কর্ণফুলী টানেলের ৯০ শতাংশ কাজ শেষ
ফাইল ছবি
চট্টগ্রামে ‘ওয়ান সিটি টু টাউন’ গড়ে তুলতে টানেল প্রকল্প কাজ শেষ পর্যায়ে। টানেলের সুবিধার ধরন হবে চীনের সাংহাই নগরীর মতো। কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মিত এই টানেল বদলে দেবে চট্টগ্রামসহ সারা দেশের আর্থ সামাজিক পরিস্থিতি। টানেলে যানবাহন চলাচল শুরুর পর এই অঞ্চলের চিত্র পাল্টে যাবে এমনটিই মনে করছেন লোকজন।
২০১৬ সালের ১৪ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও চীনের রাষ্ট্রপতি শি জিন পিং টানেল প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। ২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রথম টানেল টিউবের বোরিং কাজ উদ্বোধন করেন এবং ২০২০ সালের ১২ ডিসেম্বর সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের দ্বিতীয় টিউবের বোরিং কাজ উদ্বোধন করেন। টানেলটি নির্মাণের ফলে বহু সুবিধা বেড়েছে। যানবাহন চলাচল অবাধ হওয়ার জন্য নদীর দুই তীরে গড়ে উঠবে শিল্প কারখানা।
চট্টগ্রামের আনোয়ারা থেকে শাহ আমানত সেতু হয়ে সড়কপথে শহরে আসতে সময় লাগত অন্তত দুই ঘণ্টা। টানেলের কারণে আনোয়ারা প্রান্ত থেকে প্রবেশ করে পতেঙ্গা প্রান্তে আসতে সময় লাগবে সর্বোচ্চ আড়াই মিনিট।
শনিবার (২৬ নভেম্বর) কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলের ‘দক্ষিণ টিউবের পূর্ত কাজের সমাপ্তি উদযাপন’ অনুষ্ঠিত হয়। আগামী বছরের জানুয়ারিতে চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হবে। ‘দক্ষিণ টিউবের পূর্ত কাজের সমাপ্তি উদযাপন’ অনুষ্ঠানে গণভবন থেকে পতেঙ্গা প্রান্তে ভার্চুয়ালি যুক্ত ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
প্রকল্পের পরিচালক হারুনুর রশিদ জানান, টানেলের ৯০ শতাংশ কাজ শেষ। সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামী বছরের জানুয়ারিতেই টানেলের সুফল নিতে পারবেন এই অঞ্চলের মানুষ। নির্মাণ কাজ হয়েছে বিশ্বমানের। তাতে কোনো সন্দেহ নেই।
প্রকল্প কাজে সংশ্লিষ্টরা জানান, টানেলের পুরো প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে বাংলাদেশ সেতু বিভাগ। চীনের এক্সিম ব্যাংক এই প্রকল্পের জন্য ৫ হাজার ৯১৩ কোটি টাকা ঋণ দেয়। বাকি টাকার যোগান দেয় বাংলাদেশ সরকার। চায়না কমিউনিকেশন অ্যান্ড কনস্ট্রাকশন কোম্পানি টানেলটি নির্মাণ করছে। দুই টিউব সংবলিত মূল টানেলের দৈর্ঘ্য ৩ দশমিক ৩২ কিলোমিটার। দুটি টিউব তিনটি সংযোগ পথের (ক্রস প্যাসেজ) মাধ্যমে যুক্ত থাকবে। বিপৎকালীন সময়ে অন্য টিউবে যাতায়াতের জন্য এই ক্রস প্যাসেজগুলো ব্যবহৃত হবে। কিছু দূর পর পর টানেলের দেয়ালে এই ক্রস প্যাসেজের দূরত্ব নির্দেশনা লেখা আছে। টানেল টিউবের দৈর্ঘ্য ২ দশমিক ৪৫ কিমি. এবং ভেতরের ব্যাস ১০ দশমিক ৮০ মিটার। ৩ দশমিক ৩২ কিমি দীর্ঘ টানেলটি কর্ণফুলী নদীর মোহনার কাছে পশ্চিম প্রান্তে পতেঙ্গা নেভাল অ্যাকাডেমির কাছ থেকে শুরু হয়ে পূর্ব প্রান্তে চট্টগ্রামের সার কারখানা-সিইউএফএল এবং কর্ণফুলী সার কারখানার-কাফকো’র মাঝামাঝি আনোয়ারা প্রান্তে পৌঁছেছে।
মূল টানেলের সঙ্গে পতেঙ্গা প্রান্তে শূন্য দশমিক ৫৫০ কিলোমিটার ও আনোয়ারা প্রান্তে ৪ দশমিক ৮ কিমিসহ মোট ৫ দশমিক ৩৫ কিলোমিটার সংযোগ সড়ক রয়েছে। এ ছাড়া আনোয়ারা প্রান্তে সংযোগ সড়কের সঙ্গে ৭২৭ মিটার উড়াল সড়ক রয়েছে।
আনোয়ারা উপজেলার টানেল প্রান্তের এলাকার বাসিন্দা জামাল উদ্দিন বলেন, টানেলটি আমাদের কাছে অনেক স্বপ্নের। আমরা দ্রুত চট্টগ্রাম নগরীর সঙ্গে যাতায়াত করতে পারব। তার চেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে আনোয়ারা অর্থাৎ আমাদের বসবাসের এলাকায় জমির দাম বেড়েছে কয়েকগুণ। শুধু টানেলের কারণে একটি উপজেলার লোকজনের আর্থ সামাজিক পরিবর্তনের ছাপ এরই মধ্যে দৃশ্যমান হয়েছে। পুরোদমে টানেল চালুর হলে পুরো এলাকার চিত্র পাল্টে যাবে।
এসজি