সৌন্দর্য ও সেবায় বদলে যাচ্ছে রামেক হাসপাতাল
বিভাগীয় মেট্রোপলিটন শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতাল। বিভাগের ৮ টি জেলার মানুষের উন্নত চিকিৎসা সেবার ভরসাস্থলও এটি। তবে এই হাসপাতালের। সেবা নিয়ে প্রশ্নের শেষ নেই। কিন্তু এখন সেই দৃশ্য পাল্টাচ্ছে। পরিবেশ ও সেবার মান দুটোই উন্নত হচ্ছে। আর একারণেই সেরা হাসপাতালের স্বীকৃতিও পাচ্ছে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতাল।
সম্প্রতি দেশের স্বাস্থ্যসেবায় বিশেষ অবদান রাখায় প্রথমবারের মতো রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতাল 'স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাতীয় পুরস্কার-২০২০' অর্জন করেছে। করোনাকালের স্বাস্থ্যসেবায় বিশেষ অবদানের জন্য বিশেষ সম্মাননাও পেয়েছে হাসপাতাল। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মাসিক পর্যালোচনায়ও দেশসেরা এই হাসপাতাল। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সর্বশেষ র্যাংকিং সেপ্টেম্বরে মোট ৩০০ পয়েন্টের মধ্যে ৬২.১৩ পেয়ে দেশসেরা হয়েছে এই হাসপাতাল।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সেবার সহজীকরণ করে ভোগান্তিমুক্ত সেবা প্রদানে আরও বেশি উদ্যোগী হয়েছেন। সেবা পেতে কেউ ভোগান্তির শিকার হলে কর্তৃপক্ষকের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগের সুযোগও পাচ্ছেন রোগীরা। হাসপাতালের দেয়ালে দেয়ালে সেবা নির্দেশিকা ও যোগাযোগের জন্য ফোন নম্বর দেওয়া হয়েছে। ফোন নম্বরে যোগাযোগ করে রাত-দিন ২৪ ঘন্টা সেবা পাচ্ছেন রোগীরা। তবে সবচেয়ে অবাক করা বিষয় হলো- হাসপাতালের পরিচালক নিজেও সেবাপ্রার্থীদের সমস্যা মুঠোফোনের মাধ্যমে শোনেন। এবং সে অনুযায়ী সহযোগিতাও করেন।
গত কয়েকদিন আগে সেবা নিতে এসে অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে ভোগান্তিতে পড়েছিলেন আশরাফ আলী নামের এক রোগীর স্বজন। তিনি জানান, রাতে ডাক্তার রাজশাহী থেকে ঢাকায় রোগী নিয়ে যেতে বলেছিলেন। তিনি বাইরে এসে অ্যাস্বুলেন্স খুঁজলে সেখানে অনেক ভাড়া চাচ্ছিলো। যেটা নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে অনেক বেশি। শেষে হাসপাতালের বাইরে থাকা নির্দেশিকার ফোন নম্বরে ফোন দিয়ে কথা বলেন। সমস্যার কথা জানালে হাসপাতালের পরিচালক কম ভাড়াতে একটি অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা করে দেন।
হাসপাতালের সেবা সহজীকরণে ইনডোর প্যাথলজি টেস্টিং ব্যবস্থাও উন্নত করা হয়েছে। এখন হাসপাতালের অভ্যান্তরেই স্বল্পমূল্যে সকল প্যাথলজিক্যাল টেস্টের সুযোগ পাচ্ছেন রোগীরা। হাসপাতালে রোগী পরিবহণে ট্রলিতে রোগী দূর্ভোগ দূর করতেও বিশেষ ব্যবস্থা করা হয়েছে। হাসপাতালের অভ্যান্তরের পরিবেশে সুন্দর রাখতে তিন ধরনের অস্থায়ী ডাস্টবিনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। নিয়মিত পরিচ্ছন্নতায় বাড়তি জনবল নিয়োগ দিয়ে সুন্দর পরিবেশে নিশ্চিত করা হচ্ছে।
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানী যোগদানের পর থেকেই রোগীর সেবা নিশ্চিতের এমন তৎপরতার প্রশংসার সবার মুখে মুখে। শুধু হাসপাতালে অভ্যান্তরেই নয়, হাসপাতালের বাইরেও তার সুনাম ছড়িয়েছে। বিশেষ করে করোনাকালীন চিকিৎসা ব্যবস্থাপনায় তার শ্রম ও আন্তরিকতা উদাহরণ হিসেবেই দেখছেন ডাক্তার-নার্সরা।
হাসপাতালের নার্সিং সুপারিয়েন্টডেন্ট সুফিয়া খাতুন জানান, হাসপাতালের চিকিৎসা পরিবেশ এখন আগের যে কোন সময়ের চেয়ে অনেক ভালো। আর এর পেছনে মূল কারিগর হিসেবে কাজ করে যাচ্ছেণ বর্তমান পরিচালক। তিনি ডাক্তার-নার্সদের প্রতিদিনই রোগীদের আন্তরিকতার সঙ্গে সেবা দেয়ার জন্য প্রেষণা যুগিয়ে যাচ্ছেন।
১২ শো শয্যার এই হাসপাতালে গড়ে প্রতিদিন সেবা নেন দুই থেকে আড়াই হাজারের বেশি রোগী। স্বল্প সুবিধা ও নানা প্রতিবন্ধকতার মাঝেও সেবা দিতে আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
হাসপাতালের প্লাস্টিক সাজার্রি ও বার্ন ইউনিটের বিভাগীয় প্রধান আফরোজা নাজনিন আশা জানান, গত তিন বছরে হাসপাতালের চিত্র কতটা পাল্টেছে, তা হাসপাতালের সামনে এসে দাঁড়ালেই বোঝা যায়। এক সময়ের জরাজীর্ণ পরিবেশকে পরিকল্পিতভাবে সবুজ ও ফুলে ফুলে সাজানো হয়েছে। আগে হাসপাতালের সামনে এসে দাঁড়ানোর উপায় ছিলো না। আর এখন একরকম উপভোগ করার মতো পরিবেশ।
আগে এই হাসপাতালে সাংবাদিকদের পেশাগত দায়িত্ব পালনের জন্য ভেতরে প্রবেশের অনুমতি দেয়া হতো না। এখন পরিচালককে জানিয়ে সাংবাদিকেরাও হাসপাতালে নির্ভয়ে প্রবেশ করতে পারেন। নিজের পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে পারেন। এতে হাসপাতালের কার্যক্রমেও অন্যান্য সময়ের চেয়ে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা বৃদ্ধি পেয়েছে।
হাসপাতাল পরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানী বলেন, রামেক হাসপাতালের চিকিৎসা সেবার মান উন্নয়নে তিনি চ্যালেঞ্জ নিয়েই কাজ করছেন। আর একারণেই রামেক হাসপাতাল আগে কখনো সেরার তালিকায় স্থান না পেলেও এখন পাচ্ছে। এই সফলতা হাসপাতালের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবার।
তিনি বলেন, হাসপাতাল নিয়ে আমাদের আরও অনেক পরিকল্পনা আছে। কিন্তু এখন কিছুটা হোচট খেতে হচেছ। তবে আশা পূর্বের মতো সকল প্রতিবন্ধকতা মাড়িয়ে এ অঞ্চলের মানুষকে আরও উন্নত সেবা নিশ্চিত করতে পারবো।
এএজেড