে কাঠগুলো বাড়িতে নিয়ে আসতেন। এই স্থাপত্যে যে ইটগুলো ব্যবহার করা হয়েছে, সেগুলো আমাদের বাড়িতেই কারিগররা তৈরি করত।
তিনি আরো বলেন, এসব কারিগরের বসতি ছিল ঢাকায়। তারা সুদূর ঢাকা থেকে এসে এই সমস্ত স্থাপনা নির্মাণ করে। এই প্রাচীন স্থাপত্য নির্মাণে সবচেয়ে বেশি ব্যবহার হয়েছে মিয়ানমারের কাঠ, ইট ও সুরকি। এই সুরকিগুলো সিমেন্টের চেয়েও অনেক শক্তিশালী।
স্থাপনা দেখতে আসা আরিফুর রহমান বলেন, মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত এই স্থাপত্যটি আমজাদহাট ইউনিয়নের মধ্যে আছে, তা অনেকের অজানা। এই বাড়িতে প্রাচীন দুটি স্থাপনা খুবই চমৎকার।
স্থানীয় বাসিন্দা শাহেদ হোসেন বলেন, প্রাচীন স্থাপত্যটি আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের সাক্ষী হয়ে আছে। বাড়িটিকে সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট জোর দাবি জানাই।
এ ব্যাপারে খেজুরিয়া মমতাজ উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক জসিম উদ্দিন বলেন, আমাদের দাবি-এ বাড়িটি ফেনী জেলার প্রাচীন স্থাপত্যগুলোর তালিকার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করা হোক। তরুণ প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস সম্পর্কে জানুক।
ফেনী জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার আব্দুল মোতালেব বলেন, এই বাড়ির সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি জড়িয়ে আছে। বাড়িটিকে সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণ করলে নতুন প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধে পাক হানাদারদের হাতে বিধ্বস্ত বাড়িটি সম্পর্কে জানবে।
এসআইএইচ