হাসপাতালের দুয়ারে নিজেই 'রোগী' অ্যাম্বুলেন্স!

জরুরী সেবায় রোগী আনা-নেয়ার জন্য সরকারি অ্যাম্বুলেন্স গুলো অকেজো হয়ে পড়ে আছে হাসপাতালের দুয়ারে নিজেই রোগী হয়ে। এমনকি বছরের পর পর বছর ধরে নওগাঁর ধামইরহাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স চত্বরে ২টি অ্যাম্বুলেন্স খোলা আকাশের নিচে নষ্ট হচ্ছে অযত্ন-অবহেলায়। উপজেলার প্রায় দেড় লাখ মানুষ বঞ্চিত হচ্ছেন অ্যাম্বুলেন্স সেবা থেকে। অথচ একটু রক্ষণাবেক্ষণ করা গেলে একদিকে যেমন এসব অ্যাম্বুলেন্স অচল হওয়া থেকে রক্ষা পেত, অন্যদিকে রোগীরাও পেত জরুরি সেবা।
ধামইরহাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মোট ৩টি অ্যাম্বুলেন্স রয়েছে। এর মধ্যে ২টি প্রয়োজনীয় মেরামত বা রক্ষণাবেক্ষণের ব্যবস্থা না করে ফেলে রাখা হয়েছে বছরের পর বছর। দিনে দিনে এগুলো নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এরই মধ্যে দুটি অ্যাম্বুলেন্সের বেশির ভাগ যন্ত্রাংশ নষ্ট হয়ে গেছে।
সরজমিন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে দেখা যায়, গ্যারেজ সংলগ্ন খোলা আকাশের নিচে পড়ে থাকা দুটি অ্যাম্বুলেন্সের দরজা-জানালা খসে পড়ছে। অ্যাম্বুলেন্সের ভিতরে যন্ত্রাংশের বেশিরভাগই লাপাত্তা। প্রায় ৬-৭বছর থেকে পরিত্যক্ত অবস্থায় খোলা আকাশের নিচে পড়ে থাকা অ্যাম্বুলেন্স দুটির গায়ে শ্যাওলাও জমতে শুরু করেছে।
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, ৫বছর আগে নতুন একটি অ্যাম্বুলেন্স পাওয়ার পর থেকে ২টি পরিত্যক্ত হয়ে পড়ে আছে। অথচ অনেক সময় রোগীর চাপ সামলাতে একজন চালককে ১২০ কিলোমিটার দূরে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে একাধিক বার রোগী নিয়ে যেতে হিমশিম খেতে হয়। অনেক সময় এ হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতালে নিতে হলে জটিল রোগী অ্যাম্বুলেন্স পান না। বেশি ভাড়া দিয়ে যেতে হয় রাজশাহীসহ অন্য হাসপাতালগুলোতে। কর্তৃপক্ষের তদারকি না থাকায় অ্যাম্বুলেন্সগুলো এভাবে খোলা আকাশের নিচে পড়ে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্স চালক মনোয়ার হোসেন বলেন, ৩টি অ্যাম্বুলেন্সের মধ্যে দুটিই অচল। আমি ছাড়া অ্যাম্বুলেন্সের কোনো ড্রাইভারও নাই। একা রোগী আনা-নেয়ায় খুবই অসুবিধা হয়।
তিনি আরও বলেন, এত বড় একটি উপজেলা হাসপাতালে মাত্র একটি অ্যাম্বুলেন্সে আমাকে একাই রোগি আনা-নেওয়া করতে হয়। যদি আরো একটি অ্যাম্বুলেন্স ও চালক থাকতো তাহলে অনেক সুবিধা হতো। রোগিরা সেবা পেত।
বিষয়টি নিয়ে কথা হলে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা স্বপন কুমার বিশ্বাস বলেন, বেশ কয়েক বছর ধরে ২টি অ্যাম্বুলেন্স অকেজো হয়ে পড়ে আছে। সেগুলো মেরামত করে মনে আর ব্যবহার করা সম্বব নয়। তাই টেন্ডারের মাধ্যমে বিক্রি করে দিতে হবে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। তারা আমাদেরকে জানালে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
তিনি আরো বলেন, এ হাসপাতালে মাত্র একটি অ্যাম্বুলেন্স ও একজন চালক আছে। আরো একটি অ্যাম্বুলেন্স ও চালক প্রয়োজন। এগুলোর চাহিদা জানানো হয়েছে। আশা করছি দ্রুত এসব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আজাহার আলী বলেন, বর্তমানে ২টি অ্যাম্বুলেন্স অকেজো হয়ে গেছে। সেগুলো অনেক পুরোনো। মনে আর মেরামত করে ব্যবহার করা সম্বব নয়। একটি অ্যাম্বুলেন্স সচল আছে। সেটাই ব্যবহার করা হয়। উপজেলার মাসিক মিটিংয়ে অ্যাম্বুলেন্স ও চালক নিয়োগের বিষয়ে আলোচনা করা হবে।
নওগাঁর ডেপুটি সিভিল সার্জন ডাঃ মো. মুনীর আলী আকন্দ বলেন, ধামইরহাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মোট ৩টি অ্যাম্বুলেন্স। এর মধ্যে দুটি অকেজো হয়ে পড়ে আছে। বিষয়টি আমি সিভিল সার্জন স্যারকে অবহিত করবো। আর নতুন করে আরো একটি অ্যাম্বুলেন্স ও চালক নিয়োগ সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। তার পরও আমাদের পক্ষ থেকে যা যা করণীয় তা করা হবে।
এএজেড
