নাটোরে চলছে পরিবহন ধর্মঘট, ভোগান্তিতে যাত্রীরা
৩০ নভেম্বরের মধ্যে ১০ দফা দাবি না মানায় রাজশাহী বিভাগে বাস-ট্রাক চলাচল বন্ধের অংশ হিসাবে নাটোরেও পরিবহন ধর্মঘট পালন করছে রাজশাহী বিভাগীয় সড়ক পরিবহন মালিক-শ্রমিক পরিষদ। বৃহস্পতিবার (১ ডিসেম্বর) সকাল ৬টা থেকে এ ধর্মঘট চলছে। এর ফলে চাপ বেড়েছে অভ্যন্তরীন পরিবহনে আর ট্রেনে। তার পরও ভোগান্তিতে পড়ছেন যাত্রীরা।
সরেজমিনে দেখা যায়,নাটোর শহরের বড়হরিশপুর এলাকা ও মাদ্রাসা মোড়ের বাস টার্মিনালে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছে বিভিন্ন দূর পাল্লার বাস। পাশেই বন্ধ অবস্থায় রয়েছে ট্রাক। তবে রাস্তায় চলছে রিকশা,অটোরিক্সা,সিএনজিসহ বিভিন্ন থ্রি হুইলার। অন্যান্য দিনের তুলনায় ওইসব যানবাহনের চলাচল আর যাত্রীর সংখ্যা বেশি। পাশাপাশি নাটোর রেল স্টেশনেও যাত্রীদের উপচেপড়া ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। তার পরও বিভিন্ন পয়েন্টে যাত্রীদের গাড়ির জন্য অপেক্ষা করতে দেখা গেছে।
হরিশপুর বাসস্ট্যান্ডে দাড়িয়ে থাকা যাত্রী রওশন আরা বলেন, শুক্রবার সরকারি একটি পরীক্ষা আছে। ঢাকায় যেতে হবে। সিংড়া থেকে প্রায় তিনগুণ ভাড়া দিয়ে এসেছি। এখন ঢাকায় যাওয়ার উপায় খুঁজছি।
মাদ্রাসা বাসস্ট্যান্ডের যাত্রী হাকিম জানান, রাজশাহী যেতে হবে। কিন্তু কিভাবে যাবো বুঝতে পারছি না। ভেঙে ভেঙে গাড়িতে গেলে সময় আর ভাড়া গুনতে হবে কয়েকগুন।
সদর উপজেলার দিঘাপতিয়া এলাকার অধিবাসী কামাল জোসেন জানান, রাজশাহী মেডিকেলে যাওয়া জরুরি। ছোট যানবাহনেই যেতে হবে। এতে ভাড়াও গুণতে হবে কয়েকগুণ। কিন্তু উপায় নেই। তাই রওনা হয়েছি।
সদর উপজেলার ভাটোদাড়া এলাকার অটোচালক ফিরোজ জানান, ধর্মঘটের কারণে যাত্রীদের চাপ বেশি। তবে তারা অতিরিক্ত কোনও ভাড়া নিচ্ছেন না।
এ প্রসঙ্গে নাটোর রেল স্টেশনের দায়িত্বরত স্টেশন কর্মকর্তা অশোক চক্রবর্তী জানান,নির্ধারিত সিডিউলে ট্রেন যাতায়াত করছে। তবে অন্য দিনের তুলনায় রাজশাহী ও ঢাকা রুটে যাত্রীদের চাপ বেশি। নির্ধারিত সকল টিকেটই বিক্রি হয়েছে।
এ বিষয়ে নাটোর বাস-মিনিবাস মালিক সমিতির সভাপতি লক্ষন পোদ্দার বলেন, আমাদের দীর্ঘদিনের দাবি আদায়ে আল্টিমেটাম দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ওই ব্যাপারে কোনও ঘোষণা না আসায় পূর্বঘোষিত কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিএনপির রাজশাহী বিভাগীয় গণসমাবেশের সঙ্গে ওই কর্মসূচি পালনের কোনও সম্পর্ক নেই।
এদিকে রাজশাহীতে বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশ ঠেকাতে সরকারের নির্দেশে এ ধর্মঘট পালন করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন
দলটির কেন্দ্রীয় কমিটির উত্তরাঞ্চলীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক ভূমি উপমন্ত্রী অ্যাডভোকেট এম রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু।
তিনি বলেন, ৩ ডিসেম্বর বিএনপির গণসমাবেশ। ইতিমধ্যেই নাটোরসহ বিভিন্ন জেলা থেকে হাজার হাজার বিএনপি নেতা-কর্মীরা রাজশাহী পৌঁছেছেন। সরকার, সরকার দলীয় লোকজন বা পুলিশের কোনও বাধাই ওই সমাবেশকে রুখতে পারবে না। ওই সমাবেশে লাখ লাখ নানুষ অংশ নিয়ে সমাবেশকে সফল করবে।
প্রসঙ্গত, গত শনিবার বিকালে নাটোর শহরের একটি রেস্তোরায় আয়োজিত এক প্রেস কনফারেন্সে পরিবহন ধর্মঘটের ঘোষণা দেওয়া হয়। ঘোষণায় রাজশাহী বিভাগীয় সড়ক পরিবহন মালিক -শ্রমিক পরিষদ জানায় , ৩০ নভেম্বরের মধ্যে ১০ দফা দাবি না মানলে ১ ডিসেম্বর থেকে রাজশাহী বিভাগে বাস-ট্রাক চলাচল বন্ধ রাখবেন তারা।
দাবিসমূহ হলো-সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮ সংশোধন করা, হাইকোর্টের নির্দেশ অমান্য করে মহাসড়ক বা আঞ্চলিক মহাসড়কে থ্রি হুইলার,চলাচল বন্ধ করা,জ্বালানী তেল ও যন্ত্রাংশের অস্বাভাবিক মাল্য হ্রাস করা ও করোনাকালীন গাড়ি চলাচল না করায় ট্যাক্স মওকুফ করা,সরকারী পাওনাদী অস্বাভাবিক হার বৃদ্ধি বন্ধ করা,চালকদের লাইসেন্স জটিলতা নিরসন করা, কাগজপত্র সঠিক থাকা স্বত্বেও পুলিশি হয়রানি বন্ধ করা, উপজেলা পর্যায়ে বিআরটিসি চলাচল বন্ধ করা,মহাসড়কে হাট বাজার বন্ধ, যাত্রী ওঠা-নামার জন্য পার্কিং ব্যবস্থা করা এবং প্রত্যেক জেলায় ট্রাক টার্মিনাল নির্মাণ ও ট্রাক ওভারলোড বন্ধ করা।