প্রধানমন্ত্রীকে বরণে প্রস্তুত কক্সবাজার
প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা আগামিকাল ৭ ডিসেম্বর কক্সবাজার সফরে আসছেন। প্রধানমন্ত্রী টানা সাড়ে ৫ বছরের বেশি সময় পর কক্সবাজারের এবারের সফরকে অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে নিয়ে জনসভা সফল করতে ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। একই সঙ্গে প্রশাসন ও আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষে নেয়া হয়েছে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
দলীয় সূত্র জানিয়েছে, উখিয়ার ইনানীস্থ বঙ্গোপসাগরের পাড়ে আন্তর্জাতিক নৌ মহড়ায় অংশ নিতে কক্সবাজার আসবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের নিকটবর্তী লাবণীর পয়েন্টের শহীদ শেখ কামাল ক্রিকেট স্টেডিয়ামে জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত বিশাল জনসভায় ভাষণ দেবেন প্রধানমন্ত্রী। ইতিমধ্যে জনসভাস্থলের সার্বিক কর্মযজ্ঞ সম্পন্ন হয়েছে, আজকের মধ্যে চূড়ান্ত হবে। সভাস্থলের আশপাশসহ পুরো শহর তোরণ, ব্যানার-ফেস্টুনে ছেয়ে গেছে।
সভাস্থলে প্রধানমন্ত্রীর মূল মঞ্চটি তৈরি করা হচ্ছে নৌকার আদলে। এর সাথে থাকবে ৪ টি উপ মঞ্চ। যেখানে কেন্দ্রীয় ও জেলা নেতৃবৃন্দ অবস্থান নেবেন। একই সঙ্গে উদ্বোধন ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের জন্য থাকবে আলাদা মঞ্চ। প্রধানমন্ত্রী ভাষণ প্রচারের জন্য পুরো শহর ও আশপাশের এলাকায় লাগানো হচ্ছে দুই শতাধিক মাইক। অন্যদিকে নিরাপত্তার জন্য নেয়া হচ্ছে নিচ্ছিদ্র নিরাপত্তার ব্যবস্থা।
কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মেয়র মুজিবুর রহমান জানিয়েছেন, কেবল সভাস্থল শহীদ শেখ কামাল ক্রিকেট স্টেডিয়াম নয়, এর আশপাশের পুরো কক্সবাজার শহর হবে জনারণ্য। এবারের জনসভায় সাড়ে ৪ লাখ মানুষের জমায়েত হতে পারে। প্রাথমিকভাবে শহীদ শেখ কামাল ক্রিকেট স্টেডিয়ামের অভ্যন্তরে তিন লাখের বেশি মানুষ অবস্থান নিতে পারবে।
এছাড়াও সৈকতের লাবণী পয়েন্ট, সুগন্ধা পয়েন্ট, বাহারছড়ার মুক্তিযোদ্ধা চত্বর, হলিডের মোড়, শহীদ স্মরণী এলাকা, কলাতলীর হোটেল মোটেল জোন হয়ে কলাতলীর ডলফিন মোড় পর্যন্ত মানুষ জমায়েত হবে। জনসভার ভাষণ প্রচারের জন্য পুরো এলাকাজুড়ে দুই শতাধিক মাইক ব্যবহার করা হচ্ছে।
তিনি আরও জানান, প্রধানমন্ত্রীর এবারের জনসভা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দেশের অন্য এলাকার চাইতে কক্সবাজারে বেশি মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে। কক্সবাজারে রয়েছে মাতারবাড়ী কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র, গভীর সমুদ্র বন্দর, কক্সবাজার রেল লাইন প্রকল্প, কক্সবাজার আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর, মেরিন ড্রাইভ প্রশস্তকরণ, সাব মেরিনের মাধ্যমে কুতুবদিয়ায় বিদ্যুৎ প্রকল্প, কক্সবাজার মেডিকেল কলেজ, সাবরাং এক্সক্লুসিভ ট্যুরিজম জোন, মহেশখালী এলএমজি টার্মিনালসহ অসংখ্য মেঘা প্রকল্প। ৭ ডিসেম্বর কক্সবাজারবাসী তার প্রতিফলন হিসেবে প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানানোর জন্য জনসভাস্থলে প্রস্তুত কক্সবাজার।
কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এডভোকেট ফরিদুল আলম চৌধুরী জানান, শহীদ শেখ কামাল ক্রিকেট স্টেডিয়ামে সকাল ১০টা থেকে মানুষ সমাগম শুরু হবে। জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে অনেকেই আজ ৬ ডিসেম্বর কক্সবাজার শহরে আসবে বলে জানিয়েছেন। সভায় দলীয় নেতারা সাড়ে ৪ লাখ মানুষের সমাগমের তথ্য জানিয়েছে। সেভাবে প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে।
কক্সবাজার পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. নজিবুল ইসলাম জানান, দলীয় প্রধান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে স্বাগত জানাতে পৌর এলাকাজুড়ে উৎসবে পরিণত হচ্ছে। এদিন কক্সবাজার পৌরসভা থেকে লাখের অধিক মানুষ উপস্থিত হবে। একই সঙ্গে রামু, ঈদগাঁও থেকে আসবে আরও দেড় লাখ মানুষ। এর বাইরে উখিয়া, টেকনাফ, চকরিয়া, পেকুয়া, কুতুবদিয়া, মহেশখালী থেকে প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানাতে আসা মানুষের নগরী হয়ে উঠবে কক্সবাজার।
কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মাহফুজুল ইসলাম বলেন, প্রধানমন্ত্রীর আগমন উপলক্ষ্যে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ইতিমধ্যে কয়েক দফা বৈঠক করেছে। প্রধানমন্ত্রী ও জনসভাস্থলসহ পুরো শহরের নিচ্ছিদ্র নিরাপত্তা নিশ্চিত করণে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। ৫ ডিসেম্বর থেকে শহরের বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। পুলিশ, র্যাব, বিজিবিসহ অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্যরা সমন্বয় করে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করবেন। এছাড়াও পুরো শহর সাদা পোশাকে বিভিন্ন সংস্থার সদস্যদের সার্বক্ষণিক নজরদারি থাকবে।
প্রসঙ্গত, ২০১৭ সালের ৬ মে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সর্বশেষ কক্সবাজার এসেছিলেন। দীর্ঘ সাড়ে ৫ বছরের বেশি সময়ের পর ৭ ডিসেম্বর আবার আসছেন।
এএজেড