স্লোগানে মুখর কুমিল্লা, পরিপূর্ণ সমাবেশস্থল
কুমিল্লায় বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে শনিবার (২৫ নভেম্বর)। শহরের টাউন হল মাঠে আয়োজিত এ সমাবেশ ঘিরে দলের নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের মাঝে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। পোস্টার, ব্যানার, ফেস্টুন ও বিলবোর্ডে ছেয়ে গেছে নগরী। সমাবেশের দুদিন আগে থেকেই দূর-দূরান্ত থেকে দলের নেতা-কর্মীরা আসতে শুরু করেন কুমিল্লায়। টাউন হল মাঠ থেকে ক্ষণে ক্ষণে ভেসে আসছে মিছিলের আওয়াজ। স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত হয়ে উঠেছে পুরো কুমিল্লা শহর।
বিএনপির নেতা-কর্মীরা বলছেন, কুমিল্লায় হবে স্মরণকালের সবচেয়ে বড় গণসমাবেশ। এখান থেকেই শুরু হবে সরকার পতনের যুগপৎ আন্দোলন। বিএনপির ৫টি ইউনিট নিয়ে গঠিত সাংগঠনিক কুমিল্লা বিভাগ। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধি, দলীয় নেতা-কর্মীদের হত্যা, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে অন্যান্য বিভাগের মতো কুমিল্লায়ও গণসমাবেশ ডাকে বিএনপি।
সমাবেশকে সামনে রেখে কুমিল্লা মহানগর ছাড়াও কুমিল্লা উত্তর, কুমিল্লা দক্ষিণ, চাঁদপুর এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নেতা-কর্মীরা কুমিল্লায় অবস্থান নিতে শুরু করেছেন। তাদের কেউ কেউ বিছানা-পাটি নিয়ে থাকতে শুরু করেছেন সমাবেশস্থলে। আর অন্যরা গাড়িবহর নিয়ে কিংবা পায়ে হেঁটে মিছিলে মিছিলে নিজেদের উপস্থিতি জানান দিচ্ছেন। স্লোগান তুলছেন দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি এবং সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মুক্তির দাবি জানিয়ে।
ইতোমধ্যে ১০টি শর্তে স্থানীয় প্রশাসনের কাছ থেকে গণসমাবেশের অনুমতি পেয়েছে বিএনপি। সমাবেশ সফল করতে সব প্রস্তুতিও সম্পন্ন করে রেখেছেন দলের নেতারা। সমাবেশ মঞ্চ প্রস্তুতের কাজও প্রায় শেষ পর্যায়ে।
বৃহস্পতিবার (২৪ নভেম্বর) রাত ৯টার পর থেকে কুমিল্লা টাউন হল মাঠের উত্তর-পশ্চিম কর্নারে সমাবেশের মঞ্চ তৈরির কাজ সম্পন্ন করা হয়। শুক্রবার (২৫ নভেম্বর) জুম্মার নামাজের পর সমাবেশস্থল ও মঞ্চ পরিদর্শন করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, বিএনপির কুমিল্লা বিভাগীয় গণসমাবেশের দলীয় প্রধান (টিম লিডার) বরকত উল্লাহ বুলু, কেন্দ্রীয় ত্রাণ ও পুনর্বাসন সম্পাদক আমিন উর রশিদ ইয়াছিন ও কুমিল্লা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাক মিয়াসহ প্রমুখ। তারা পুরো এলাকা ঘুরে দেখেন। ৭০ ফুট দৈর্ঘ্য ও ৩০ ফুট প্রস্থের এ মঞ্চে কুমিল্লা বিভাগের আওতাধীন ৫টি ইউনিটের জ্যেষ্ঠ নেতা ও কেন্দ্রীয় নেতারা থাকবেন বলে জানা গেছে।
এর আগে শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে কুমিল্লা নগরীর মনোহরপুর এলাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন অভিযোগ করেছেন, কুমিল্লায় বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশ ঘিরে নেতা-কর্মীদের উপর হামলা, বাড়িঘর ভাঙচুর ও পথে পথে বাধা দেওয়া হচ্ছে। কুমিল্লা বিভাগের প্রতিটি জেলা উপজেলায় সরকারদলীয় নেতা-কর্মী ও পুলিশ বাহিনী মিলে নারকীয় তাণ্ডব চালাচ্ছে।
তিনি বলেন, বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশ ঘিরে কুমিল্লায় নেতা-কর্মীদের মাঝে উৎসাহ উদ্দীপনা বিরাজ করছে। তারা দুইদিন আগে থেকে সমাবেশস্থলে আসতে শুরু করেছেন। ইতোমধ্যে কুমিল্লায় বিএনপির লক্ষাধিক নেতা-কর্মী ও সমর্থক অবস্থান নিয়েছেন। কিন্তু কুমিল্লায় বিএনপির এই গণসমাবেশে ব্যাপক সংখ্যক মানুষের উপস্থিতির বিষয়টি আঁচ করতে পেরে সরকারদলীয় নেতা-কর্মী ও পুলিশ বাহিনী কুমিল্লা বিভাগের বিভিন্ন জেলা উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে নারকীয় তাণ্ডব শুরু করেছে। তাদের হিংস্রতা থেকে নারী-শিশুরাও রেহাই পাচ্ছে না। তারা বিএনপির নেতা-কর্মীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে সেখানে তাদের না পেয়ে পরিবার পরিজনের উপর হামলা, ভাঙচুর, বাড়ির সামনে হেলমেট পরে সশস্ত্র অবস্থায় মোটরসাইকেল মহড়া ও হুমকি-ধমকি দিচ্ছে। কিন্তু তারা যত যাই করুক কুমিল্লা বিভাগবাসীকে দমিয়ে রাখা যাবে না। কুমিল্লার মুক্তিকামী ঐক্যবদ্ধ জনতা ঐতিহাসিক টাউন হল মাঠ থেকে এ সরকারকে ‘লালকার্ড’ প্রদর্শন করবে।
কুমিল্লায় বিএনপির গণসমাবেশে দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের জন্য দুটো চেয়ার ফাঁকা রাখা হবে। অন্যান্য বিভাগীয় গণসমাবেশের মতো কুমিল্লাতেও এই দুটি চেয়ার খালি রাখা হবে বলে নিশ্চিত করেছে কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির সদস্য সচিব জসিম উদ্দিন।
শুক্রবার বিকালে তিনি জানান, সমাবেশ মঞ্চ নির্মাণের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। অন্যান্য বিভাগীয় গণসমাবেশের মতো কুমিল্লাতেও খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের সম্মানে তাদের জন্য চেয়ার রাখা থাকবে।
তিনি বলেন, একটি সফল ও সুন্দর গণসমাবেশ সম্পন্ন করতে আমাদের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। নেতা-কর্মীদের মাঝে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। সরকার পতনের এ আন্দোলনে বিএনপির নেতা-কর্মী ছাড়াও সাধারণ মানুষ সমাবেশে যোগ দিবে। কুমিল্লায় হবে স্মরণকালের সবচেয়ে বড় গণসমাবেশ। শনিবার কুমিল্লায় জনসমুদ্র তৈরি হবে।
এসজি