৯ ডিসেম্বর বিজয় উল্লাসে মেতে ওঠে নেত্রকোনা
আজ ৯ ডিসেম্বর। ১৯৭১ সালের এদিনে হানাদার মুক্ত হয় নেত্রকোনা। মুক্তির আনন্দে সেদিন বিজয় উল্লাসে মেতে ওঠেন বীর মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিকামী জনতা। নেত্রকোনা জেলা শহরে নানা আয়োজনে দিবসটি পালন করা হচ্ছে।
জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে স্মূতিসৌধে সকালে সমাজ কল্যাণ প্রতিমন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা আশরাফ আলী খান খসরু এমপি, জেলা পরিষদের প্রশাসক এ্যাডভোকেট অসিত সরকার সজল,মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব নজরুল ইসলাম, বাংলাদেশ প্রেসক্লাব নেত্রকোনা জেলা কমিটির সভাপতি শামীম আহমেদ তালুকদার, হাওর বন্ধু ইকবাল হোসেন, সম্পাদক মহিউদ্দিন চৌধুরীসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন এর নেতৃবৃন্দ শহীদের স্মরণে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।
তারপর একটি বণাঢ্য র্যালি বের হয়ে শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে টাউন হলে আলোচনা সভায় মিলিত হন। ১৯৭১ সালে পাকবাহিনী বাঙালির উপর বর্বর নির্যাতন চালায়। হত্যা করে অসংখ্য নিরীহ মানুষ। লাশ পরে লাশ ফেলে স্তুপ করে নেত্রকোনা জেলার পূর্বধলার জারিয়া, কলমাকান্দার উব্দাখালি, রামপুর, আজগড়া, নাজিরপুর, দূর্গাপুরের বিরিশিরি ও বিজয়পুরে।
এসব জায়গা দেখলে এখনো গা শিউরে উঠে। যুদ্ধে পাক হানাদারদের অত্যাচার ছিল অত্যন্ত নির্মম। জেলায় ৫৯ জন বীর মুক্তিযোদ্ধাসহ শত শত নিরস্ত্র মানুষ পাক বাহিনীর হাতে নিহত হন। সম্ভ্রম হারান অগণিত মা-বোন।
পাক বাহিনীকে রুখতে আমাদের দামাল ছেলেরাও হাত-পা গুটিয়ে বসে থাকেনি। তারা হানাদারদের মোকাবিলা করেছে শক্ত হাতে ও বীরদর্পে। নেত্রকোনার বীর মুক্তিযোদ্ধারা বাঘমারা থেকে মহেষখোলা পর্যন্ত বাঘমারা, রংরা, মহষেখোলা সাব সেক্টর কমান্ডের অধীনে যুদ্ধ করেন।
যেভাবে হানাদার মুক্ত হলো নেত্রকোনা
১ ডিসেম্বর মোহনগঞ্জ থানার বড়তলী গ্রামে পাক আর্মিদের উপর বীর মুক্তিযোদ্ধারা আক্রমণ করেছিলেন। সে আক্রমণে ৩৫ জন পাকসেনা নিহত হয়েছিল। পরদিন দুই ডিসেম্বর পাকবাহিনী বড়তলী গ্রামে অগ্নিসংযোগ করে অনেক ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেয়।
৩ ডিসেম্বর ঝাঞ্জাইল বিরিশিরি রাস্তায় বীর মুক্তিযোদ্ধারা পাকবাহিনীর একটি ট্রাকের ওপর আক্রমণ করেন। সে সময় ছয় জন পাকসেনা নিহত হয়।
এই দিনে দূর্গাপুরের বিজয়পুরে পাকসেনাদের ক্যাম্পে বীর মুক্তিযোদ্ধারা বীরত্বের সঙ্গে আক্রমণ করেন। সে আক্রমণ একনাগাড়ে ছয় ডিসেম্বর পর্যন্ত চলেছিল। ছয় ডিসেম্বর পাকবাহিনী বিজয়পুর থেকে পালিয়ে দূর্গাপুরে চলে আসে। এই দিন বীর মুক্তিযোদ্ধারা বিজয়পুর ক্যাম্প দখল করে নেন। সাত ডিসেম্বর পাকবাহিনীরা দূর্গাপুর থেকে পালিয়ে যায়। স্বাধীন হয় দূর্গাপুর।
৮ ডিসেম্বর একে একে নেত্রকোনার প্রত্যেক থানা মুক্ত হয়ে যায়। পাকবাহিনীরা অনেক থানা ছেড়ে চলে যায়। তারা নেত্রকোনা শহরে আশ্রয় নেয়। নেত্রকোনাকে মুক্ত করতে তখন বীর মুক্তিযোদ্ধারা মরিয়া হয়ে ওঠেন। এক পর্যায়ে নয় ডিসেম্বর ভোরে তারা আক্রমণ করেন পাক আর্মিদের উপর। এসময় শুরু হয় সম্মুখ যুদ্ধ। সে যুদ্ধ চলে ৫/৬ ঘন্টা। এ যুদ্ধে শহীদ হন বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু খাঁ, আব্দুস সাত্তার ও আব্দুর রশিদ।
৯ ডিসেম্বর রাতে নেত্রকোনা মুক্ত হয়। জয় বাংলা ধ্বনিতে আকাশ বাতাস প্রকম্মিত হয়। হানাদারদের ঘাঁটিতে উড়ানো হয় স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা। বীর মুক্তিযোদ্ধা সুব্রত ঘোষ জানান, ৯ ডিসেম্বর নেত্রকোনা জেলার জন্য এক ঐতিহাসিক দিন।এই দিনে নেত্রকোনা জেলা হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে জয়ী হয়।প্রতি বছর তা পালন করে আসছে। এটি গৌরবের , মহিমান্বিত।
সাবেক জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার নুরুল আমিন বলেন,এ দিবসের মর্যাদা ধরে রাখতে হবে। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে এর ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে হবে। এই দিনে শহীদরা আমাদের ভাই। ভাইয়ের রক্তের দাগ অন্তর থেকে শুকায় নাই। আমরা সবাই মিলে তার মর্যাদা রক্ষা করবোই।
এএজেড